.
সার্ভিসিং-এর জন্যে ল্যান্ড করেছিল আরো একটা বোয়িং ৭৪৭, অ্যাসেম্বলি এলাকায় ওটা যেখানে পার্ক করা রয়েছে সেখান থেকে স্পীডবার্ড জিরো-সেভেন জিরো এক হাজার গজ দূরে, মেইন সার্ভিস হ্যাঙ্গার আর টার্মিনাল ভবনের একটা কোণ আড়াল তৈরি করায় হাইজ্যাকাররা ওটাকে দেখতে পাচ্ছে না। দুটো প্লেনের রঙ আলাদা, দ্বিতীয়টার গায়ে কমলা আর নীল রঙে লেখা রয়েছে সাউথ আফ্রিকান এয়ারওয়েজ, লেজে আঁকা ছুটন্ত হরিণের ছবি। তবে প্লেন দুটো একই মডেলের, এমন কি কেবিন প্ল্যানেও তেমন কোনো পার্থক্য নেই। স্পীডবার্ড জিরো-সেভেন জিরোর ভেতরের প্ল্যান হিথ্রোর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ হেডকোয়ার্টার থেকে আগেই টেলিপ্রিন্টারের সাহায্যে পাঠিয়ে দেয় হয়েছে। দুটো প্লেন প্রায় একই রকমের হওয়ায় ওদের খুব সুবিধে হলো, সুযোগটা সাথে সাথে কাজে লাগাল কলিন নোবলস। এরই মধ্যে শূন্য খোলের ভেতর সাতবার ডেল্টা কন্ডিশনের মহড়া শেষ করেছে সে।
ঠিক আছে, এসো এবার এমনভাবে দৌড়াই যেন খোদ ডেভিল তাড়া করেছে আমাদের। গো থেকে পেনিট্রেশন পর্যন্ত চৌদ্দ সেকেন্ড বড় বেশি সময়, কলিনের স্ট্রাইক টীম টারমাকে অর্ধবৃত্ত তৈরি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল তারা, কেউ কেউ নাটকীয় ভঙ্গিতে আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ ঘোরাল। গ্রাহ্য করল না কলিন।
এসো দেখি, নয় সেকেন্ডে পারা যায় কিনা।
অ্যাসল্ট গ্রুপে ওরা ষোলোজন রয়েছে। পিটার যোগ দিলে সতেরো জন হবে। থোর-কমান্ডে অন্যান্য সদস্যরা টেকনিকাল এক্সপার্ট-ইলেকট্রনিক্স আর কমিউনিকেশন্স চারজন মার্কর্সম্যান স্নাইপার, একজন উইপনস্ কোয়ার্টারমাস্টার, একজন বম ডিজগোজাল আর এক্সপ্লেসিভ সার্জেন্ট, ডাক্তার, কুক, একজন লেফটেন্যান্টের অধীনে তিনজন নন-কমিশনড ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট এবং অন্যান্য ত্রু, সব মিলিয়ে বড়সড় একটা দল, কিন্তু একজনকেও বাদ দেয়ার উপায় নেই।
একপ্রস্থ কালো নাইলনের তৈরি ইউনিফর্ম পরে আছে অ্যাসল্ট গ্রুপের লোকজন, রাতেরবেলা সহজে কারও চোখে পড়বে না। প্রত্যেকের গলায় ঝুলছে গ্যাস মাস্ক। কালো বুটে নরম রাবার সোল। প্রত্যেকের সাথে রয়েছে যার যার অস্ত্র আর ইকুইপমেন্ট, হয়তো ব্যাক প্যাকে নয়তো কালো ওয়েবিং বেল্টে। কাউকে ভারী বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরতে দেয়া হয়নি, নড়তে চড়তে অসুবিধে হয়। নিরেট কোনো হেলমেটও ব্যবহার করা হচ্ছে না, অস্ত্রের সাথে ঘষা লেগে আওয়াজ হতে পারে ভেবে।
গ্রুপের সবার বয়সই পঁচিশের মধ্যে, বিভিন্ন দেশের সেনা বাহিনি থেকে বাছাই করে আনা হয়েছে। প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ট্রেনিং দিয়ে ওদেরকে ক্ষুরের মতো ধারালো করে তুলেছে পিটার।
টারমাকের দুজায়গায় চক দিয়ে দুটো আঁক কেটেছে কলিন, একটা দাগ দিয়ে এয়ার টার্মিনালের প্রবেশমুখ বোঝানো হচ্ছে, আরেকটা দিয়ে বোঝানো হচ্ছে জিরো-সেভেন-জিরোর সবচেয়ে কাছের সার্ভিস হ্যাঙ্গারটাকে। অ্যাসল্ট গ্রুপ দাগের ওপর নিঃশব্দে দাঁড়াল, তীক্ষ্ণ চোখে ওদেরকে দেখছে কলিন। কোথাও কোনো ঢিলেঢালা ভাব নেই।
ঠিক আছে, দশ সেকেন্ড পর ফ্লেয়ার! ডেল্টা কন্ডিশনে আক্রমণ শুরু করা হবে টার্গেট পৌঁছনের নাকের সামনে ফসফরাস ফ্লেয়ার জ্বালিয়ে। ফ্লেয়ারগুলো খুদে প্যারাস্যুটের শেষ মাথায় থাকবে। ডাইভারশন তৈরির জন্যে ভালো কাজ দেয় কৌশলটা। আলোর উৎস জানার জন্যে ফ্লাইট ডেকে জড়ো হবে আতঙ্কবাদীরা। ফ্লেয়ারগুলো এত উজ্জ্বল যে তাকাবার সাথে সাথে ধাধিয়ে যাবে চোখ, পরে বেশ কয়েক মিনিট রাতের অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাবে না আতঙ্কবাদীরা।
ফ্লেয়ারস! গর্জে উঠল কলিন, সাথে সাথে তৎপর হয়ে উঠল অ্যাসল্ট গ্রুপ। দুজন লোককে স্টিক বলে ডাকা হয়, তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে ওদের। পরিত্যক্ত প্লেনের বিশাল লেজের দিকে সরাসরি ছুটল ওরা। লীডারদের প্রত্যেকের কাঁধে স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে, ফ্লেক্সিবল আমার কাপলিংয়ের সাথে সিলিন্ডারের সাথে আটকানো স্টেনলেস স্টিল প্রোব-সেজন্যেই এই নামকরণ ওদের। লীডারের পিঠের ট্যাংকে রয়েছে দুশ, পঞ্চাশ অ্যাটমসফেয়ার কমপ্রেসড এয়ার, আর বিশ ফিট পোবের ডগায় রয়েছে হীরে বসানো এয়ার-ড্রিলের পয়েন্ট ছোঁয়াবার জন্যে দুহাত উঁচু করে দিল। ম্যানুফ্যাকচারারের ড্রইং দেখে আগেই জেনে নিয়েছে স্পটটা কোথায়-প্লেনের এই অংশের প্রেশার হাল সবচেয়ে পাতলা, এখানে ফুটো করেই সরাসরি প্যাসেঞ্জার কেবিনে গ্যাস ঢোকানো হবে।
কাটিং ড্রিলের যান্ত্রিক গুঞ্জন চাপা দেয়া হবে দক্ষিণ টার্মিনাল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনের জেট ইঞ্জিন চালু করে। বোয়িঙের খোল ফুটো করার জন্যে সময় বরাদ্দ করা হয়েছে তিন সেকেন্ড। দ্বিতীয় লীডার ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে তার প্রোবের ডগা সদ্য তৈরি ফুটোয় ঢোকার জন্যে।
পাওয়ার অফ? নির্দেশ দিল কলিন। এই নির্দেশ পাবার সাথে সাথে মেইন্স থেকে সংযুক্ত প্লেনের ইলেকট্রিক পাওয়ার লাইন কেটে দেয়া হবে, বন্ধ হয়ে যাবে এয়ার-কন্ডিশনিং।
দ্বিতীয় লীডার তার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে-পিঠে বাঁধা বোতলের গ্যাস প্রোবের মাধ্যমে প্লেনের ভেতরকার বাতাসে ছড়িয়ে দেয়ার মহড়া দিচ্ছে সে। ভিক্টর ফাইভ নামে পরিচিত এই গ্যাসের প্রায় কোনো গন্ধ নেই, নাকে ঢোকার পর দশ সেকেন্ডের মধ্যে একজন লোককে অসাড় করে দিতে পারে-পেশি অবশ হয়ে যাবে, নড়াচড়ায় নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, মুখে কথা আটকে যাবে, দৃষ্টি হয়ে উঠবে ঝাপসা।