.
আজও আকাশে কোনো মেঘ নেই, খালি গায়ে চামড়া পোড়ানো রোদে টারমাকের ওপর দিয়ে হাঁটছে পিটার। আগের মতোই অর্ধেক দূরত্ব পেরিয়েছে, বোয়িংয়ের ফরওয়ার্ড হ্যাচ খুলে গেল।
এবার জিম্মিদের কাউকে দেখা গেল না, প্রায় অন্ধকার খালি একটা চৌকো আকৃতির মতো লাগল দোরগোড়াটাকে। দ্রুত হাঁটার একটা ঝোঁক অনুভব করলেও দৃঢ় ভঙ্গিতে শান্তভাবে এগোল পিটার, মাথাটা উঁচু হয়ে আছে, চোয়াল শক্ত। প্লেন থেকে যখন পঞ্চাশ গজ দূরে ও, চৌকো জায়গাটায় এসে দাঁড়াল মেয়েটা। দাঁড়াবার ভঙ্গির মধ্যে রাজকীয় গরিমা। এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে, অপর পা সামান্য একটু বেঁকে আছে। তার নিতম্বের কাছে ঝুলে আছে বড়সড় শট পিস্তল, কাটিজ বেল্টটা সরু কোমরে জড়ানো। মুখে আরো হাসি নিয়ে পিটারের এগিয়ে আসা দেখছে।
হঠাৎ ইনগ্রিডের বুকে উজ্জ্বল একটা আলোক বিন্দু দেখা গেল। চোখে ঘৃণা নিয়ে সেটার দিকে তাকাল সে।
আমাকে উত্তেজিত করা হচ্ছে। জানে, আলোক বিন্দুটার উৎস এয়ারপোর্ট বিল্ডিংয়ে দাঁড়ানো একজন মার্কসম্যানের লেজার সাইট। ট্রিগারে আর কয়েক আউন্স চাপ বাড়লেই পয়েন্ট টু-টু-টু বুলেট ঠিক ওই আলোক বিন্দুর জায়গায় লাগবে, চোখের পলকে রক্তাক্ত কাদা বানিয়ে দেবে হৃৎপিণ্ডটাকে।
নির্দেশ ছাড়া লেজার সাইট চালু করায় স্নাইপারের ওপর রেগে গেল পিটার, তবে রাগের চেয়েও বেশি অবাক হয়ে গেল মেয়েটার সাহস লক্ষ্য করে। বুকের ওপর সুনিশ্চিত মৃত্যুর ওই চিহ্ন দেখেও এক বিন্দু ঘাবড়ায়নি। ডান হাত দিয়ে দ্রুত বাতিল করার একটা ভঙ্গি করল পিটার, প্রায় সাথে সাথে গানার তার লেজার সাইট অফ করে দেয়ায় আলোর বিন্দুটা ইনগ্রিডের বুক থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ধন্যবাদ, বলল ইনগ্রিড, হাসল সে, পিটারের শরীরের ওপর সপ্রশংস বুলাল। তোমার আকৃতিটা পয়সার মাল, বেইবী।
পিটার নিরুত্তর।
সমতল পাথুরে পেট, বলে চলেছে ইনগ্রিড, লম্বা, পেশিবহুল পা। ডেস্কে বসে কলম পিষে খাও না, বোঝা যায়। ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করার ভান করল সে। আমার ধারণা, তুমি পুলিশ বা আর্মি অফিসার, বেইবী। আমার ধারণা তুমি একটা শুয়োর। কণ্ঠস্বর বদলে গিয়ে কেমন বেসুরো হয়ে উঠল তার।
আরো কাছে এসে পিটারের সন্দেহ হলো, মেয়েটা সুস্থ নয়। চোখ জোড়া অস্বাভাবিক চকচক করছে। হাত নাড়ছে এলোমেলোভাবে। নিশ্চয় উত্তেজক কোনো ড্রাগস নিয়েছে।
হ্যাচের নিচে পৌঁছে থামল পিটার, উত্তর দিল না। ওষুধের প্রভাবে স্থির থাকতে পারছে না, ইনগ্রিড, নিতম্বের কাছে অস্ত্রটা নাড়াচাড়া করছে, আরেক হাতে আঙুলগুলো কিলবিল করছে গলা থেকে ঝুলতে থাকা ক্যামেরার গায়ে। পিটারের মনে পড়ল, সিরিল ওয়াটকিংস ওকে কিছু একটা বলতে চাইছিল ক্যামেরার সম্পর্কে-হঠাৎ ব্যাপারটা বুঝে ফেলল ও। ফিউজের ট্রিগার, তা না হয়েই যায় না! সেজন্যে সারাক্ষণ নিজের সাথে রাখছে ওটা ইনগ্রিড। পিটারের চোখের দৃষ্টি কোথায় লক্ষ্য করে ক্যামেরা থেকে হাত সরিয়ে নিল ইনগ্রিড, পিটারের আর কোনো সন্দেহ থাকল না।
বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়েছে? জানতে চাইল ইনগ্রিড। প্যাক করা হয়েছে সোনা? বিবৃতি ট্রান্সমিট করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে?
ব্রিটেন আর আমেরিকার প্রতিনিধিদের পরামর্শ মতো কাজ করতে রাজি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার…।
গুড, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ইনগ্রিড।
মানবিক কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার তোমার দেয়া তালিকার সব বন্দীদের মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে…
গুড।
বন্দীদের নির্বাচিত যে কোনো দেশে চলে যেতে দেয়া হবে,..
কিন্তু সোনা? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ইনগ্রিড।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার অসাংবিধানিক দাবির কাছে নতি স্বীকার করবে না অর্থাৎ সোনা দিতে রাজি নয়…
আর টেলিভিশন ট্রান্সমিশন?
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বিবৃতিটাকে সত্যের অপলাপ বলে বিবেচনা করছে…
তার মানে ওরা শুধু আমাদের একটা দাবি মেনে নিয়েছে! চেহারায় অবিশ্বাস নিয়ে বলল ইনগ্রিড। পিটার লক্ষ্য করল, তার কাধ দুটো আড়ষ্ট হয়ে গেল।
বন্দী মুক্তির ব্যাপারে একটা শর্ত আছে, নরম গলায় বলল পিটার।
কি সেটা? ইনগ্রিডের গোলাপি মুখে রক্ত উঠে এল।
বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ওরা সব কজন জিম্মির মুক্তি চায়-শুধু বাচ্চার আর মেয়েদের নয়। এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হলে ওরা তোমাদের নিরাপদে এই দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে দেবে, মুক্ত বন্দীদের সাথে।
হো হো করে পাগলের মতো হেসে উঠল ইনগ্রিড, হাসির সাথে ইন্মাদিনীর মতো মাথা ঝাঁকাতে লাগল। তারপর হঠাৎ করেই থামল সে। ঠাণ্ডা, প্রায় শান্ত গলায় বলল, ওরা ভাবছে, ওরাও শর্ত দিতে পারে, তাই না? জিম্মিদের ছেড়ে দিই আমরা, তাহলে ব্রিটেন আর আমেরিকার জন্যে আমাদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়া খুব সহজ হয়ে যায়, তাই না?
পিটার কথা বলল না।
জবাব দাও, সাম্রাজ্যবাদের পা চাটা কুকুর! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল ইনগ্রিড। ওরা। ভেবেছে আমরা সিরিয়াস নই, তাই না?
আমি শুধু একজন মেসেঞ্জার, বলল পিটার।
তুমি একটা শুয়োর! তুমি একটা ট্রেনিং পাওয়া খুনি। এক ঝটকায় হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে পিটারের দিকে তাক করল ইনগ্রিড।
ওদের আমি কি বলব? জিজ্ঞেস করল পিটার, যেন লক্ষ্যই করেনি ওর দিকে পিস্তল তাক করা হয়েছে।