রজার, স্পীডবার্ড, ইওর ফ্লাইট প্ল্যান ইজ অ্যামেন্ডেড।
.
নাক উঁচু করে এখনো আরো ওপর দিকে উঠে যাচ্ছে প্রকাণ্ড জিরো-সেভেন-জিরো। নো-স্মোকিং আর সীট-বেল্ট লাইট ফার্স্ট ক্লাস কেবিনের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। স্বর্ণকেশী মেয়েটা আর তার পুরুষ সঙ্গী পাশাপাশি বসে আছে প্রশস্ত ওয়ান-এ আর ওয়ান-বি সীটে। সীট দুটো ফরওয়ার্ড বাল্কহেডের ঠিক পিছনে, কমান্ড এরিয়া আর ফার্স্ট ক্লাস গ্যালির মাঝখানে একটা দেয়াল এই বাল্কহেড। তরুণ আর তরুণীর পাশাপাশি এই সীট জোড়া কয়েক মাস আগে রিজার্ভ করা হয়েছে।
যুবক সঙ্গী সামনের দিকে ঝুঁকল, প্যাসেজের ওপাশ থেকে কোনো আরোহী যাতে সঙ্গিনীকে দেখতে না পায়। আড়াল পেয়ে দ্রুত নেট ব্যাগের ভেতর হাত গলিয়ে দিয়ে একটা কোকো-ডি-মার বের করে নিজের কোলের ওপর তুলল মেয়েটা।
ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ফলটাকে দুভাগ করা হয়েছিল, পানি আর সাদা শাঁস বের করে নিয়ে আঠার সাহায্যে আবার জোড়া লাগানো হয়েছে, তবে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। জোড়া লাগা অংশে ছোট একটা সরু ধাতব ইন্সট্রুমেন্ট ঢুকিয়ে জোরে চাড় দিল মেয়েটা, দুটো ভাগ আলাদা হয়ে গেল সাথে সাথে। জোড়া খোলর ভেতর প্লাস্টিক ফোমের তোষক, তোষকের ওপর গ্রে রঙের মসৃণ গা একজোড়া গোল বস্তু-প্রতিটির আকার বেসবলের মতো।
পূর্ব জার্মানিতে তৈরি গ্রেনেড। ওয়ারস প্যাক্ট কমান্ড নাম দিয়েছে, এম-কে আই-ভি (সি)। প্রতিটি গ্রেনেডের বাইরের আবরণ প্রতিরোধক প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ল্যান্ডমাইনের আবরণে যে ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়-ইলেকট্রনিক মেটাল ডিটেকটরকে ফাঁকি দেয়ার জন্যে। প্রতিটি গ্রেনেডের চারদিকে হলুদ ডোরা কাটা রয়েছে, তার মানে হলো এগুলো ফ্র্যাগমেন্টেশন টাইপ গ্রেনেড নয়, প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ক্ষমতা ভরে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
বাঁ হাতে একটা গ্রেনেড নিল মেয়েটা, সীট-বেল্ট খুলল, তারপর নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল সীট ছেড়ে। কোনো দিকে না তাকিয়ে পর্দা সরিয়ে গ্যালি এলাকার দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে, অন্যান্য আরোহীরা তাকে ঢুকতে দেখলেও কেউ কিছু মনে করল না।
গ্যালির সার্ভিস সেকশনে তিনজন রয়েছে ওরা। একজন পার্সার, দুজন স্টুয়ার্ডেস। এখনো ফোল্ডিং চেয়ারে বসে আছে সবাই, চেয়ারের সাথে স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকানো। স্বর্ণকেশী মেয়েটা ঢুকতেই ঝট করে ঘাড় ফেরাল ওরা।
দুঃখিত, ম্যাডাম—প্লিজ, নিজের সীটে ফিরে যান! ক্যাপটেন এখনো সীট বেল্ট লাইট অফ করতে বলেননি!
বাঁ হাত তুলে পার্সারকে ভয়ঙ্কর ডিমটা দেখাল স্বর্ণকেশী। এটা একটা স্পেশাল গ্রেনেড, ব্যাটাল-ট্যাংকের ভেতর যারা থাকে তাদের মারার জন্যে তৈরি করা হয়েছে, শান্তভাবে বলল সে। প্লেনের ফিউজিলাজ এমনভাবে উড়িয়ে দেবে, মনে হবে ওটা কাগজের তৈরি–পঞ্চাশ গজের মধ্যে একজনও বাঁচবে না।
ওদের মুখ লক্ষ্য করছে মেয়েটা, ভয় আর আতঙ্ক অশুভ ফুলের মতো বিকশিত হচ্ছে।
আমার হাত থেকে পড়ার তিন সেকেন্ড পর ফাটবে এটা। একটু থেমে দম নিল মেয়েটা, চোখ দুটো উত্তেজনায় চকচক করছে। নিঃশ্বাস ফেলছে ছোট ছোট আর ঘন ঘন। তুমি পার্সারকে বেছে নিল সে, -ফ্লাইট ডেকে নিয়ে চলো আমাকে। স্টুয়ার্ডেসদের দিকে তাকাল। তোমরা এখানেই থাকবে। কিছু করবে না, কিছু বলবে না।
ককপিটটা ছোট : থরে থরে সাজানো ইন্সট্রুমেন্ট, ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট আর ফ্লাইট ক্রুদের জায়গা হবার পর খালি মেঝে নেই বললেই চলে। স্বর্ণকেশী মেয়েটা ভেতরে ঢুকল, সামান্য অবাক হয়ে তিনজন লোকই ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল তার দিকে। বাঁ হাত তুলে গ্রে রঙের ডিমটা ওদের দেখাল সে।
সাথে সাথে বুঝল ওরা।
প্লেনের নিয়ন্ত্রণ আমি নিলাম। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের দিকে তাকাল মেয়েটা। কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্টের সুইচ অফ করে দাও।
ঝট করে ক্যাপটেনের দিকে তাকাল ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার। ছোট্ট করে মাথা ঝকাল ক্যাপটেন। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এক এক করে তার রেডিওগুলো বন্ধ করে দিতে শুরু করল প্রথমে ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি সেটগুলো তারপর হাই ফ্রিকোয়েন্সি, আলট্টা হাই ফ্রিকোয়েন্সি।
এবং স্যাটেলাইট রিলে, নির্দেশ দিল মেয়েটা। মুখ তুলে তার দিকে তাকাল ফ্লাইট এঞ্জিনিয়ার, জ্ঞানের বহর দেখে বিস্মিত হয়েছে।
সাবধান, গোপন সুইচ-এ হাত দেবে না! হিসিহিস করে উঠল মেয়েটা।
চোখ পিটপিট করল ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার। কেউ জানে না, কোম্পানির কিছু লোক ছাড়া কারও জানার কথা নয় যে এই প্লেনে স্পেশাল রিলে সিস্টেম আছে! খুদে বোতামটা রয়েছে তার ডান হাঁটুর পাশেই, একবার শুধু টিপে দিলেই হিথরো এয়ারপোর্ট কন্ট্রোল জেনে যাবে হাইজ্যাকারদের পাল্লায় পড়েছে স্পীডবার্ড জিরো সেভেন-জিরো-ফ্লাইট ডেকের প্রতিটি শব্দ পরিষ্কার শুনতেও পাবে তারা। ধীরে ধীরে ডান হাঁটুর কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে আনল সে।
স্পেশাল রিলের সার্কিট থেকে ফিউজটা সরাও। ফ্লাইট, ইঞ্জিনিয়ারের মাথার ওপর অনেকগুলো বাক্স, সঠিক বাক্সটার দিকেই আঙুল তাক করল মেয়েটা। আবার একবার ক্যাপটেনের দিকে তাকাল ইঞ্জিনিয়ার, চাবুকের মতো শব্দ বেরুল মেয়েটার গলা থেকে। কারও দিকে তাকাতে হবে না, আমি যা বলছি কর!