তার মানে সাইকোলজিকাল কেপ্যাবিলিটিও আছে?
প্রচুর। ওরা বিশ্বাস করে ডেস্ট্রাকশনই একমাত্র ক্রিয়েটিভ অ্যাক্ট। বিশ্বাস করে ভায়োলেন্সই মানুষকে নবজন্ম দেয়। সাত্রে কি বলেছেন আপনি জানেন–বিপ্লবী যখন কাউকে খুন করে তখন একজন অত্যাচারী মারা যায় এবং একজন মুক্ত মানুষের আবির্ভাব ঘটে।
মেয়েটা কি সবটুকু পথ যাবে?
যাবে। ইতস্তত না করে বলল পিটার। তাকে বাধ্য করা হলে অবশ্যই যাবে।
অ্যাশট্রেতে পাইপের ঠাণ্ডা ছাই ঝাড়লেন ডক্টর পার্কার। হ্যাঁ, ওর সম্পর্কে এখানে যা জানা যাচ্ছে তার সাথে তোমার কথা মিলে যায়।
ওর সম্পর্কে জানতে পেরেছেন? আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করল পিটার।
ওর ভয়েস প্রিন্ট পাওয়া গেছে, আর ক্রস-ম্যাচের সাহায্যে ওর ফেশিয়াল স্ট্রাকচার প্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছে কম্পিউটার।
কে ও?
জন্মের পর ওর নাম রাখা হয় হিল্ডা বেকার, জার্মানি থেকে আসা থার্ড জেনারেশন আমেরিকান পরিবারের মেয়ে। বাবা সফল একজন ডেন্টিস্ট ছিল, মা মারা যায় ১৯৫৯-এ। মেয়েটার বয়স একত্রিশ। আশ্চর্য হয়ে গেল পিটার, এত বেশি! আই.কিউ. একশ আটত্রিশ, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে মডার্ন পলিটিক্যাল হিস্টরী নিয়ে পড়াশোনা করেছে ১৯৬৫-৬৮ সালে। এসডিএস-এর মেম্বার। এসডিএস মানে- স্টুডেন্টস ফর ডেমোক্র্যাটিক সোসাইটি…
হ্যাঁ, অধৈর্য হয়ে উঠল পিটার।
পারমাণবিক যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভে নিয়মিত অংশ নিয়ে, আর মারিজুয়ানা পাচার করার অভিযোগে গ্রেফতার হয় ১৯৬৭ সালে। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেয়া হয়। তৃতীয়বার গ্রেফতার হয় ১৯৬৮-তে, বাটলার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বোমাবাজি করার অভিযোগে কিন্তু আবারও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। সত্তর সালে আমেরিকা ছেড়ে চলে যায়, আরো পড়াশোনা করার জন্যে ভর্তি হয় জার্মানির ডুসেলডর্ফ ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৭২ সালে পলিটিক্যাল ইকোনমিক্সে মাস্টার ডিগ্রী নেয়। এই সময়ে বাদের-মেইনহফের প্রথম সারির নেতাদের সংস্পর্শে আসে। পশ্চিম জার্মানির নামকরা ব্যবসায়ী ম্যানডেল বটারকে যারা খুন করে তাদের মধ্যে সেও ছিল বলে সন্দেহ করা হয় ১৯৭৬ সালে। তারপর অনেক দিন তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, সিরিয়া, তারপর লিবিয়ায় কমান্ডো ট্রেনিং নেয় সে…
হ্যাঁ, ডক্টর পার্কার থামার আগেই আবার বলল পিটার, সবটুকু পথ যাবে সে।
আর কি মনে হয়েছে তোমার?
খুব উঁচু মহল থেকে প্ল্যানটা করা হয়েছে, কোনো সরকার জড়িত থাকলেও আশ্চর্য হবে না…
তোমার এরকম মনে হবার কারণ? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ডক্টর পার্কার।
জাতিসংঘে কোন্ রাষ্ট্রকে দিয়ে প্রস্তাবটা তুলতে হবে তাও ওরা বলে দিচ্ছে…
ঠিক আছে, বলে যাও।
এমন একটা দেশ বেছে নিয়েছে ওরা যেখানে সত্যি সত্যি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বলল পিটার। ব্রিটেন আর আমেরিকার সচেতন মানুষ ওদের দাবি শুনে বলবে, অযৌক্তিক নয়। আতঙ্কবাদীরা জানে, তাদের দাবি আদায়ের শতকরা আশি ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। জিম্মিরা বেশিরভাগ আমেরিকান আর ব্রিটিশ, এই দুদেশের লোক তাদের চারশ ভাই-বেরাদারকে হারাতে চাইবে না, ফলে টেরোরিস্টদের দাবি মেনে নেয়ার জন্যে চাপ সৃষ্টি করবে সরকারের ওপর…।
তোমার কি মনে হয় আতঙ্কবাদীরা কোনো আপোষ রফায় আসবে?
আসতে পারে, এক সেকেন্ড চিন্তা করে বলল পিটার। কিন্তু আপনি জানেন, এ-ধরনের লোকদের সাথে আপোষ করার বিরোধী আমি।
এমনকি এই গুরুতর পরিস্থিতিতেও, পিটার?
বিশেষ করে এই গুরুতর পরিস্থিতিতেই, ডক্টর পার্কার। টেরোরিস্টদের দাবি সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে আমরা কতটুকু সহানুভূতিশীল সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। ওরা হয়তো ন্যায্য দাবিই করছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছি। ওরা যদি জেতে, জিতটা হবে বন্দুকের! এবং ওদের জিততে দিলে মানবসভ্যতার ক্ষতি করা হবে।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে পাইপে তামাক ভরলেন ডক্টর পার্কার, অগ্নিসংযোগ করলেন, তারপর জানতে চাইলেন, পাল্টা আঘাত হানলে সাফল্যের সম্ভাবনা কতটুকু?
পিটার জানত, প্রশ্নটা আসবে, তবু কিছুক্ষণ ইতস্তত করল ও। তারপর বলল, আধঘন্টা আগে হলে আমি বলতাম, শতকরা নব্বই ভাগ সম্ভাবনা, হতাহত হবে শুধু আতঙ্কবাদীরা।
কিন্তু এখন?
এখন আমি জানি, ওরা আবেগতাড়িত আমেচার নয়। আমাদের মতোই ট্রেনিং পাওয়া লোক ওরা, ইকুইপমেন্টও আছে। কয়েক মাস প্রস্তুতি নেয়ার পর হাত দিয়েছে কাজে…
কিন্তু এখন? আবার উত্তর চাইলেন ডক্টর পার্কার।
ডেল্টা কন্ডিশনে শতকরা ষাট ভাগ সম্ভাবনা আছে সফল হবার–দুপক্ষের মিলে অন্তত দশজন হতাহত হবে।
বিকল্প উপায়?
নেই, ডক্টর পার্কার। আমরা ব্যর্থ হলে কেউ বাঁচবে না– প্লেনটা ধ্বংস হবে, আরোহীরা সবাই মারা পড়বে, থোর কমান্ডের অপারেটররা খুন হয়ে যাবে।
ঠিক আছে, পিটার, বলে চেয়ারে হেলান দিলেন ডক্টর পার্কার। লাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষা করছেন, ওদের সাথে কথা বলব এখন। অ্যামব্যাসাডরদের ব্রিফিং করার পর আবার ফিরে আসব তোমার কাছে এক ঘণ্টার মধ্যে।
পিটারও হেলান দিল চেয়ারে, উপলব্ধি করল কাজে নেমে পড়ার জন্যে মনটা ছটফট করছে ওর। কলিং বেল বাজাল ও, কমান্ড কেবিনের সাউন্ড-প্রুফ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল কলিন।