মুক্ত নেতাদের আর সোনা নিয়ে কাল দুপুরের আগে রওনা হবে প্লেন, তা না হলে আমরা জিম্মিদের খুন করতে শুরু করব।
গলা শুকিয়ে গেল পিটারের। যে মেয়ে এত সহজে খুন করব উচ্চারণ করতে পারে তার পক্ষে সবই সম্ভব।
নেতাদের নির্বাচিত গন্তব্যে প্লেনটা পৌঁছুলে, আমাদের কাছে আগে থেকে ঠিক করা একটা কোড মেসেজ পাঠানো হবে। তারপর আমরা বোয়িংয়ের শিশু আর মেয়েদের মুক্ত করে দেব।
আর পুরুষদের?
সোমবার, ছয় তারিখে, আজ থেকে তিন দিন পর, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটা প্রস্তাব তুলতে হবে। প্রস্তাবটা তোলাতে হবে সিরিয়া বা ইরানকে দিয়ে। প্রস্তাবে দাবি করা হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারকে সব রকম আর্থিক সাহায্য দেয়া বন্ধ করা হোক। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা বা কোনো রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান অবৈধ সরকারকে কোনো রকম আর্থিক সহায়তা দিতে পারবে না। ইতোমধ্যে যে-সব আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তাও বাতিল করতে হবে। সমস্ত বিদেশী পুঁজি প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় তেল রফতানি এবং সবরকম ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। ট্রান্সপোর্ট এবং কমিউনিকেশন লিঙ্ক কেটে দিতে হবে। জাতিসংঘের শান্তি বাহিনি মোতায়েন করে সবগুলো এয়ারপোর্ট আর বন্দরের তৎপরতা থামিয়ে দিতে হবে। এবং জাতিংসংঘের ইন্সপেক্টরদের তত্ত্বাবধানে স্থগিত করা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
কি ঘটতে পারে কল্পনা করার চেষ্টা করল পিটার। শ্রীলঙ্কা এবং তাঞ্জানিয়াকে দিয়ে সাধারণ পরিষদে তোলা যেতে পারে প্রস্তাবটা।
যেন পিটারের মনের কথা বুঝতে পেরেই আবার মুখ খুলল ইনগ্রিড, নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য–আমেরিকা, ব্রিটেন, বা ফ্রান্স-যদি প্রস্তাবটার বিরুদ্ধে ভেটো দেয়, বোয়িং জিরো-সেভেন-জিরো হাই এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হবে।
বোকা আর বোবা হয়ে গেল পিটার। হাঁ করে তাকিয়ে থাকল ফুলের মতো সুন্দর কচি মেয়েটার দিকে। এত তাজা আর পবিত্র লাগছে দেখে, বাচ্চা একটা মেয়ে বলেই মনে হলো তাকে ওর। আবার যখন কথা বলার শক্তি ফিরে পেল, গলার কর্কশ আওয়াজ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেল ও, তোমাদের সাথে হাই এক্সপ্লোসিভ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না!
ধরো! চিৎকার করে বলল ইনগ্রিড, জিনিসটার ওজন অনুভব করে অবাক হয়ে গেল পিটার। ধরার পরপরই চিনতে পারল ও। ইলেকট্রনিক্যালি ফিউজড। হাসছে মেয়েটা। এত আছে যে তোমাকে একটা নমুনা হিসেবে দিতে পারলাম!
নিজের বুকে হাত রেখে কে কি যেন বলার চেষ্টা করছে সিরিল ওয়াটকিংস, কিন্তু পিটারের মনোযোগ রয়েছে হাতের গ্রেনেডটার দিকে। ও জানে এ ধরনের একটা গ্রেনেডই বোয়িং আর তার চারশ আরোহীকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।
পাইলট ওকে কি বলতে চাইছিল? আবার বুকে হাত দিয়েছে সে, কি বলতে চায়? মেয়েটার গলার দিকে তাকাল পিটার। গলা জড়িয়ে থাকা স্ট্র্যাপে ছোট একটা ক্যামেরা ঝুলছে। গ্রেনেড আর ক্যামেরার সাথে কোনো সম্পর্ক আছে? পাইলট কি সে কথাই বলার চেষ্টা করছে ওকে?
আবার কথা বলছে মেয়েটা, তোমার মনিবদের কাছে নিয়ে যাও ওটা, ঘেমে গোসল হোক তারা। সারা দুনিয়ার সর্বহারা মানুষের অভিশাপ রয়েছে তাদের ওপর। বিপ্লব আজ এবং এখানেই। হ্যাচের দরজার সৎ করে বন্ধ হয়ে গেল, ক্লিক করে তালা লাগার আওয়াজ পেল পিটার।
দীর্ঘ পথ ধরে আবার ফিরে আসছে ও, এক হাতে গ্রেনেড আরেক হাতে এনভেলাপ। ভয় আর দুশ্চিন্তায় শুকিয়ে গেছে মুখ।
.
হকারের হ্যাচওয়ে থেকে সরে গিয়ে পিটারকে পথ করে দিল কলিন, চেহারা থেকে উধাও হয়েছে হাসি। ওভারঅলের বোতাম লাগাচ্ছে পিটার। কলিন বলল, ডক্টর পার্কার স্ক্রীনে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছেন, স্যার। তোমাদের প্রত্যেকটা কথা কপি করেছি আমরা, টেলিপ্রিন্টারে ওনাকেও কপি পাঠানো শুরু হয়েছে।
পরিস্থিতি খারাপ, কলিন।
আরো খারাপ খবর তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে, স্যার, বলল কলিন। ডক্টর পার্কারের সাথে আগে কথা বলে নাও।
কলিনকে এক রকম ধাক্কা দিয়ে কমান্ড কেবিনে ঢুকল পিটার, কমান্ড চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ল। স্ক্রীনে দেখা গেল ডেস্কের ওপর ঝুঁকে বসে আছেন ডক্টর পার্কার, টেলিপ্রিন্টার শীটের ওপর চোখ বুলাচ্ছেন, ঠাণ্ডা খালি পাইপটা দুসারি দাঁতের মাঝখানে।
স্ক্রীনের বাইরে দাঁড়ানো কমিউনিকেশন ডিরেক্টরের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, জেনারেল স্ট্রাইড পিটার, স্যার।
মুখ তুলে তাকালেন ডক্টর পার্কার। পিটার। এই মুহূর্তে আমরা একা–তুমি আর আমি! সার্কিট বন্ধ করে দিয়েছি আমি, মাত্র একটা টেপ রেকর্ড চালু আছে। আমি তোমার প্রথম প্রতিক্রিয়া জানতে চাই, তারপর আমি রিপোর্ট করব স্যার উইলিয়াম আর কনস্টেবলের কাছে। স্যার উইলিয়াম আর কেলি কনস্টেবল দক্ষিণ আফ্রিকায় যথাক্রমে ব্রিটিশ আর আমেরিকান অ্যামব্যাসাডর।
একটু অধৈর্যের সাথে আবার বললেন ডক্টর পার্কার, আমি তোমার প্রথম প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।
উই আর ইন সিরিয়াস ট্রাবল, ডক্টর পার্কার, বলল পিটার, মস্ত মাথাটা সায় দেয়ার ভঙ্গিতে ঝাঁকালেন ডক্টর পার্কার।
টেরোরিস্টদের সামর্থ, কতটুকু?
আমার এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্টরা গ্রেনেডটা পরীক্ষা করছে। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে জিরো-সেভেন-জিরোকে ধ্বংস করতে পারবে ওরা। আরোহীদের সহ।