এই যে, তোমরা ইংরেজি জানো নাকি? কাছাকাছি এসে জিজ্ঞেস করল সে। বেশি হলে আটচল্লিশ হবে বয়স, গম্বুজ আকৃতির মাথায় চকচকে টাক, মোটাসোটা নিরেট শরীর, চোখে বাইফোকাল চশমা। চেহারায় আত্মবিশ্বাস আর তৃপ্ত একটা ভাব, বোঝা যায় জীবনে সাফল্য আর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, বিপুল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী।
অনিচ্ছার ভাব নিয়ে দলটা আকৃতি বদল করল, চারজনই তাকাল লোকটার দিকে, কিন্তু কথা বলল লম্বা মেয়েটা, একমাত্র যেন তারই অধিকার। অবশ্যই, আমিও একজন আমেরিকান।
কী আশ্চর্য, তাই না! বিস্ময়ে আর আনন্দে চোখ বড় বড় করল লোকটা। খোলাখুলি, সপ্রশংস দৃষ্টিতে মেয়েটাকে লক্ষ্য করছে সে। আমি আসলে জানতে চাইছিলাম, ওগুলো কি জিনিস। মেয়েটার পায়ের কাছে পড়ে থাকা নেট ব্যাগের দিকে আঙুল তুলল সে।
স্বর্ণকেশী জবাব দিল, ওগুলো কোকো-ডি-মার।
হ্যাঁ, নাম শুনেছি বটে…
এখানকার লোকেরা এগুলোকে লাভ নাটস্ বলে, বলে চলেছে মেয়েটা, ঝুঁকে নেট ব্যাগটা খুলল সে। ভালো করে দেখলেই বুঝবেন, কারণটা কি। দুহাতে ফলটা ধরে লোকটাকে দেখাল সে।
ফলে দুটো অংশ এমনভাবে জোড়া লেগে আছে, হুবহু মানুষের নিতম্বের মতো দেখতে! এটা পেছন দিকে, বলে হাসল সে, মুখের ভেতর নড়ে উঠল জিত, চীনামাটির মতো ঝকঝকে দাঁত বেরিয়ে পড়ল। ফলটা ঘুরিয়ে ধরল সে। সামনের দিক। লোকটা দেখল ফলের সামনের অংশটা কোমল রেশমের আঁশসহ অনেকটা যোনির মতো দেখতে। কী আশ্চর্য, তাই না? আবার হাসতে লাগল সে। দাঁড়াবার ভঙ্গি বদলে কোমরটা বাড়িয়ে দিল সামনের দিকে, একটা ঢেউ উঠল তলপেটে। নিজের অজান্তেই মেয়েটার আঁটসাঁট ডেনিমের দিকে তাকাল লোকটা। দম বন্ধ হয়ে এল তার। বুঝতে পেরেছে, মেয়েটা তাকে নিয়ে কৌতুক করছে। একটা ঢোক গিলল বেচারা। হতভম্ব হয়ে পড়েছে মেয়েটার শর্টসে দুটো বোম খোলা, ভেতরের বেশ কিছুদূর দেখা গেল।
কী আশ্চর্য, তাই না? আবার বলল মেয়েটা, সকৌতুকে লক্ষ্য করছে। লোকটাকে।
লজ্জায়, অপমানে লোকটার কান গরম হয়ে উঠল। মুখ বন্ধ, ঘাম ছুটছে। শরীরে।
পুরুষ গাছটার যে কেশরে পরাগ থাকে, সেটা কত বড় হয় জানেন? জিজ্ঞেস করল স্বর্ণকেশী। আপনার হাতের মতো লম্বা আর মোটা, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন! চোখ বড় বড় করল সে। লাউঞ্জের অপরপ্রান্তে সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল লোকটার স্ত্রী, মেয়েলি বুদ্ধি দিয়ে টের পেয়ে গেছে স্বামী বেচারা বিপদে পড়তে যাচ্ছে। স্বামীর চেয়ে তার বয়স অনেক কম, বাচ্চা কোলে সীট ছেড়ে উঠতে হিমশিম খেয়ে গেল সে।
এখানকার লোকদের মুখে শুনতে পাবেন, পূর্ণিমার রাতে পুরুষ গাছ তার শিকড়গুলো মাটির ওপর তুলে নিয়ে মেয়ে গাছের সাথে মিলিত হবার জন্যে সরসর করে হেঁটে যায়…
আপনার হাতের মতো লম্বা… স্বর্ণকেশীর পাশ থেকে তার এলোচুল বান্ধবী খিলখিল করে হেসে উঠল,…উই মা! তামাশায় সে-ও যোগ দিল। তারপর, দুজন একসাথে লোকটার তলপেটের নিচে তাকাল। পরিষ্কার দেখা গেল, কুঁকড়ে একটু ছোট হয়ে গেল লোকটা। তার এই দুর্দশা লক্ষ্য করে মেয়েগুলোর পুরুষ বন্ধুরা হাসতে লাগল, দুজন লোকটার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
স্বামীর পাশে এসে দাঁড়াল স্ত্রী, কনুই ধরে টান দিল। মহিলার ঠোঁটের ওপর, নাকের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, চোখে কঠোর দৃষ্টি। হ্যারি, আমি অসুস্থ বোধ করছি, হিসহিস করে বলল সে।
আমাকে এখন যেতে হয়, পালাবার ছুতো পেয়ে পরম স্বস্তি বোধ করল লোকটা, তার আত্মবিশ্বাস চুরমার হয়ে গেছে। স্ত্রীর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরল সে।
ওকে তোমরা কেউ চিনতে পেরেছ কি? এলোচুল মেয়েটা জার্মান ভাষায় জিজ্ঞেস করল, এখনো হাসছে সে।
হ্যারল্ড ম্যাককেভিট, একই ভাষায় ফিসফিস করে উত্তর দিল স্বর্ণকেশী। ফোর্ট ওঅর্থের নিউরো-সার্জেন। শনিবার সকালে টিভিতে দেখনি, কনভেনশনের শেষ পেপারটা ও-ই তো পড়েছে। বড় মাছ খুব বড় মাছ। বিড়ালের মতো করে সে তার গোলাপি জিভের ডগা দিয়ে ঠোঁটের ওপরটা ভিজিয়ে নিল।
আজ এই সোমবার বিকেলে ডিপারচার লাউঞ্জের চারশ একজন আরোহীর মধ্যে তিনশ ষাট জনই হয় সার্জেন, না হয় তাদের স্ত্রী। সার্জেনদের মধ্যে কেউ কেউ ওষুধ বিজ্ঞানে অবদান রেখে দুনিয়া জোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য, জাপান আর দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া আর অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন ওঁরা। চব্বিশ ঘণ্টা আগে মৌরিশাস দ্বীপে শেষ হয়েছে ওঁদের কনভেনশন, মাহে দ্বীপ থেকে পাঁচশো মাইল দক্ষিণে। কনভেনশন শেষ হবার পর এটাই দূর পাল্লার প্রথম ফ্লাইট, কাজেই বিমানের কোনো আসনই খালি নেই। অনেক আগে টিকেট কাটা ছিল বলে মাহে থেকে বিমানে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে পনেরো জন জয়েনিং প্যাসেঞ্জার।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, নাইরোবি এবং লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিমানের গমনের আদেশ ঘোষণা করছে, আরোহীরা দয়া করে প্রধান গেট দিয়ে বিমানে উঠে আসুন। ঘোষণা শেষ হবার সাথে সাথে ভিড় করে দরজার দিকে এগোল লোকজন।
.
ভিক্টোরিয়া কন্ট্রোল, স্পিডবার্ড শূন্য সাত শূন্য থেকে উড্ডয়নের অনুমতি চাইছি। শূন্য-সাত-শূন্যকে অনুমতি দেয়া হলো। রানওয়ে নং এক থেকে চলতে শুরু করতে পারেন।
নাইরোবির উদ্দেশে আমাদের যাত্রাপথের বিবরণ পাঠিয়ে দিবেন দয়া করে। আমরা একেবারে ভর্তি।