এবার বলুন দেখি, আমার সার্ভেইল্যান্স ইকুইপমেন্টগুলো কোথায় রাখা যায়। তারপর চারদিকটা একবার ঘুরেফিরে দেখব, কেমন?
.
নজর রাখার জন্যে ভালো একটা জায়গা বাছাই করতে কোনো রকম সমস্যা হলো না পিটারের। সার্ভিস ম্যানেজারের কামরা টার্মিনাল ভবনের চারতলায় আকারে বেশ বড়, ওখান থেকে ট্যাক্সিওয়ের দক্ষিণ ভাগ সহ গোটা সার্ভিস এলাকা পরিষ্কার দেখা যায়। পাঁচতলায় ঝুল-বারান্দা থাকায় চারতলার এই কামরার জানালায় ঘন ছায়া পড়ে, পিটার যদি একেবারে জানালার কাছাকাছি না থাকে তাহলে চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল রোদে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকালে ওকে দেখতে পাবে না কেউ, এমনকি শক্তিশালী লেন্স ব্যবহার করেও কোনো লাভ হবে না। তাছাড়া হাইজ্যাকাররা এদিকে তাকাবে বলেও মনে হয় না, আরো অনেক উঁচু কাঁচমোড়া কন্ট্রোল টাওয়ারে লোক থাকবে বলে ধারণা করবে ওরা।
সার্ভেইল্যান্স ইকুইপমেন্টের মধ্যে কয়েকটা ক্যামেরা, একটা অডিও ইন্টেনসিফার। ক্যামেরাগুলোর কোনোটাই বাড়িতে ব্যবহারযোগ্য সুপার এইট এম.এম-এর চেয়ে বড় নয়, অ্যালুমিনিয়ামের ট্রাইপড়সহ একহাতেই বহন করা যায়। ওগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো, আটশ এম.এম, ফোকাল লেন্থ পর্যন্ত জুম করা যায়, প্রয়োজনে রিপিট করা যাবে হকারের কমান্ড কনসোলের স্ক্রীনে, একই সাথে ভিডিও টেপে ধরে রাখা সম্ভব। অডিও ইন্টেনসিফায়ার আকারে আরেকটু বড় হলেও ওজনে বেশি নয়। মাঝখানে সাউন্ড কালেক্টরসহ ওতে রয়েছে চার ফুটি ডিশ অ্যান্টেনা। একজন স্নাইপারের রাইফেল যতটুকু অব্যর্থ হতে পারে ততটুকু নিখুঁতভাবে ইন্টেনসিফায়ারকে লক্ষ্যস্থির করতে সাহায্য করবে টেলিস্কোপিক সাইট-ফোকাস করতে পারে আটশ গজ দূরে দাঁড়ানো একজন লোকের ঠোঁটে, একই দুরত্বের যে কোনো সাধারণ কথাবার্তা পরিষ্কার রেকর্ড করতে পারে, শব্দগুলো সরাসরি পাঠিয়ে দেবে কমান্ড কনসোলে, সেই সাথে ম্যাগনেটিক টেপ শুলে জমা হয়ে যাবে সব।
পিটারের কমিউনিকেশন টিমের দুজন টেকনিশিয়ানকে বসিয়ে দেয়া হলো কামরাটায়, প্রচুর স্যান্ডউইচ আর কফির ব্যবস্থা থাকল। আফ্রিকান কর্নেল আর তার লোকজনকে নিয়ে এলিভেটরে চড়ল পিটার, উঠে এল কাঁচমোড়া কন্ট্রোল টাওয়ারে।
.
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে এয়ারফিল্ড, এয়ারফিল্ডের ওপাশে অ্যাপ্রন, এবং টার্মিনালকে ঘিরে থাকা সার্ভিস এলাকা অবাধে দেখা যায়। টাওয়ারের নিচে অবজার্ভেশন প্ল্যাটফর্ম খালি করা হয়েছে, শুধু সামরিক বাহিনির লোকজন পাহারায় আছে ওখানে।
এয়ারফিল্ডে ঢোকার সবগুলো পথ বন্ধ করে দিয়েছি। শুধু টিকেট সাথে থাকলে প্যাসেঞ্জারদের ঢুকতে দেয়া হবে। ট্রাফিকের জন্যে একটাই সেকশন খোলা রাখা হয়েছে, টার্মিনালের উত্তর প্রান্তে।
মাথা ঝাঁকিয়ে সিনিয়র কন্ট্রোলারদের দিকে ফিরল পিটার।
ডোমেস্টিক ট্রাফিক প্যাটার্নটা কি রকম?
প্রাইভেট কোনো ফ্লাইটকে ক্লিয়ার্যান্স দেয়া হচ্ছে না। ডোমেস্টিক নিয়মিত ফ্লাইটগুলোকে ল্যালেরিয়া আর জারমিসটনে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আসা-যাওয়া করছে শুধু ইন্টারন্যাশনাল নিয়মিত ফ্লাইটগুলো।
জিরো-সেভেন-জিরো থেকে দেখতে পাচ্ছে ওরা?
না। প্লেনটা থেকে সবচেয়ে দূরে ইন্টারন্যাশনাল ডিপারচার টার্মিনাল, তাছাড়া দক্ষিণ দিকের ট্যাক্সিওয়ে আর অ্যাপ্রন আমরা ব্যবহারই করছি না। দেখতেই পাচ্ছেন, গোটা এলাকা খালি করে ফেলেছি–শুধু ওভারহল আর সার্ভিসিংয়ের কাজ চলছে বলে তিনটে এস-এ এয়ারওয়েজের প্লেন রয়ে গেছে। ওগুলো ছাড়া জিরো সেভেন-জিরোর এক হাজার গজের মধ্যে আর কোনো প্লেন নেই।
বোয়িংয়ে যদি উঠতে হয় সমস্ত ট্রাফিক বন্ধ করে দিতে হতে পারে…
আমাকে বললেই হবে, জেনারেল স্ট্রাইড।
চোখে বিনকিউলার তুলে আবার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বোয়িংটাকে দেখল পিটার। নিঃসঙ্গ, চুপচাপ, যেন পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ওটা। উজ্জ্বল মার্কিংগুলো অলঙ্করণের মতো লাগছে। লাল, নীল, আর সাদা, তিনটে রঙই রোদ লেগে চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে। টাওয়ারের দিকে পুরোপুরি আড়াআড়িভাবে পার্ক করা রয়েছে, প্রতিটি হ্যাচ আর দরজা বন্ধ। সার সার জানালার ওপর এক এক করে দৃষ্টি ফেলল পিটার, ভেতর থেকে প্রতিটি সানশেড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ফ্লাইটডেকের উইশীল্ড আর সাইড প্যানেলের দিকে তাকাল পিটার। ভেতর থেকে কম্বল দিয়ে ডেকে গুলি করাও সম্ভব নয়। টার্মিনাল ভবনের সবচেয়ে কাছের কোণ থেকে প্লেনটার দূরত্ব চারশ গজের বেশি নয়, সুযোগ পেলে নতুন লেজার সাইটের সাহায্যে থোরের ট্রেনিং পাওয়া স্নাইপার একজন লোকের যে কোনো একটা চোখে অব্যর্থভাবে গুলি করতে পারত।
ট্যাক্সিওয়ের খোলা টারমাকের ওপর দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে হেঁটে এলো কমান্ড্যান্ট বোনজেইয়ার, চোখ থেকে বিনকিউলার নামিয়ে ঠোঁট টিপে হাসল পিটার। সহিষ্ণু বন্ধুর মধুর হাসি, দেখে অবাক হয়ে গেল লোকটা।
পরিবেশ থেকে যতটা সম্ভব উত্তেজনা কমিয়ে ফেলতে চাই আমরা, সব ব্যাখ্যা করতে হওয়ায় বিরক্তবোধ করছে পিটার, তবু হাসিটা নিস্তেজ হতে দিল না। কারও দিকে চারটে কামান তাক করা থাকলে তার পক্ষে সঠিক সিন্ধান্ত নেয়া কঠিন, সে নিজেই ট্রিগার টেনে দিতে পারে। টার্মিনাল কার পার্কে রাখুন ওগুলো, প্লেন থেকে দেখা যাবে না। আর আপনার লোকদের বিশ্রাম নিতে বলুন।