পিটারের ব্যক্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন তিনি, লক্ষ্য করেছেন ওর জ্ঞানের পরিধি। মনে মনে স্বীকার করে নিয়েছেন, ওর মেধা। কিন্তু অ্যাটলাসে তার ভবিষ্যত সম্পর্কে তিনি সন্দিহান।
ফোল্ডারটা পড়া শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডক্টর পার্কার। কোনো মানুষের দুর্বলতা খুঁজতে চাইলে তার উরুসন্ধির দিকে তাকানো হলো নিয়ম। কিন্তু পিটার স্ট্রাইডের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক যৌনতার দেখা নেই। হোমোসেক্সয়াল নয় সে, বরঞ্চ উল্টোটা সত্যি। ডিভোর্সের পর থেকে কম করে হলেও বারোজন মেয়ের সাথে ওর সম্পর্কের কথা প্রকাশ পেয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে তিনজন বিবাহিতা-কিন্ত প্রত্যেকেই তারা উঁচু তলার নারী, বিদূষী এবং মাননীয়া—-কাজেই পিটারের ব্যক্তিগত জীবনে কোনো গুজব রটে নি।
লম্বা মেয়ের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়, আকৃষ্ট হয় বুদ্ধিমতি এবং নিজের ক্ষেত্রে সফল নারীর প্রতি। একটা মেয়ে ছিল সাংবাদিক, নিজের লেখা সিন্ডিকেটেড কলাম ছিল তার; আরেকজন স্বনামখ্যাত মডেল যার লন্ডনে নিজের একটা ডিজাইন শপ আছে। রয়াল শেক্সপিয়র কোম্পানির এক অভিনেত্রীও রয়েছে পিটারের প্রেমিকার তালিকায়। ধৈর্য ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সমস্ত বিবরণ পড়ে চললেন পার্কার।
সামরিক বেতন ছাড়াও ব্যক্তিগত আয় আছে পিটার স্ট্রাইডের যা থেকে বইয়ের একটা সংগ্রহ গড়ে তুলেছে সে। তার প্রেমিকারদের মতোই-বইয়ের সংগ্রহও বেশ দুর্লভ। কোনো লুকোচুরির ব্যাপার নেই ওর জীবনে। সিগারেট খায় না। মদ খায় সে, বলা যেতে পারে ওয়াইন সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু মদ্যপ নয়, সে ধারার মানুষ তো নয়ই। অবৈধ কোনো আয় নেই, সুইস ব্যাংকে নেই কোনো গোপন অ্যাকাউন্ট।
যদিও ইংরেজ আভিজাত্য অনুযায়ী কোনো ধরনের শিকার বা শুটিং সে করে না; তথাপি মিউনিখ অলিম্পিকে ইংল্যান্ডের পক্ষে পিস্টল শটে স্বর্ণপদক জিতেছিল একদা। এখনো নিয়মিত রেঞ্জে প্রাকটিস করে। শারীরিক ফিটনেস অতি অবশ্যই, অসাধারণ।
ডক্টর পার্কার, স্যার,–মৃদু নক করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল তার অ্যাসিস্ট্যান্ট। নতুন খবর এসেছে…।
দীর্ঘশ্বাস চেপে ডক্টর পার্কার বললেন, আসছি। ফোল্ডারটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।
.
বাতাস কেটে নিঃশব্দে নেমে এল হকার। মাটি থেকে পাঁচ হাজার ফিট উপরে থাকতেই পাওয়ার বন্ধ করে দিয়েছে পাইলট, থ্রটল আবার স্পর্শ না করেই ফাইনাল অ্যাপ্রোচের জন্যে প্রস্তুতি নিল সে। প্লেন সচল রাখার জন্যে যে ন্যূনতম গতি দরকার তার চেয়ে মাত্র দশ নট বেশি গতিতে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে উড়ে এল সে, রানওয়ে ওয়ান ফাইভে নেমেই ম্যাক্সিমাম সেফ ব্রেকিং অ্যাপ্লাই করল। ওয়ান ফাইভ ছোট একটা বিকল্প রানওয়ে, হকারও অল্প একটু দূর ছুটে দাঁড়িয়ে পড়ল।
তিনশো ষাট ডিগ্রী বাঁক নিয়ে হকারকে ঘোরাল পাইলট, চলে এল পনেরো নম্বর রানওয়েতে, শুধু চাকা ঘোরাবার মতো পাওয়ার ব্যবহার করছে।
ওয়েল ডান, ভারী গলায় বলল পিটার, ঝুঁকে ওত পাতার ভঙ্গিতে পাইলটের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ও। প্রায় নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া চলে জিরো-সেভেন-জিরো থেকে কেউ ওদের ল্যান্ড করতে দেখেনি।
সামনেই অ্যাপ্রন মার্শালকে হাত নাড়তে দেখা গেল, মার্শালের পিছনে চারজন লোক গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনজনের পরনে ক্যামোফ্লেজ ব্যাটলড্রেস অপরজনের পরনে নীল ইউনিফর্ম ক্যাপ আর গোল্ড ইনসিগনিয়া দেখে বোঝা গেল সাউথ আফ্রিকান পুলিশ অফিসার।
ভাঁজ খোলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে ইউনিফর্ম পরা অফিসার প্রথম অভ্যর্থনা জানাল পিটারকে।
প্রিন্সলু, পিটারের বাড়ানো হাতটা জোরে ঝাঁকিয়ে নিজের পরিচয় দিল সে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল।
সেনা বাহিনির নয়, পুলিশের পদ। মোটাসোটা, শক্ত-সমর্থ কাঠামো, চোখে স্টিল রিমের চশমা, বয়স পঞ্চাশ। আসুন, জেনারেল স্ট্রাইড, আপনার সাথে কমান্ড্যান্ট বুনজেইয়ারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। এটা মিলিটারি র্যাঙ্ক, কর্নেলের সমপর্যায়। কমান্ড্যান্টের বয়স পীসমেকারের চেয়ে কম, বেশ লম্বা। শ্বেতাঙ্গ এই দুই অফিসারই দ্বিধা আর সন্দেহে ভুগছে, চেহারায় ম্রিয়মাণ ভাব। কারণটাও সাথে সাথে জানা গেল।
আমাকে বলা হয়েছে, আপনার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে, জেনারেল। লোকগুলোর পজিশন আলগোছে বদলে গেল, অফিসার দুজন আস্তে করে চলে এল পিটারের দুপাশে, দুজন মুখোমুখি দাঁড়াল। সাথে সাথে উপলব্ধি করল পিটার, রাগ আর বিদ্বেষ একা শুধু ওর ওপর বর্ষিত হচ্ছে না। পুলিশ আর মিলিটারির চিরন্তন রেষারেষি লেগে আছে এখানেও। অ্যাটলাসের মতো একটা সংগঠনের প্রয়োজন যে সত্যি ছিল, এই রেষারেষি লক্ষ্য করে নতুন করে আবার উপলব্ধি করল পিটার। আপনিই অর্ডার করবেন, আমরা আপনাকে সাহায্য করব।
ধন্যবাদ, শান্তভাবে কমান্ড গ্রহণ করল পিটার। ঠিক তিন ঘণ্টা পর আমার ব্যাক-আপ টীম ল্যান্ড করবে। একেবারে শেষ উপায় হিসেবে শক্তি ব্যবহার করব আমরা। যখন করব, শুধু থোর কমান্ডের কমান্ডোরা জড়িত হবে তাতে। ব্যাপারটা আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া দরকার। পিটার দেখল, সামরিক অফিসারের চোয়াল কঠিন হয়ে গেল।
কিন্তু আমার লোকেরা অত্যন্ত…
এটা একটা ব্রিটিশ এয়ারক্রাফট-আর প্লেনের যাত্রীরা সবাই হয় ব্রিটিশ না হয় আমেরিকান। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত–আমি নেতৃত্ব দেব। বলল পিটার। তবে অন্যান্য ব্যাপারে আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ নিশ্চয়ই গ্রহণ করব আমি। হাতঘড়ি দেখল ও।