টিভির পর্দায় ফুটে ওঠা ছবির দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল পিটার। সাপ্লাইয়ের ধরন দেখে আপনার ডাক্তাররা কি ভাবছেন?
মনে হচ্ছে গুলি খেয়ে আহত হয়েছে কেউ। এ-বি পজিটিভ রক্ত চেয়েছে ওরা, দুর্লভ একটা গ্রুপ। ক্রুদের সার্ভিস রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, অন্তত একজনের রক্তের গ্রুপ এ-বি পজিটিভ। দশ লিটার প্রাসমালাইট বি, রক্ত দেয়ার একটা সেট আর সিরিঞ্জ, মরফিন আর ইন্টারভেনাস পেনিসিলিন, টিটেনাস টক্সয়েড সবগুলোই গুরুতর আহত লোকের চিকিৎসায় লাগে।
মেইন পাওয়ারের সাথে বোয়িংয়ের সংযোগ দেয়া হয়েছে?
হ্যাঁ, এয়ারকন্ডিশনিং ছাড়া চারশ লোক এতক্ষণে দম আটকে মারা যেত। এয়ারপোর্ট কর্মীরা একটা কেবল টেনে নিয়ে গিয়ে এক্সটারনাল সকেটে প্লগ ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্লেনের সবগুলো সাপোর্ট সিস্টেম-গ্যারিল হেটিংসহ পুরোপুরি চালু রয়েছে।
তার মানে যে কোনো সময় সুইচ অফ করে দিতে পারি আমরা। ডেস্কে রাখা প্যাডের ওপর পয়েন্টটা লিখল পিটার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো দাবি জানানো হয়নি? নেগোশিয়েটর হিসেবে কারো নামও প্রস্তাব করেনি?
না। মনে হচ্ছে এ ধরনের পরিস্থিতিতে দর কষাকষির কৌশল ভালোই জানা আছে ওদের। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ভাবসাব ভালো ঠেকছে না।
কি রকম?
কমান্ডো পাঠিয়ে বোয়িংটাকে দখল করতে চাইছে ওরা। আমেরিকান আর ব্রিটিশ অ্যামব্যাসাডর চাপ সৃষ্টি করে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছেন ওদের।
পিটারের শিরদাঁড়া বেয়ে আতঙ্কের হিম একটা শিহরণ নেমে এল। সে ধরনের কিছু ঘটতে দিলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, ডক্টর পার্কার, তাড়াতাড়ি বলল ও।
ভেবেছ আমি বুঝি না? জান সুটে উড়ে আসতে আর কতক্ষণ লাগবে তোমার?
সাত মিনিট আগে জাম্বেজি নদী পেরিয়ে এসেছি, উইন্ডস্ক্রীনের দিকে ঝুঁকে নিচে তাকাল পিটার, কিন্তু কুয়াশার জন্যে মাটি পর্যন্ত দৃষ্টি গেল না। দু-ঘণ্টা দশ মিনিট লাগবে, কিন্তু আমাদের সাপোর্ট সেকশন তিন ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট পিছিয়ে আছে।
ঠিক আছে, পিটার। দেখি ওদিকে ওরা কি করছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার কেবিনেট মিটিং ডেকেছে, অ্যাটলাসের প্রতিনিধি হিসেবে আমারও যেতে হবে।
এক মুহূর্ত থেমে পার্কার বললেন, তোমাকে জানানোর দরকার, কন্ডিশন ডেল্টা ঘোষণা করার অনুমতি পেয়ে গেছি আমি।
কন্ডিশন ডেল্টা মানে কাজে বাধা পেলে খুন করার সিদ্ধান্ত, ঘোষণাটা সংগঠনের চেয়ারম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। তবে, বলে চলেছেন ডক্টর পার্কার, কন্ডিশন ডেল্টা আমি সম্ভাব্য শেষ উপায় হিসেবে ব্যবহার করব। প্রথমে আমি ওদের দাবিগুলো শুনতে চাই, বিবেচনা করে দেখতে চাই–সেদিক থেকে ভাবলে, ওদের সাথে সহযোগিতা করার জন্যে সম্পূর্ণ তৈরি আমরা।
অনেক কথাই বলেছেন ডক্টর পার্কার, মন দিয়ে শুনছেও পিটার, কিন্তু প্রতিটি বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারছে না। অস্বস্তি গোপন করার জন্যে মুখ নিচু করে হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে থাকল ও। কথা বলল মৃদুকণ্ঠে, টেরোরিস্টদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেয়ার অর্থ হবে অন্যান্য গ্রুপগুলোকে আঘাত হানতে উৎসাহিত করা…
কন্ডিশন ডেল্টার অনুমতি আমার হাতে তো থাকছেই, একটু যেন তিক্ত শোনাল ডক্টর পার্কারের কণ্ঠস্বর। কিন্তু লাইসেন্স পেলেই মানুষ খুন করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা খুনি নই, জেনারেল স্ট্রাইড। স্ক্রীনের বাইরে দাঁড়ানো কার উদ্দেশে যেন মাথা ঝাঁকালেন তিনি। অ্যাটলাসের উপস্থিতি সম্পর্কে ওদের আমি এখুনি জানাব। টিভির স্ক্রীন নিস্প্রভ হয়ে গেল।
লাফ দিয়ে উঠে প্যাসেজে পায়চারি শুরু করল পিটার, কিন্তু দুসারি সীটের মাঝখানে জায়গাটুকু খুব সরু, তাছাড়া সিলিং এত নিচু যে মাথা সোজা করা যায় না-রেগেমেগে আবার বসে পড়তে বাধ্য হলো ও।
.
পেন্টাগনের পশ্চিম উইংয়ের নিজের অফিসে কমিউনিকেশন ডেস্ক ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ডক্টর পার্কার। তার চলার পথ থেকে সমীহের সাথে সরে দাঁড়াল দুজন টেকনিশিয়ান, দ্রুতহাতে ইনার অফিসের দরজা খুলে দিল পার্সোনাল সেক্রেটারি। এরকম একটা বিশাল ধড় নিয়ে চমৎকার সুষম সাবলীল হাঁটা-চলা সহজে চোখে পড়ে না, কাঠামোয় কোথাও বেশি মেদ নেই, চওড়া হাড়গুলো মাংসের পাতলা ফালি দিয়ে মোড়া। তার পরনের কাপড়চোপড় খুব দামি, ফিফথ এভিনিউ-এর দর্জিরা এর চেয়ে ভালো তৈরি করতে পারে না। কিন্তু কাপড়গুলো সবই পুরানো হয়ে গেছে, আগের মতো আর ভাজ হয় না। জুতো জোড়া ইটালি থেকে আমদানি করা, কিন্তু অনেক দিন কালির মুখ দেখেনি। বেশভূষার ব্যাপারে অমনোযোগী, তা সত্ত্বেও আসল বয়সের চেয়ে দশ বছর কম, তেতাল্লিশ বলে মনে হয় তার। জুলফির কাছে অল্প দু-চারটে চুলে পাক ধরেছে।
ইনার অফিসে প্রচুর বই রেখেছেন ডক্টর পার্কার, পঠন-পাঠনে তড়িঘড়ি একটা সময় বেরিয়ে যায়। ফার্নিচারগুলো হালকা এবং আরামদায়ক, বই আর পিয়ানোটা তার নিজের। পাশ কাটাবার সময় পিয়ানোর কীবোর্ডে আঙুল ছোঁয়ালেন তিনি লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলেন ডেস্কের দিকে।
সুইভেল চেয়ারে বসে ডেস্কে সাজিয়ে রাখা ইন্টেলিজেন্স ফোল্ডারগুলোয় হাত দিলেন ডক্টর পার্কার। প্রতিটি ফোল্ডারে লেটেস্ট কমপিউটার প্রিন্ট-আউট রয়েছে, তার অনুরোধে পাঠানো হয়েছে ওগুলো। স্পীডবার্ড জিরো-সেভেন-জিরো উদ্ধার করার ব্যাপারে যারা জড়িত হবে তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ কিছু লোক সম্পর্কে তথ্য রয়েছে ফোল্ডারগুলোয়। এক-একটা ফোল্ডার এক-একজনের নামে।