এরপর ওর চিন্তার জগত অধিকার করে নিল ম্যাগডা অল্টম্যান। কী অসামান্য সুন্দরী মেয়েটা! সম্ভবত ওর অচেতনতার সময়টাতে ম্যাগডা পাশেই ছিল সর্বক্ষণ। চোখ মেলার পর তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
ধন্যবাদ, ডার্লিং ফিসফিসায় ম্যাগডা, আমার কাছে ফিরে আসার জন্যে ধন্যবাদ।
তারপর? লা পিয়েরে বেনিতের রুম। উঁচু ছাত, কারুকার্জ করা; বাইরে লন থেকে অপূর্ব হ্রদ দেখা যায়। প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তা। পাতায় ছেয়ে গেছে হ্রদের ধারের প্রতিটি গাছ। পুরোটা কামরা ফুলে ফুলে ভরে রেখেছে ম্যাগডা। ওর পাশে আছে সবসময়।
অল্টম্যান ইন্ড্রাস্ট্রির বোর্ডরুমে যখন হেঁটে গেলে তুমি, কি ঘটল? পিটারের করা অন্যতম প্রথম প্রশ্ন ছিল ওটা।
বিহ্বলতা, শেরি, মুচকি হাসে ম্যাগডা। সেই পাগল-করা, খসখসে স্বরের হাসি। ওরা ততক্ষণে নিজেদের মধ্যে আমার কোম্পানি ভাগ-বাটোয়ারা করে ফেলেছে!
লা পিয়েরে বেনিতে পিটার থাকাকালে আটদিন পর্যন্ত দর্শনার্থী এল। জানালার পাশে চেয়ারে বসতে হলো ওকে।
পিটারের চেয়ারের পাশে বসে থেকে ওকে আগলে রাখল ম্যাগডা-কিছুতেই যেন কোনো শারীরিক চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখল।
প্রভুর তিরস্কার করা কুকুরের মতো রুমে প্রবেশ করেছিল কলিন নোবলস। ডান হাতটা স্লিং-এ বাধা, বুকের সঙ্গে ঝুলছে। ভালো হাত দিয়ে ওটা ধরে রেখেছিল সে।
যদি জানতাম, তিক্ত কণ্ঠে বলে উঠল কলিন নোবলস, স্যার স্টিভেন নয়, ওটা তুমি–তাহলে কি ভুলেও এই বান্দা পেছন ফিরত তোমার দিকে।
পিটারের কাঁধে এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে ম্যাগডা। মুখ শক্ত হয়ে গেছে তার।
ধীরে, পিটার, ফিসফিস করে সতর্ক করে সে।
একটা ব্যাপার বল তো আমাকে, হিসহিস করে উঠে পিটার। মেলিসা জেইনের কিডন্যাপিংটা তুমি আয়োজন করেছিলে, কলিন?
মাথা নাড়ে কলিন। শপথ করে বলছি। পার্কার তার অন্যান্য এজেন্টদের ব্যবহার করেছিল। আমি জানতাম না এমন কিছু ঘটবে।
ক্ষমাহীন চোখে তার দিকে চেয়ে রইল পিটার।
মেলিসাকে উদ্ধার করার পর আমি জানতে পারি কাজটা খলিফার। আগে জানলে বাধা দিতাম। খলিফাও সেটা জানত। সেজন্যেই দায়িত্বটা আমাকে দেয়নি সে। দ্রুত কথা বলছে কলিন, জরুরি ভঙ্গিতে।
পার্কার আসলে চেয়েছিল কি? হিসহিস করে উঠল পিটারের গলা।
তিনটে জিনিস। এক, তোমাকে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করাতে চেয়েছিল, সে খলিফা নয়। সেজন্যেই কৌশলে নিজেকে খুন করার প্রস্তাব পাঠায় তোমার কাছে। অবশ্যই তুমি তার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারতে না। তারপর মেলিসাকে উদ্ধার করার সুযোগ করে দেয়া হয় তোমাকে। খলিফা নিজে ফোন করে শওনেসির নাম আর ঠিকানা জানিয়ে দেয়। তারপর তোমাকে লেলিয়ে দেয়া হয় ব্যারনেস ম্যাগডা অল্টম্যানের পেছনে…, ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে ব্যারনেসের দিকে একবার তাকার কলিন। ওঁকে যদি তুমি খুন করতে পারতে, খলিফার মুঠোর ভেতর চলে যেতে তুমি।
এ-সব তুমি জানলে কখন?
মেলিসাকে উদ্ধার করার পর। তখন ক্যাকটাস ফ্লাওয়ার কাভার ফাস না করে কিছুই আমার করার ছিল না। আমি শুধু মোসাডের মাধ্যমে ব্যারনেস অল্টম্যানকে সাবধান করে দেয়ার চেষ্টা করি।
কথাটা সত্যি, পিটার, শান্তগলায় বলল ব্যারনেস।
একটু একটু করে শিথিল হয় পিটার।
খলিফা তোমাকে চীফ লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব দিল কবে থেকে?
তোমার কাছ থেকে থোর কমান্ডের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পরদিন! তোমাকে সে প্রথম থেকেই অবিশ্বাস আর ভয় করত, পিটার, সেজন্যেই তো থোর কমান্ডের কমান্ডার হতে দিতে চায়নি। আর তাই, থোর কমান্ড থেকে তোমাকে সরাবার প্রথম সুযোগটা সাথে সাথে কাজে লাগায়। তুমি বিদায় হয়েছ দেখেও স্বস্তি পায়নি, বুইলে রোডে খুন করার চেষ্টা করল। কিন্তু তারপর, তুমি বেঁচে যাওয়ায়, তোমার গুরুত্ব নতুন করে উপলব্ধি করল সে।
অ্যাটলাসের অন্যান্য শাখার কমান্ডারাও কি খলিফার নিজের নোক– মারকারির ট্যানার এবং ডায়ানার পিটারসন?
আমরা তিনজনই–হ্যাঁ। মাথা ঝাঁকাল কলিন। নিস্তব্ধ হয়ে গেল কেবিন।
আর কিছু জানতে চাও তুমি, পিটার? নরম স্বরে জানতে চায় কলিন। আর কোনো প্রশ্নঃ
এখন না, মাথা ঝাঁকায় পিটার, দুর্বলভাবে। তবে পরে আসবে।
কলিন ম্যাগডার দিকে তাকায়। ও কি এখনো শক্ত হয়েছে? পুরোটা কি বলতে পারি ওকে?
এক মুহূর্ত দ্বিধায় ভুগল ম্যাগডা। এরপর সায় দিল। হ্যাঁ, বলতে পার।
পশ্চিমা দুনিয়ার আস্তিনে লুকানো একটা ছুরি হলো অ্যাটলাস। নিজের শত্রুদের সামনে যে দুনিয়া নিজেকে নপুংসক করছে। অন্তত একবার হলেও এখন আমরা ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে লড়তে পারব। শক্তিশালী মানুষজন এবং দেশের একটা যোগসূত্র হলো অ্যাটলাস। খলিফা ছিল এক্সিকিউটিভ চিফ। এটাই ছিল একমাত্র এজেন্সি যা যে কোনো দেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারে। এর দায়িত্ব ছিল পশ্চিমা দুনিয়ার নিরাপত্তা বিধান। এখন অ্যাটলাস পরিপূর্ণ–কেবল খলিফা নেই। জর্ডান উপত্যকার উপরে এক দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। কিন্তু অ্যাটলাস আছে। খলিফার অংশ নেই, কিন্তু দুনিয়ার প্রয়োজনে অ্যাটলাসকে থাকতে হবে। চিরঅস্থির দুনিয়ার এই সংগঠনই একমাত্র ভরসা আমাদের।
পিটার কখনো কলিনকে এত চমৎকারভাবে বলতে শোনে নি।
তুমি তো জানো, পিটার, তুমি ছিলে অ্যাটলাসের প্রধান হওয়ার তালিকায়। যা হোক, ভুল মানুষ তোমার উপরের পদ পেয়েছিল। কিংস্টোন পার্কারের সমস্ত গুণাবলি ছিল বলেই মনে হয়েছিল তখন। কিন্তু কিছু লুকোনো ব্যাপার ছিল তার মধ্যে–যা পরে প্রকাশ পায়। সুস্থ হাত তুলে গুনতে শুরু করল কলিন।