আধবোজা চোখে শুনে যাচ্ছেন ডক্টর পার্কার, প্ল্যান-প্রোগ্রামের ওপর তার আস্থা প্রবল। আতঙ্কবাদীরা যদি ইটালিয়ান স্টাইলে আঘাত হানে, সেটা মোকাবিলা করা অপেক্ষাকৃত সহজ-সরাসরি নগদ টাকা চাইবে ওরা। আর জার্মান পদ্ধতি হলো, বন্দিমুক্তির দাবি জানাবে ওরা, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার সমাধান চাইবে। নিজেদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করল ওরা, তারপর বাধা পেল।
গুড গড! শুধু অতিমাত্রায় বিস্মিত হলে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন কিংস্টোন পার্কার। এখানে দেখছি আরেক দিক মোড় নিচ্ছে ঘটনা…
.
পূর্ব দিকের আকাশপথ বেছে নিল জিরো-সেভেন-জিরো, স্পীড কমল, অনেক নিচেও নেমে এল আগের চেয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকান এয়ারফোর্স কমান্ড হঠাৎ করেই উপলব্ধি করল কি ঘটতে চলেছে।
জরুরি নির্দেশে সমস্ত এভিয়েশন ফ্রিকোয়েন্সি নিস্তব্ধ করে দেয়া হলো, উপর্যুপরি হাতুড়ির বাড়ির মতো বারবার একই আদেশ করা হলো জিরো-সেভেন জিরোকে, জাতীয় আকাশ সীমা ছেড়ে বেরিয়ে যাও। কোনো সাড়া তো পাওয়া গেলই না, বরং জান সুট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে দেড়শ নটিক্যাল মাইল দূরে বোয়িংটার স্পীড আরো কমল, আরো নিচে নেমে নিয়ন্ত্রিত আকাশ সীমার ভেতর চলে এল।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জিরো-সেভেন-জিরো দিস ইজ জান স্মাট কন্ট্রোল, ইউ আর এক্সপ্রেসলি রিফিউজড় ক্লিয়ারান্স টু জয়েন দি সার্কিট। ডু ইউ রিড মি, জিরো সেভেন জিরো?
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জিরো-সেভেন-জিরো দিস ইজ এয়ারফোর্স কমান্ড। ইউ আর ওয়ানড় দ্যাট ইউ আর ইন ভায়োলেশন অভ ন্যাশনাল এয়ারস্পেস। ইউ আর অর্ডারড টু ক্লাইম্ব ইমিডিয়েটলি টু থারটি থাউজেন্ড ফিট অ্যান্ড টার্ন অন কোর্স ফর নাইরোবি।
বোয়িং ইতোমধ্যে একশ নাটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে এসেছে, পনেরো হাজার ফিট থেকে আরো নেমে আসছে নিচের দিকে।
ডায়মন্ড লিডার, দিস ইজ চিতা। টেক দি টার্গেট আন্ডার কমান্ড অ্যান্ড এনফোর্স ডিপারচার ক্লিয়ারান্স।
দেখার বিষয়, জোর করে জিরো-সেভেন-জিরাকে বিদায় করা যায় কিনা।
সবুজ আর খয়েরি রঙের লম্বা চকচকে মিরেজের দ্রুতগতি পতন শুরু হলো। কয়েক হাজার ফিট নেমে এসে বোয়িংয়ের লাল, সাদা, আর নীল নাকের সামনে সিধে হলো পাইলট, মাঝখানে দূরত্ব মাত্র একশ ফিট। পাইলট তার মিরেজের ডানা কাত করল, নির্দেশ দিচ্ছে-আমাকে অনুসরণ কর।
সেই একই কোর্সে, একই গতিতে এগোচ্ছে বোয়িং, পাইলট যেন কিছু দেখেনি বা বোঝেনি। থ্রটল একটু পিছিয়ে আনল মিরেজের পাইলট, মাঝখানের ব্যবধান কমে গিয়ে পঞ্চাশ ফিটে দাঁড়াল। আবার কাত হলো মিরেজের ডানা, রেট-ওয়ান টার্ন নিয়ে উত্তর দিকে এগোল পাইলট।
নিজের পথেই থাকল বোয়িং, জোহানেসবার্গের দিকে এগোচ্ছে।
দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে মাঝখানের ব্যবধান আরো কমিয়ে আনল মিরেজের পাইলট। বোয়িংয়ের সরাসরি পিছনে না থেকে একপাশে সরে এল একটু, পিছিয়ে এসে জিরো-সেভেন-জিরোর ককপিটের পাশে চলে এল। ঘাড় ফিরিয়ে পঁয়তাল্লিশ ফিট দূরে তাকাল সে। চিতা, দিস ইজ ডায়মন্ড লিডার ওয়ান। টার্গেটের ফ্লাইট ডেকের ভেতরটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। ককপিটে অতিরিক্ত একজন রয়েছে। একটা মেয়ে। মনে হচ্ছে তার হাতে একটা মেশিন পিস্তল।
ইন্টারসেপ্টর প্লেনটাকে দেখার জন্যে ঘাড় ফেরাল দুজন পাইলট, হাড়ের মতো সাদা হয়ে গেছে চেহারা। বাঁ দিকের সীটটার পিছন থেকে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল মেয়েটা, কুৎসিত দর্শন কালো অস্ত্রটা স্যালুটের ভঙ্গিতে কপালের কাছে। তুলল। মিরেজ পাইলটের চোখে রেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল সে, এত কাছ থেকে যে, তার ঝকঝকে সাদা দাঁত পরিষ্কার দেখতে পেল পাইলট।
যুবতী একটা মেয়ে, সোনালি চুল, রিপোর্ট করল মিরেজ পাইলট। সুন্দরীখুবই সুন্দরী।
ডায়মন্ড ওয়ান, দিস ইজ চিতা। পজিশন ফর হেড-অন অ্যাটাক।
সাথে সাথে সগর্জনে সামনের দিকে ছুটল মিরেজ, চোখের পলকে উঠে গেল ওপর দিকে, বিশাল অর্ধবৃত্ত রচনা করে পাঁচ আঙুলের আকৃতি, নিল, গোটা ঝাঁক।
চিতা, উই আর ইন পজিশন ফর এ হেড-অন অ্যাটাক।
ডায়মন্ড লিডার ফ্লাইট। আক্রমণের ভান করুন। আবার বলছি, ভান করুন। সত্যি আক্রমণ নয়।।
ডায়মন্ড লিডার আন্ডারস্ট্যান্ডস সিমিউলেটেড অ্যাটাক।
মিরেজ এফ. আই. নাক ঘুরিয়ে নিয়ে ডাইভ দিল, স্কেলের কাঁটা নড়ে ওঠার সাথে সাথে বিদ্যুৎগতিতে ছুটল, সোনিক ব্যারিয়ার ভেঙে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল তার মতিগতি।
সাত মাইল দূরে থাকতেই ওটাকে দেখতে পেল সিরিল ওয়াটকিংস। জেসাস, চেঁচিয়ে বলল সে। দিস ইজ রিয়েল! ঝট করে সামনের দিকে ঝুঁকল সে, বোয়িংয়ের ম্যানুয়েল কন্ট্রোল নিজের হাতে নেবে। এতক্ষণ ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ডিরেক্টর প্লেন চালাচ্ছিল।
না, যেমন আছে তেমনি থাক! এই প্রথম গলা চড়াল ইনগ্রিড। হোল্ড ইট! হাঁ করা জোড়া মাজল সহ শট পিস্তলটা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের দিকে তাক করল সে। এখন আমাদের কোনো নেভিগেটরের দরকার নেই।
স্থির পাথর হয়ে গেল পাইলট, তীরবেগে সোজা ছুটে আসছে মিরেজ। প্রতি মুহূর্তে আকারে বড় হচ্ছে ওটা। এক সময় মনে হলো গোটা উইন্ডস্ক্রীন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সম্ভাব্য শেষ মুহূর্তে নাকটা সামান্য একটু উঁচু হলো, মাথার ওপর দিয়ে সৎ করে বেরিয়ে গেল মিরেজ, মনে হলো দুটো প্লেনের মাঝখানে বড়জোর এক ফিট ব্যবধান ছিল। মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো না বটে, কিন্তু সুপারসোনিক আলোড়ন এত বড় বোয়িংটাকেও তীব্র একটা ঝাঁকি দিয়ে গেল।