তার কপালে উদ্বেগের একটা রেখা ফুটে উঠল, খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন, মারকারি কমান্ডের জন্যেও আমি কন্ডিশন আলফা ঘোষণা করেছি। ব্যাপারটা যদি হাইজ্যাক হয়, প্লেনটার শেষ অবস্থান জানার পর আমার মনে হচ্ছে হাইজ্যাকারদের গন্তব্য পূর্ব দিকে হওয়াও বিচিত্র নয়।
আলফার তিনটে হাতিয়ার বা বাহু রয়েছে, প্রত্যেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। হোর কমান্ড শুধু ইউরোপ আর আফ্রিকায় কাজ করতে পারবে। মারকারি কমান্ডের হেডকোয়ার্টার ইন্দোনেশিয়ায়, এশিয়া আর অস্ট্রেলিয়া কাভার করছে। ডায়ানারের হেডকোয়ার্টার ওয়াশিংটনে, উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকায় তৎপর।
আরেক রিলেতে মারকারির ট্যানার আমার সাথে কথা বলতে চাইছে। কয়েক সেকেন্ড পর আবার ফিরে আসবে, পিটার।
ঠিক আছে, ডক্টর পার্কার।
স্ক্রীন কালো হয়ে গেল, পিটারের পাশের চেয়ারে দামি ডাচ চুরুট ধরাল কলিন নোবলস্। নিজের ডেস্কের কিনারায় হাঁটু ঠেকিয়ে চেয়ারে হেলান দিল সে, হাতঘড়ি দেখল।
এটাও যদি ফলস অ্যালার্ম হয়, সংখ্যাটা হবে তেরো। মুখের সামনে হাত রেখে হাই তুলল একটা। শুধু অপেক্ষায় থাকা ছাড়া এই মুহূর্তে কারও কিছু করার নেই। এবং বারবার অপেক্ষা করতে করতে গোটা ব্যাপারটা একঘেয়ে হয়ে উঠেছে ওদের কাছে। একঘেয়ে হলেও, প্রস্তুতি নিতে অবহেলা করেনি ওরা। বিশাল হারকিউলিস ট্রান্সপোর্টে প্রতিটি অস্ত্র এবং ইকুইপমেন্ট তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্যে তৈরি রাখা হয়েছে। উঁচু মানের ট্রেনিং পাওয়া ত্রিশজন সৈনিককে ভোলা হয়েছে। প্লেনে। দুটো প্লেনেরই ফ্লাইট ক্রুরা যার যার স্টেশনে অপেক্ষা করছে। স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ রাখছে কমিউনিকেশন টেকনিশিয়ানরা, প্রয়োজনে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওয়াশিংটন আর লন্ডনের ইন্টেলিজেন্স কমপিউটারের সাহায্য চাইবে ওরা। বাকি শুধু অপেক্ষার অবসান। একজন সৈনিক জানে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় শুধু অপেক্ষাতেই কেটে যায়। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলেই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় পিটারের। কলিনের সঙ্গ পেয়ে আজ তবু ব্যাপারটা সহনীয় লাগছে।
খানিক পর আবার স্ক্রীনে ফিরে এলেন ডক্টর পার্কার। জানালেন জিরো-সেভেন জিরোর সর্বশেষ পজিশনে একটা সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ প্লেন পাঠানো হয়েছিল, কিছুই জানতে পারেনি ক্রুরা। বিগ বার্ড নামে একটা রিকনিস্যান্স স্যাটেলাইট ওই একই পজিশনের ফটো তুলেছে, কিন্তু পরীক্ষা করার জন্যে ফিলা পাওয়া যাবে চৌদ্দ ঘণ্টা পর। এক ঘণ্টা ছয় মিনিট হলো জিরো-সেভেন-জিরো অপারেশনস নরমাল রিপোর্ট পাঠাচ্ছে না।
স্ক্রীন থেকে উধাও হলেন ডক্টর পার্কার, একটা সিগারেট ধরাল পিটার। হঠাৎ করেই মেলিসা জেইনের কথা মনে পড়ল তার। কটেজে ফোন করে দেখল কেউ ধরে না। তাহলে মনে হয় ড্রাইভার তাকে ইতোমধ্যেই তুলে নিয়েছে। কাজেই স্ত্রী, সিনথিয়ার নাম্বারে ডায়াল করল পিটার।
গোল্লায় যাও তুমি, পিটার। এটা কোনো আচরণ করলে মেয়ের সাথে! ঘুমজড়িত কণ্ঠে বলল সিনথিয়া। বেচারি কতদিন ধরে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছিল।
জানি। কিন্তু কি করব।
এদিকে জর্জ আর আমি ভেবেছিলাম জর্জ, অর্থাৎ, সিনথিয়ার নতুন স্বামী ছিল একজন বিরাট রাজনৈতিক নেতা। অবশ্য, পিটার ওকে অপছন্দ করে না। ভদ্রলোক মেলিসার সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করে।
চাকরির কারণে এই ত্যাগ, আর কিছু না, হালকা স্বরে বলে পিটার।
অনেকবার শুনেছি এই কথা, আর শুনতে ভালো লাগে না। এই শুরু হলো পিটার ভাবে। এই কারণেই ওদের বিয়েটা টিকেনি।
দেখ সিনথিয়া-মেলিসা তোমার ওখানেই আসছে
স্ক্রীনে ডক্টর পার্কারের ছবি ফুটে উঠল। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল পিটার। পরে কথা বলব, বলে ফোনের লাইন কেটে দিল সে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাডারে অজ্ঞাত পরিচয় একটা প্লেন দেখা গেছে, ওদের এয়ারস্পেসের দিকে এগোচ্ছে, পিটারকে বললেন ডক্টর পার্কার। স্পীড আর পজিশন দেখে মনে হয় জিরো-সেভেন-জিরো হতে পারে। বাধা দেয়ার জন্যে একঝাক মিরেজ আকাশে তুলেছে ওরা। আমি ইতোমধ্যে ধরে নিচ্ছি প্লেন নিখোঁজ হওয়ার পিছনে সন্ত্রাসবাদীদের হাত আছে–কাজেই এই মুহূর্তে কন্ডিশন ব্রাভো ঘোষণা করছি, ইফ ইউ প্লিজ, পিটার।
রওনা হলাম আমরা, ডক্টর পার্কার।
ডেস্কের কিনারা থেকে হাঁটু নামিয়ে সটান দাঁড়িয়ে পড়ল কলিন নোবলস, দু সারি দাঁতের ফাঁকে এখনো আটকে রয়েছে চুরুটটা।
.
টার্গেট সচল এবং দৃশ্যমান-লিডিং মিরেজ এফ. আই. ইন্টারসেপটরের পাইলট বোতাম টিপে তার ফ্লাইট কমপিউটার চালু করল, সাথে সাথে জ্বলে উঠল লাল অক্ষরগুলো, অ্যাটাক। মিরেজের সবগুলো অস্ত্র-মিসাইল আর কামান-লোড করা অবস্থায় রয়েছে। কমপিউটার ইন্টারসেপটের সময় নির্ধারণ করে দিল-তেত্রিশ সেকেন্ড। দুশ দশ ডিগ্রী কোর্স ধরে এগোচ্ছে টার্গেট, গ্রাউন্ড স্পীড চারশ তিরাশি নট।
পাইলটের সামনে ভোরের প্রথম আলো নাটকীয় প্রদর্শনীর আদলে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। গোটা আকাশ জুড়ে ঝুলে আছে রুপালি আর গোলাপি মেঘ, দিগন্তরেখার নিচে অদৃশ্য সূর্য তার সোনালি আলোর বিশালকায় ফলা হিমবাহ আকৃতির মেঘমালার ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে দূরদূরান্তে। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কাঁধের সাথে আটকানো স্ট্র্যাপে টান পড়ল, দস্তানা পরা হাত দিয়ে হেলমেটের পোলারয়েড ভাইজর তুলে নিল পাইলট। চোখ কুঁচকে তাকাল সে, আবার একবার দেখে নিল টার্গেটকে।