সে গল্পটা তুমি খুব ভালোই জানো, কম হলেও শতবার তোমাকে তা বলেছি, নিজ কাজের প্রশংসা নিজে না করার বিনীত ভান করল টাইটা। আমাকে তা আবার বল, নেফার আদেশ করল।
টাইটা একটা পাথরের উপর এসে বসল, আর নেফার আনন্দিত হয়ে ভালোভাবে গল্পটা শোনার জন্যে তার পায়ের কাছটায় আসন নিল, যতোক্ষণ না সৈন্যবাহিনী ঘণ্টা বাজিয়ে সকলকে ফিরে যাওয়ার সংকেত দিল। ঘণ্টার শব্দ প্রতিধ্বনি তুলে কালো উঁচু পাহাড় শৃঙ্গের আড়ালে হারিয়ে গেল। ফারাও আমাদের ফিরে যাবার নির্দেশ দিচ্ছেন। টাইটা বলল। সবাই দাঁড়িয়ে ফিরতি পথে হাঁটা শুরু করে।
দেয়ালের বাইরে তখন সবাই ব্যস্ত, হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে; সৈন্যবাহিনী বালিয়াড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাত্রার পূর্বে পানির মশকগুলো পুনরায় ভরা হচ্ছিল এবং সৈন্যরা তাদের রথ, ঘোড়া ও অন্যান্য সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা শেষবারের জন্যে পরখ করে নিচ্ছে।
তোরণ দিয়ে যখন তারা দুজন বের হয়ে এল, ফারাও ট্যামোস লোকজনের মাথার উপর দিয়ে তাদের দিকে তাকালেন এবং মাথা নেড়ে মৃদু ইশারায় টাইটাকে পাশে এসে দাঁড়াতে বললেন। যতো দূর পর্যন্ত সেনাধ্যক্ষরা তাদের পদধ্বনি শুনতে না পায়, ততো দূর তারা একত্রে এগিয়ে গেলেন। লর্ড নাজা তাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য এগোল। টাইটা ফারাওকে ফিসফিস্ করে একটা কিছু বলল, তারপরই ট্যামোস ঘুরে নাজাকে কঠোর কথা বলে ফেরত পাঠালেন। আহত লর্ড লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল এবং টাইটার দিকে যুদ্ধ ক্ষেত্রের শরের ন্যায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
তুমি নাজার বিরক্তের কারণ হয়েছে, একদিন হয়তো তোমাকে রক্ষা করতে আমি থাকবো না, ফারাও সর্তকবাণী উচ্চারণ করলেন।
কাউকেই আমাদের বিশ্বাস করা উচিত নয়, টাইটা আশঙ্কা প্রকাশ করল। যততক্ষণ না আমরা আপনার প্রাসাদের চারপাশের পিলারগুলোতে পেঁচিয়ে থাকা ষড়যন্ত্রকারী সার্পসমূহের মাথা কাটতে পারছি। আর যততদিন না আপনি উত্তরের এই যাত্রা শেষ করে ফিরছেন ততোদিন আমরা দুজন ছাড়া কেউ জানবে না আমি রাজপুত্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু নাজা! ফারাও অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে হাসলেন! নাজা তার একজন ভাইয়ের মতো। তারা এক সাথে রেড রোড দৌড়িয়েছে।
এমনকি নাজাও। টাইটা আর কিছু বলল না। শেষ পর্যন্ত তার সন্দেহ নিশ্চিত হতে চলেছে। কিন্তু তার হাতে যথেষ্ট প্রমাণ নেই যে সে ফারাওকে তা বিশ্বাস করাতে পারে।
রাজপুত্র কি জানে কেন তুমি মরুভূমির মধ্য দিয়ে এতো দ্রুত চলছো? ফারাও জিজ্ঞেস করলেন।
সে শুধু জানে আমরা তার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে অজানার উদ্দেশ্যে চলেছি, তার গড বার্ড বা প্রভু পতঙ্গটা ধরতে যাচ্ছি।
বেশ, টাইটা। ফারাও মাথা নাড়লেন। সর্বদাই তুমি গোপনীয়তা পছন্দ করো, তবে তুমি সত্য। আর কিছু বলার নেই, যা বলার বলেছি। এখন যাও, হুরাস তোমার আর নেফারের উপর তার আশীর্বাদের ডানা মেলে রাখুক।
নিজের পিছন দিকটা লক্ষ্য রাখবেন, মহানুভব! কেননা শত্রু এখন কেবল আপনার সম্মুখেই শুধু নয়, পিছনেও অবস্থান করছে।
ফারাও ম্যাগোসের হাতটা টেনে নিলেন ও জোরে চাপ দিলেন। তার আঙুলের নিচের বাহুটি সরু কিন্তু একাসিয়া গাছের শুকানো ডালের ন্যায় শক্ত। তারপর তিনি নেফারের কাছে ফিরে গেলেন, সে রাজকীয় রথের চাকার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। আহত দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে ছিল, এখনও আশা করছে হয়তো লর্ড তার নিষ্ঠুর আদেশ ফিরিয়ে নেবেন।
মহামান্য! আমার চাইতেও কম বয়সী অনেক লোকওতো এই সৈন্য বাহিনীতে আছে। রাজকুমার তার পিতাকে মানানোর শেষ চেষ্টা করল যে রথ বহরের সাথে তার যাওয়া উচিত। ফারাও জানেন ছেলেটি নিঃসন্দেহে ঠিকই বলছে। ম্যারন, বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ক্ৰাতাস এর নাতি, যে তার চেয়ে তিন দিনের ছোট সেও আজ তার বাবার সাথে পিছনের কোন রথে লেন্স-বাহক হিসেবে যাচ্ছে। পিতা, কবে আপনি আমাকে আপনার সাথে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দিবেন?
সম্ভবত, তুমি যখন রেড রোড দৌড়াতে পারবে। এমন কি তখন আমিও আপত্তি জানাব না।
এটা একটা অস্বাভাবিক প্রতিজ্ঞা এবং তারা দুজনেই জানে যে রেড রোড দৌড়ানন ঘোড়সওয়ার ও অস্ত্র চালনার মধ্যে সবচাইতে কষ্ট সাধ্য পরীক্ষা, যা শুধুমাত্র হাতে গোনা কয়জন যোদ্ধার পক্ষে সম্ভব। এটা একটা অগ্নি পরীক্ষা যা একজন যুবককে নিঃশেষিত করে ফেলে, এমনকি কেউ কেউ মারাও যায় এবং তা অনেকটা নিজেকে বলি দেয়ার মতোই। নেফার এখনও সে দিন থেকে বহু দূরে।
এবার ফারাও এর নিষেধাজ্ঞা নরম হল এবং তার সৈন্য বাহিনীর সামনে যতোটুকু স্নেহ প্রকাশ করা যায় ততটুকু দিয়ে তিনি তার ছেলেকে বাহু বন্ধ করে জড়িয়ে ধরলেন। এখন আমার আদেশ হচ্ছে তুমি টাইটার সাথে এই মরুভূমির মধ্য দিয়ে তোমার গড বার্ড ধরতে যাবে এবং প্রমাণ করবে যে রাজরক্ত ও অধিকার দুটোই তোমার দ্বৈত মুকুট ধারণের ক্ষেত্রে রয়েছে।
*
গালালার ভগ্ন দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে নেফার ও বৃদ্ধলোকটি রথের দীর্ঘ সারিকে তাদের অতিক্রম করতে দেখল। এগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন স্বয়ং ফারাও নিজে। লাগাম কব্জিতে পেঁচিয়ে, পিছনে হেলে তিনি টান দিলেন। তার বক্ষ নগ্ন, পেশীবহুল পায়ের চারপাশে লিলেন স্কার্ট ছড়িয়ে আছে, মাথায় শোভা পাচ্ছে নীল যুদ্ধ মুকুট, সব কিছু মিলিয়ে তাকে মনে হচ্ছিল লম্বা–একজন দেবতার মতন।