তারা নিরবতার মধ্যে বসে রইল এবং বাইরের লোক হেজারেটের আর্তনাদ শুনছিল। তারপর হঠাৎ নিরবতা নামল এবং তারা নিজেদের শক্ত করল। তারা একটা উচ্চ কর্ণবিদীর্ণ চিৎকার শুনল এবং হঠাৎ করেই তা থেমে গেল যেমন করে শুরু হয়েছিল।
দুই হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকল মিনটাকা এবং নেফার শয়তানের বিরুদ্ধে চিহ্ন আঁকল। অন্যেরা বসে রইল বিষণ্ণ হয়ে।
একটু পরে দরজার পর্দা ভাগ হয়ে গেল এবং ম্যারন তাঁবুতে প্রবেশ করল। তার ডান হাতে খোলা তলোয়ার এবং অন্য হাতে একটা ভয়ংকর বস্তু ধরা। মহামান্য, সে বলল, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
*
মিনটাকার পুরোপুরি সুস্থ হতে এবং অ্যাভারিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে তাদের আরও পাঁচ দিন সময় লেগে গেল। টাইটা ও নেফার মিনটাকাকে জোর করে একটা পালকিতে উঠাল যাতে তার কষ্ট কম হয়। তারা ধীরে এগিয়ে চলল এবং পনের দিন পর তারা পাহাড়ের ঢালে পৌঁছে নীলের বিশাল সবুজ উপত্যকায় তাকাল। নেফার মিনটাকাকে পালকি থেকে নামাতে সাহায্য করল এবং এক সাথে একটু পথ হাঁটল। কিন্তু তারা সেখানে বেশিক্ষণ কাটাল না। যখন নেফার উঠে দাঁড়াল এবং চোখের উপর ছায়া দিল দূরে তাকাতে তখন মিনটাকা জিজ্ঞেস করল
ওটা কি, আমার ভালোবাসা?
আমাদের দর্শনার্থী। নেফার জবাবে বলল। এই দর্শনার্থীরা সব সময় সাদরে গৃহীত।
মিনটাকা হাসল যখন ঐ দুই জন অসমাঞ্জস্য অবয়বের মানুষ তাদের কাছাকাছি এল: টাইটা এবং ম্যারন।
কিন্তু এটা কেমন অদ্ভুত পোশাক? তারা দুজন সাধারণ পোশাক এবং স্যান্ডেল পরিহিত এবং যেন তারা তীর্থ যাত্রার জন্যে প্রস্তুত।
আমরা বিদায় জানাতে এসেছি এবং আপনার কাছ থেকে বিদায় নিতে। টাইটা ব্যাখ্যা করল।
আমাকে এখনই ছেড়ে যাবেন না। নেফারকে বিহ্বল দেখাল। তুমি কি আমার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিবে না?
তুমি ইশমাইলিয়ার এই ভূমিতে রাজ মুকুট পেয়েছে। টাইটা তাকে শান্তভাবে বলল।
আমাদের বিয়েতে? মিনটাকা চিৎকার করে উঠল। তোমাকে অবশ্যই আমাদের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে হবে।
অনেক আগে থেকেই তোমরা বিবাহিত। টাইটা হাসল। সম্ভবত তোমাদের জন্মর দিন থেকেই। কারণ প্রভু তোমাদের একজনকে অন্যজনের জন্য তৈরি করেছেন।
কিন্তু তুমি, আমার রেড রোড ভ্রাতা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু! নেফার ম্যারনের দিকে ঘুরল, তোমার কী খবর?
এখানে আমার জন্য আর কিছু বাকি নেই যখন মেরিকারাই চলে গেল। আমাকে অবশ্যই টাইটার সঙ্গে যেতে হবে।
নেফার আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেল না, বরং অধিক শব্দ এ সময়টাকে শুধু আরও বিষণ্ণ করে তুলবে। সে এমনকি জিজ্ঞেসও করল না তারা কোথায় যাচ্ছে। সম্ভবত তারা নিজেরাও জানে না।
সে তাদেরকে আলিঙ্গন করল ও চুমু খেল, তারপর সে ও মিনটাকা দাঁড়িয়ে রইল এবং তাদের চলে যাওয়া দেখল। তাদের আকৃতি ধীরে ধীরে মরুর তেপান্তরে বিলীন হয়ে গেল এবং তারা অদ্ভুত রকম একটি গভীর ব্যথা অনুভব করল তাদের জন্য।
তারা সত্যি চলে যায় নি। মিনটাকা ফিসফিস করল।
না। নেফার সম্মত হলো। তারা সব সময় আমাদের সাথে থাকবে।
*
প্রধান যাজিকা ও তার পঞ্চাশ জন সহকারীসহ রাজকন্যা মিনটাকা অ্যাপিপি হাথোরের মন্দিরে এল ফারাও নেফার সেটির সাথে তার বিয়ের জন্যে।
তারা দুজন থেবস্-এর প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল, যেখান থেকে বন্যার বিশাল বিস্তৃত ও প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এ সময়টা দুই মিশরের সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর জন্যে সবচেয়ে সুখের।
মিনটাকা অনেক আগেই তার আঘাত ও কষ্ট থেকে সেরে উঠেছে। তার সৌন্দর্য পূর্ণ বিকশিত এবং এই আনন্দঘন মুহূর্তে মনে হল তা আরও দশগুণ বেড়ে গেছে।
মনে হলো সমগ্র মিশর তাদের বিয়ের সাক্ষী হতে এসেছে। লোকজন নদীর দুই পারে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং যতদূর চোখ যায় শুধু লোক আর লোক। যখন নব দম্পতি আলিঙ্গন করল এবং নীলের পানির পাত্রগুলো ভাঙল তখন যে চিৎকার আকাশ পর্যন্ত পৌঁছালো তা সম্ভবত প্রভুদেরকেও বিস্মিত করে দিল। তারপর নেফার সেটি তার নতুন রাণীকে হাতে ধরে নিয়ে গেল এবং তার সৌন্দর্য জনগণকে দেখাল। তারা হাঁটুগেড়ে বসে কান্না করল এবং চিৎকার করে তাদের আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ করল।
হঠাৎ একটা নিরবতা এ বিশাল ভূমির উপর নেমে এল এবং ধীরে ধীরে সকল চোখ উপরের দিকে ঘুরে গেল, প্রাসাদের উপরের আকাশে একটা ক্ষুদ্র বিন্দু দেখা গেল তখন। নিরবতার মাঝে একটা রাজকীয় বাজপাখির তীক্ষ্ণ নিঃসঙ্গ চিৎকার শোনা গেল এবং পাখিটা উঁচু নীল আকাশ থেকে নেমে আসছে। শেষে ঠিক যখন মনে হলো পাখিটা ফারাও-এর উপর এসে পরবে তখন বাজ পাখিটা তার ডানা প্রসারিত করল এবং ফারাও এর লম্বা দেহের উপর চক্কর দিল। নেফার তার ডান হাত তুলতেই চমৎকার পাখিটা তার হাতের মুঠোয় এসে নামল।
যখন তারা অলৌকিক ঘটনাটাকে অভিনন্দন জানালো তখন দশ হাজার কণ্ঠ একত্রে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু নেফারের চোখ তখন খাঁটি সোনার চিকন ফাঁদের উপর নিবদ্ধ হলো যা পাখিটার ডান পায়ে বাঁধা ছিল বিশাল বাঁকানো নখরের উপরে। দামি ধাতুতে একটি প্রতীক আঁকা যা নেফারের হৃদৃম্পন্দন বাড়িয়ে দিল যখন নেফার তা চিনতে পারল।
রাজকীয় সীলমোহর! সে ফিসফিস করল। এটা কোন বন্য পাখি নয়। এটা নেফারটেম। আমার পিতার বাজ পাখি। এ কারণে এটি প্রায়ই আসত আমি যখন বড় কোন বিপদে থাকতাম আমাকে সতর্ক করতে ও পথ দেখাতে। আমার পিতার আত্মা সব সময় আমার পাশে ছিল।