মাথা নাড়লেন রালেই তাবাকা। কোর্টনি পরিবারকে চেনেন, তাই এই মূল্যায়নের কোনো খুঁত চোখে পড়ল না। “লাল গোলাপের মায়ের সাথে একবার আমার দেখা হয়েছিল। কিন্তু ভদ্রমহিলা রাজনৈতিকভাবে আমাদের পক্ষেই ছিলেন।” বিড়বিড় করে জানাতেই মাথা নাড়ল রামোন।
“ঠিক তাই, সাত বছর আগে স্ত্রী তারা-র সাথে ডির্ভোস হয়ে গেছে শাসা কোর্টনি’র। ভদ্রমহিলা তো আপনার আংকেল মোজেস গামা’র সহযোগী ছিলেন; হোয়াইট রেসিস্ট পার্লামেন্টে বোমা হামলার সময়ে। যার কারণে শেষ পর্যন্ত কারাবাস আর হত্যার স্বীকার হলেন গামা। এছাড়াও তারা ছিলেন গামা’র মিসট্রেস আর তার বাস্টার্ড ছেলেটার মা। বোমা পরিকল্পনায় ব্যর্থতার পর গামার ছেলেকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে গেছেন তারা। লন্ডনে থেকে এখন তো বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এ এন সি’র সদস্য হওয়া সত্ত্বেও জুনিয়র কোন ব্যাভক আর রুটিন অ্যাসাইনমেন্টের জন্য দক্ষ কিংবা মানসিকভাবে যোগ্য নন। লন্ডনে এ এন সি পার্সোনেলদের জন্য সেফ হাউজ, মাঝে মাঝে কুরিয়ার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানকে র্যালি আর প্রতিবাদ সভায় সাহায্য করা এই তাঁর কাজ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুতুপূর্ণ হল লাল গোলাপের উপর তার প্রভাব।”
“হ্যাঁ।” অধৈর্যভাবে একমত হলেন রালেই। “আমি এসব কিছুই জানি। বিশেষ করে আমার আংকেলের সাথে তার সম্পর্ক। কিন্তু মেয়ের উপর ভদ্রমহিলার আদতেই কি প্রভাব আছে? মনে তো হয় বাবা কেই মেয়েটা বেশি ভালবাসে।”
আবারো মাথা নাড়ল রামোন। “অবস্থা এখন সেরকমই। কিন্তু মেয়েটার মা ছাড়াও পরিবারে আরো একজন আছেন যিনি প্রগতিবাদী নীতিতে বিশ্বাসী : ভাই মাইকেল, ওর উপর যার বেশ ভালো প্রভাব আছে। এছাড়া আরেকটা পথ আছে ওর মত ঘুরিয়ে নেবার।”
“কী সেটা?” জানতে চাইলেন তাবাকা।
“এগুলোর একটা হল হানি ট্র্যাপ মোহমোয়তার ফাঁদে ফেলা।” এবারে উত্তর দিলেন সিসেরো। “দ্য মারকুইস ক্ষমা চাইছি-এক্ষেত্রে কাজ শুরু করে দিয়েছে কমরেড মাচাদো। তার বহু গুণের একটি হল এই হানি ট্র্যাপ।”
“প্রগ্রেস সম্পর্কে নিয়মিত আমাকে জানাবেন।” নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন রালেই। বাকি দুজনের কেউ কোনো উত্তর দিল না। রালেই তাবাকা এ এন সি’র এক্সিকিউটিভ কিংবা কম্যুনিস্ট পাটির সদস্য হলেও বাকি দুজনের মতো রাশান কেজিবি’র অফিসার নয়।
অন্যদিকে জো সিসেরো কেজিবি’র একজন জ্যেষ্ঠ অফিসার। যদিও কর্নেল থেকে কর্নেল জেনারেল পদোন্নতি নিশ্চিত হয়েছে মাত্র মাসখানেক আগে। সিসেরো’র ধারণা সারা জীবন ব্যাপী ডিপটিমেন্টে বিশ্বস্তভাবে কাজ করার জন্য একেবারে শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এ পদোন্নতি। যেন অবসর জীবনে মোটা অংকের পেনশন ভোগ করতে পারেন।
রামোন মাচাদো’র বিশ্বস্ততার পথ আরো সোজা-সাপ্টা। তার জন্যে আর পারিবারিক পদবী স্প্যানিশ হলেও মা ছিলেন একজন কিউবান নারী। কিউবার হাভানার কাছে মাচাদো এস্টেটে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয় রামোনের বাবার সাথে।
স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময়ে মারকুইস জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর ন্যাশনালিস্টের বিরোধিতা করেছেন। পারিবারিক পটভূমি আর উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ধন-সম্পদ সত্ত্বেও রামোনের পিতা ছিলেন রিপাবলিকান সেনাবাহিনীতে। যোগ দিয়ে মাদ্রিদ অবরোধের সময়ে এক ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দেয়ার সময় ভদ্রলোক গুরুতরভাবে আহতও হয়েছিলেন। যুদ্ধের পর ফ্রাঙ্কো শাসনামলের নিগ্রহ আর বঞ্চনা সইতে না পেরে ক্যারিবীয় দ্বীপে পুত্রসহ চলে যাবার মনস্থির করেন- রামোনের মা। কিন্তু ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো’র শাসনামলে অতিবাহিত জীবনের চেয়ে কোনো অংশে শান্তি ছিল না বাতিস্তার এক নায়কতন্ত্রে।
রামোনের মা ছিলেন তরুণ বামপন্থী ছাত্র নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর আন্টি ও তার সমর্থক। তাই তিনিও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন বাতিস্তা বিরোধী আন্দোলনে। ছোট্ট রামোনও নিজের রাজনৈতিক দীক্ষার পাঠ প্রথম পেয়েছে তার মা ও তার জননন্দিত বোন-পো থেকে।
১৯৫৩ সালের ছাব্বিশে জুলাই সান্তিয়াগো ব্যারাকে সেই দুঃসাহসিক কিন্তু ব্যর্থ আক্রমণের কারণে কারাবন্দি হন ফিদেল ক্যাস্ট্রো। অন্যান্য বিদ্রোহীর সাথে রামোনের পিতা-মাতাকেও গ্রেফতার করা হয়।
হাভানা’তে পুলিশ সেলে ইন্টেরোগেশনের সময় মৃত্যুবরণ করেন রামোনের মা। একই কারাগারে কয়েক সপ্তাহ পরেই অযত্ন আর ভগ্ন হৃদয়ে মারা যান রামোনের বাবা। পারিবারিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে রামোন কেবল মারকুইস পদবীটাই পেল, ভাগ্য কিংবা সম্পত্তি নয়। এসব কিছুই ঘটে যখন তার বয়স ছিল চৌদ্দ। এরপর ক্যাস্ট্রো পরিবারেই বেড়ে উঠে রামোন।
সাধারণ ক্ষমা পেয়ে জেল থেকে মুক্ত হয়ে রামোনকে নিয়ে মেক্সিকো চলে যান ফিদেল ক্যাস্ট্রো। ষোল বছর বয়সে বিদেশে কিউবার লিবারেশন আর্মির প্রথম দিককার কর্মী হিসেবে নিয়োগ পায় রামোন।
মেক্সিকোতে থাকতেই ছেলেটা প্রথম শেখে যে কিভাবে নিজের অসাধারণ সৌন্দর্যকে কাজে লাগাতে হয়। নারীদেরকে আকর্ষণ করার এক সহজাত ক্ষমতা আছে তার। সতের বছর বয়সে সঙ্গী-সাথীরা তার নাম রাখে এল জোরো ডোরাডো, “দ্য গোল্ডেন ফক্স।” বিশ্ব প্রেমিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার খ্যাতি।