আর এসব কিছুর বহন কার্যে উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে লন্ডন পর্যন্ত কোর্টনি শিপিং লাইন চালু রেখেছে সাপ্তাহিক রেফ্রিজারেটেড নৌ-যান চলাচল করে আটলান্টিক রুটে।
.. আর আজ সকালেই ক্লিনারস এর কাছ থেকে তোমার ডিনার জ্যাকেট নিয়ে এসেছি। এছাড়াও পিকাডেলি আর্কেডে আরো তিনটা ড্রেস শার্টের অর্ডার দিয়েছি সাথে ডজনখানেক নতুন পট্টি।”
বাবার কোলে বসেই চোখের উপর পট্টিটা ঠিক করে দিল বেলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইটালি’র বিপক্ষে আবিসিনিয়াতে হারিকেন চালানোর সময় বাম চোখ হারিয়েছেন শাসা। আর এখন তো চোখের উপর কালো সিল্কের পট্টিটা এক ধরনের জলদস্যুর ভাব এনে দিয়েছে চেহারাতে।
নিশ্চিন্ত হলেন শাসা। প্রথম বার বেলা’কে যেবার নিজের সাথে লন্ডনে আসার কথা জানিয়েছিলেন মেয়েটার বয়স তখন মাত্র একুশ। এত কম বয়সী কারো উপর অ্যামব্যাসি’র ঘরকন্নার ভার দেবার আগে বিস্তর ভেবেছেনও। তবে এখন আর চিন্তার কিছু নেই। মোটের উপর দাদীমা’র হাতে শিক্ষা পেয়েছে বেলা। এর সাথে আবার শেফু, বাটলারসহ স্টাফদের অর্ধেকই এসেছে কেপ থেকে। তাই সুপ্রশিক্ষিত দল নিয়েই জীবন শুরু হয়েছে এখানে।
“ডিনারের পর আধা ঘণ্টা ধরে যখন তোমার ইসরায়েলি বন্ধুকে নিয়ে অ্যাটম বোমা বানাবার প্ল্যান করবে, তখন থাকব তোমার সাথে?”
“বেলা!” তাড়াতাড়ি প্রাকটি করে উঠলেন শাসা, “তুমি জানো আমি এরকম মন্তব্য পছন্দ করি না।”
“মজা করেছি, ড্যাডি। কেউ তো আমাদের কথা শুনছে না।”
“যতই একা থাকো কিংবা মজা করো, বেলা।” জোরে জোরে মাথা নাড়লেন শাসা। সত্যির খুব কাছে চলে গেছে মেয়েটা। মনটা তাই খচখচ করছে। ইসরায়েলি মিলিটারি অ্যাটাশে আর শাসা প্রায় বছরখানেক ধরে এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। আর এখন তো একেবারে মজার ঊর্ধ্বে চলে গেছে এ সম্পর্ক।
গালে কিস্ করতেই নরম হয়ে গেলেন শাসা। “যাই, স্নান করে নেই।” কোল থেকে নেমে দাঁড়াল বেলা। “সাড়ে আটটায় তোমার নিমন্ত্রণ। আমি এসে তোমার টাই বেঁধে দিব।” ইসাবেলা’র ধারণা বাবা এই কাজটা পারে না, অথচ তার আগে চল্লিশ বছর ধরে নিজেই টাই বেঁধেছেন শাসা। এবারে মেয়ের পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, “মাদমোয়াডেলে তোমার স্কার্ট যদি আরেকটু খাটো হয় তাহলে তো খবর হয়ে যাবে।”
“আহা। আঠারো শতকের বাবাদের মতো কথা বলো না তো পাপা।” দরজার দিকে এগিয়ে গেল বেলা। দরজা বন্ধ হতেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন শাসা।
“ফিউজ বিহীন ডিনামাইট নিয়ে বাস করছি যেন।” আপন মনেই বিড়বিড় করে উঠলেন, “যাই হোক হয়তো ভালই হচ্ছে যে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”
সেপ্টেম্বর মাসে, শাসা’র তিন বছরে কূটনৈতিক দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে। আবারো দাদি সেনটেইন কোর্টনি ম্যালকম এর নিয়ম নীতির ঘেরাটোপে ফিরে যাবে বেলা। এ ব্যাপারে নিজের সফলতা যে বিফলে গিয়েছে তা ভালই বুঝতে পেরেছেন শাসা; তাই খুশি মনেই দায়িত্ব হস্তান্তরে কোন আপত্তি নেই।
কেপ টাউনে ফেরার কথা ভাবতে ভাবতেই ডেস্কের কাহজে চোখ ফেরালেন শাসা। লন্ডন অ্যামব্যাসিতে কাটানো বছরগুলো তার জন্য রাজনৈতিক প্রায়শ্চিত্তের মত। ১৯৬৬ সালে গুপ্তঘাতকের হাতে প্রধানমন্ত্রী হেনড্রিক ভারউড এর মৃত্যুর পর বেশ বড় একটা ভুল করে বসেন শাসা আর ভুল লোকটাকে সাহায্য করেছেন এই সর্বোচ্চ পদ পাবার জন্য। এই ভুলের মাশুলস্বরূপ জন ভর্সটার প্রধানমন্ত্রী হবার সাথে সাথে শাসা’কে ছুঁড়ে ফেলা হয় রাজনৈতিক অচলাবস্থায়। কিন্তু অতীতের অনেক সময়ের মতো এবারেও বিপর্যয়কে বিজয়ে পরিণত করেছেন তিনি।
নিজের সমস্ত মেধা আর ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা, নিজের উপস্থিতি আর সৌন্দর্য, প্ররোচিত করার ক্ষমতা প্রভৃতির মাধ্যমে মাতৃভূমিকে পৃথিবীর রোষানল থেকে বাঁচাতে পেরেছেন। বিশেষ করে ব্রিটেনের লেবার গর্ভনমেন্ট আর তার কমনওয়েলথ এর হাত থেকে; যেটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বেশির ভাগেরই প্রধান কোনো কৃষাঙ্গ কিংবা এশীয়। এসব অর্জনকেই স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন জন ভরসটার। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়ার আগে, আর্মসকোর এর সাথে বেশ জড়িয়ে পড়েছিলেন শাসা আর ভরসটার তাই গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর আর্মসকোরের চেয়ারম্যানের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন তাকে।
সহজভাবে বলতে গেলে আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগ হলো আর্মসকোর। আর্মস বয়কটের বিরুদ্ধে দেশটির উত্তর হলো এ প্রতিষ্ঠান। যা শুরু করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডুওয়াইট আইজেনহাওয়ার আর এখন তা দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্য দেশগুলোর মাধ্যমেও যারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রতিরক্ষাহীন, নাজুক করে ফেলতে চায়। আমর্সকোর অস্ত্র উৎপাদন ও উন্নয়ন কোম্পানি একক ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা পুরো দেশের প্রতিরক্ষা শিল্প হিসেবে কাজ করছে।
যখন বিভিন্ন কোম্পানি মিলে সুদৃঢ় হয়ে গেছে কোর্টনি ফিনানসিয়াল আর বিজনেস এম্পায়ার, তখন এহেন সিদ্ধান্ত বেশ উত্তেজনাকর আর বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন বছরের এই কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনকালে ম্যানেজমেন্টের অনেকটুকুই ধীরে ধীরে ছেলে গ্যারি কোর্টনির হাতে তুলে দিয়েছেন শাসা। একই সাথে কোর্টনি এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান হবার সময়ে শাসার বয়সও বেশি ছিল না।