ডান হাত দিয়ে মেয়েটার ছোট্ট স্কার্ট তুলে ফেলেছে কোমর অব্দি। মোটর সাইকেলের কালি লাগানো লোমশ হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটার কোমরের প্যান্টিতে। সন্ত্রস্ত মেয়েটা মুক্ত হাত দিয়ে লোকটাকে আঁচড় কাটতে চাইলেও কাঁধ দিয়ে ঠেকিয়ে বর্বরের মতো হাসছে লোকটা।
সামনে এগিয়ে এনজেলস সৈন্যটার কাঁধে হাত রাখল সে। সাথে সাথে যেন জমে গেল লোকটা। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। জ্বলে উঠল চোখ জোড়া। মেয়েটাকে এত জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল যে ট্রাকের মাঝখানে ঘাসের উপর টলতে টলতে পড়ে গেল বেচারি। বেল্টের সাথে ঝুলতে থাকা লাঠির দিকে হাত বাড়াল এনজেলস্।
এগিয়ে এসে লোকটার স্টিলের হেলমেটের ঠিক নিচে কানের উপর হাত রাখল সে। দুই আঙুল দিয়ে চাপ দিতেই শক্ত হয়ে গেল এনজেল। সমস্ত পেশি অসাড় হয়ে গলা দিয়ে ঘরঘর শব্দ বের হতে লাগল। পুরো শরীর দুলতে দুলতে মাটির উপর পড়ে মৃগী রোগীর মতো খিচুনি শুরু হয়ে গেল। হাঁটু গেড়ে বসে নিজের বেশ-বাশ ঠিক করে নিল মেয়েটা। আর নগ্ন ভয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল সবকিছু। লোকটাকে ডিঙিয়ে মেয়েটার কাছে এসে ওকে দাঁড়াতে সাহায্য করল সে।
“এসো” নরম সুরে জানালো,
নয়তো ওর বন্ধুরা এসে পড়বে।”
হাত ধরে দ্রুত মেয়েটাকে নিয়ে চলল সে আর শিশুর মতই ভরসায় এগোতে লাগল মেয়েটাও।
পার্ক করে রাখা ট্রাকগুলোর পেছনে রডোডেনড্রন ঝোঁপের মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু একটা গলি। এবারে পথে নেমে দমবন্ধের মতো করে মেয়েটা জানতে চাইল, “তুমি তাকে মেরে ফেলেছ?”
“না।” সে একবারের জন্য তাকালো না পর্যন্ত, “পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার সিধে হয়ে যাবে।
“তুমি তাকে একেবারে চ্যাপ্টা করে দিয়েছ। কিভাবে করলে? আঘাতও তো করোনি?”
উত্তর না দিয়ে মোড় ঘুরে থেমে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সে বলল,
“তুমি ঠিক আছে?” কোনো কথা না বলে মাথা ঝাঁকাল মেয়েটা।
এখনো হাত ধরে আছে দু’জনে। মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখে নিল সে। জানে চব্বিশ বছর বয়সী মেয়েটা এইমাত্র ভয়ংকর এক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে এসেছে অথচ গাঢ় নীল চোখের দৃষ্টিতে তার কোনো ছায়াই নেই। নেই কোনো কান্না কিংবা যন্ত্রণা, এমনকি গোলাপি ঠোঁট জোড়া একটুও কাঁপছে না, হাত দু’টোও নরম আর উষ্ণ।
মেয়েটার উপর লেখা মনোবিজ্ঞানীর রিপোর্ট যেটা সে পড়ে এসেছে এ পর্যন্ত খাপে খাপে মিলে গেছে। এরই মাঝে নিজেকে সামলে নিয়েছে আত্মবিশ্বাসী মেয়েটা। এরপরই আস্তে আস্তে রং জমল মেয়েটার গালে। লম্বা গলার নিচে শ্বাস হয়ে উঠল সন্দিহান।
“তোমার নাম কি?” জানতে চাইল মেয়েটা; গভীরতা নিয়ে তাকাল তার দিকে যা অন্য নারীদের চোখেও দেখেছে।
“রামোন।” উত্তরে জানাল সে।
“রামোন” নরম সুরে মেয়েটা ওর নাম বলতেই মনে হল হা ঈশ্বর, ও কত সুন্দর!
“রামোন কে?”
“যদি বলি তুমি বিশ্বাস করবে না।” ছেলেটার ইংরেজি ওর মতই নিখুঁত। বিদেশি হলেও কণ্ঠস্বর সুন্দর, গভীর আর সাহসী মুখশ্রীর সাথে পুরোপুরি মানিয়ে গেছে।
“বলে দেখো একবার।” নিজের কণ্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেল মেয়েটা।
“রামোন ডি সান্তিয়াগো ই-মাচাদো।” গানের মতো করে বলে উঠল ছেলেটা। অসম্ভব রোমান্টিক লাগল পুরো ব্যাপারটা। এত সুন্দর নাম আর কণ্ঠ মনে হল আর কখনো শুনেনি সে।
“আমাদের যাওয়া উচিত।” এখনো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে মেয়েটা।
“আমি দৌড়াতে পারি না।”
“তা না করলে একটু পরে দেখবে মোটর সাইকেলে ঝুলে যাবে মাসকটের মত।”
হাসতে হাসতেই নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে থামাল মেয়েটা। “এরকম করো না। আমাকে আর হাসিও না। আমার ব্লাডার খালি করতে হবে। সহ্য করতে পারছি না।”
“আহ তাহলে তুমি সেখানেই যাচ্ছিলে যখন প্রিন্স চার্মিং তোমার সাথে ভালোবাসার খেলা খেলতে এসেছিল।”
“দেখ, সাবধান করে দিচ্ছি।” বহুকষ্টে নিজের হাসি থামাল মেয়েটা।
“পার্কের গেইটের কাছে পাবলিক টয়লেট আছে। এতদূর যেতে পারবে?”
“জানি না।”
“তাহলে বাকি আছে রডোডেনড্রন।”
“না, ধন্যবাদ। আর কোনো শো হবে না আজ।”
“তাহলে চল।” মেয়েটার হাত ধরল রামোন।
আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে চলতে চলতে ঘুরে তাকিয়ে বলল, “তোমার বয়ফ্রেন্ডের রাগ বোধ হয় ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কোনো দেখা নেই।”
“হুম, সেটাই। আমি তো ভেবেছিলাম তোমার সেই কৌশলটা আবার দেখব। আর কতদূর বাকি?”
“এইতো এসে গেছে।” গেইটের কাছে পৌঁছাতেই রামোনের হাত ছেড়ে দিয়ে লাল ইটের ছোট্ট দালানটার দিকে দৌড় দিল মেয়েটা। কিন্তু দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেল।
“আমার নাম ইসাবেলা। ইসাবেলা কোর্টনি। কিন্তু বন্ধুরা ডাকে বেলা। কাঁধের উপর দিয়ে কথা কটা ছুঁড়ে দিয়ে ঢুকে গেল বেলা।
হ্যাঁ, আমি জানি। মৃদুস্বরে বিড়বিড় করে উঠল রামোন।
এতদূর থেকেও কানে আসছে গানের শব্দ; নিচু দিয়ে উড়ে গেল একটা হেলিকপ্টার। কিন্তু এসব কিছুই কোনো গুরুত্ব পেল না। রামোনের কথাই ভাবছে বেলা।
হাত ধুতে গিয়ে আয়নায় তাকিয়ে দেখল নিজেকে। সব চুল এলোমেলো; তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিল। রামোনের চুলগুলো ঘন, কালো আর ঢেউ খেলানো। লম্বা, কিন্তু ততবেশি না। লেপ্টে যাওয়া গোলাপি লিপস্টিক মুছে নিয়ে মুখে আবারো হাত বুলালো। রামোনের মুখখানা বেশ পুরুষালি, নরম কিন্তু শক্তিশালী।
লিপস্টিক লাগিয়ে আয়নার কাছে ঝুঁকে দেখল নিজের চোখ জোড়া। সাদা অংশটুকু এতটাই পরিষ্কার যে নীলচে দেখায়। জানে তার সৌন্দর্যের সেরা অংশ এটাই। কর্নফ্লাওয়ার আর স্যাপায়ারের মাঝামাঝি এই কোর্টনি র। রামোনের চোখ জোড়া সবুজ। প্রথম দেখাতে সেদিকেই চোখ যায়। এই অদ্ভুত সবুজ-সুন্দর কিন্তু; সঠিক উপমা খুঁজে পাচ্ছে না, সুন্দর কিন্তু ভয়ংকর। হেলস্ এনজেলস্ লোকটার কী হয়েছে সে বর্ণনা না জানতে চাইলেও ওই চোখ দুটো দেখলেই বোঝা যায় যে রামোন অসম্ভব ভয়ংকর! ঘাড়ের পিছনে একই সাথে ভয় আর প্রত্যাশার এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলা করে গেল। হয়ত, এই-ই সেই-ই। ওর পাশে সবাইকেই নিষ্প্রাণ লাগছে। হয়তো এতদিন ধরে রামোনকেই খুঁজছিল সে।