এত সব কিছুর ভিড়েও বিচ্ছিন্ন হয়ে একাই দাঁড়িয়ে আছে সে। সমস্ত মনোযোগ দিয়ে দেখছে মেয়েটাকে, অপেক্ষা করছে কিভাবে তার মুহূর্তগুলো অতিক্রম করছে।
আদিম এক মূৰ্ছনায় আপ্লুত হয়ে নাচছে মেয়েটা। অন্যরকম এক সৌন্দর্য তাকে আলাদা করে রেখেছে চারপাশের অন্যদের কাছ থেকে। মাথার উপর চুড়া করে বেঁধে রাখা চুলগুলো রুবির মতো লাল আভা ছড়াচ্ছে সূর্যের আলো পেয়ে। কয়েক গোছা আবার পেচিয়ে নেমে এসেছে ঘাড়ের উপর, আর এর উপর বসানো মুখখানা ঠিক যেন বৃন্তে ফোঁটা টিউলিপ।
মঞ্চের ঠিক নিচেই খানিকাটা জায়গা ঘেরা দিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশেষ অতিথিদের জন্য। এখানেই অন্যান্য স্ত্রী আর ক্যাম্পের লোকদের সাথে ভোলা কাফতান গায়ে নগ্ন পায়ে বসে আছে মেরিয়ান ফেইথফুল। বহুদূরের এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য ঘিরে রেখেছে এই নারীকে। অন্ধ কারো মতই স্বপ্নীল আর দৃষ্টিহীন চোখ, স্থির-ধীর পদক্ষেপ। পায়ের কাছে বসে আছে। ছেলে-মেয়ের দল। আর সবাইকে পাহারা দিচ্ছে হেল’স এনজেলেস এর পদাতিক সৈন্যদল।
মাথায় কালো স্টিলের হেলমেট, ঝুলছে চেইন আর নাৎসি আয়রন ক্রস, রুপার পাতে মোড়া কালো চামড়ার দেহবর্মের নিচ দিয়েও দেখা যাচ্ছে বুকের কোকড়ানো পশম। পায়ে স্টিলের বুট, হাত জুড়ে আঁকি-ঝুঁকি আকা। অসংখ্য ট্যাটু। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানোর ফলে ভঙ্গিতে ফুটে রয়েছে যুদ্ধের ভাব। মুষ্টিবদ্ধ হাতের মুষ্টিতে ধারালো আর চোখা স্টিলের আংটি। উদ্ধত আক্রোশে সবার উপর নজর বুলিয়ে ঝামেলা খুঁজলো সৈন্যের দল। আসলে তা আশাও করল।
ঘণ্টা পার হয়ে গেল; তবুও থামল না গান। কেটে গেল আরো এক ঘণ্টা। গরম হয়ে উঠল চারপাশ। পশুর খাঁচার মতো গন্ধ বের হতে লাগল। দর্শকদের মাঝে কয়েকজন তো এই উন্মাদনার কোনো কিছুই মিস্ করতে চায় না। নারী আর পুরুষ সবাই আছে এ দলে। কেউ কেউ তাই নিজেদের জায়গাতেই মূত্র থলি খালি করে দিল।
অবশেষে বিরক্ত হয়ে উঠল সে। বন্য উন্মত্ততা আর এই সবকিছুতে আঘাত পেল তার বিশ্বাসের গোড়ায়। চোখ দুটো জ্বালা করে উঠল, মাথা ব্যথ্য শুরু হল। গিটারের তালে তালে দপদপ করে উঠতে চাইল মন। নাহ্ যাবার সময় হয়েছে। আরো একটা দিন নষ্ট হয়ে গেল। কখনোই আসেনি এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতে কেটে গেল আরেকটা দিন। যাই হোক, শিকারীর মতই ধৈর্যশীল সে। আরো দিন আসবে, কোনো তাড়াহুড়া নেই। তবে মুহূর্তটুকু হতে হবে তার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চলতে শুরু করল। এতক্ষণ সকলের ভিড়ে, কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিচু টিবি পার হয়ে এলো। কিন্তু সকলে এতটাই সম্মোহিত হয়ে আছে যে কেউই তাকে খেয়াল করল না।
একবার পেছন ফিরে তাকাতেই সরু হয়ে উঠল চোখ জোড়া। দেখতে পেল পাশে বসে থাকা ছেলেটার সাথে হেসে হেসে মাথা দুলিয়ে কথা বলছে মেয়েটা। একটু পরে আবার উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটাও হাঁটতে শুরু করল। ভিড়ের মাঝে দিয়ে সারি সারি আসন পার হয়ে কারো কাঁধে হাত রেখে দৃঢ় পদক্ষেপে এগোতে লাগল। কখনো কখনো হাসিমাখা মুখে ক্ষমাও চাইল।
পথ বদলে ফেলল সে। ঢালু পার হয়ে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে। শিকারীর সহজাত বোধ মনে জানান দিয়ে গেল যে অপ্রত্যাশিতভাবেই এসে গেছে তার কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।
মঞ্চের পেছনে দোতলা বাসের মতো সারির পর সারি কেবল টেলিভিশন ট্রাক। এত কাছাকাছি পার্ক করে রাখা হয়েছে যে ইঞ্চিখানেকের মতো ফাঁক একেকটার মাঝখানে।
পিছিয়ে এলো মেয়েটা। নিচু বেড়া ডিঙিয়ে মঞ্চের পাশ দিয়ে চেষ্টা করল ভিড় থেকে সরে যেতে। কিন্তু আবারো থেমে যেতে হল। চারপাশে তাকিয়ে মরিয়া হয়ে উঠে পথ খুঁজতে লাগল।
হঠাৎ করেই সোজা বেড়ার দিকে এগিয়ে এসে অ্যাথলেটদের মতো করে লাফ দিল। পড়ল গিয়ে দুটো উঁচু টেলিভিশন ট্রাকের মাঝখানে। হেলস্ এনজেলস’দের একজন দেখল নিষিদ্ধ এলাকায় মেয়েটার চলে যাওয়া। চিৎকার করে দৌড়ে চাইল পিছু নিতে। কাঁধ বাঁকিয়ে চেষ্টা করল অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মেয়েটার দিকে যেতে। লোকটা একবার ঘুরতেই মুখে হাসির ঝলক দেখতে পেল সে।
মেয়েটা যেদিক দিয়ে চলে গেছে বেড়ার সে অংশ দিয়ে যাবার জন্য প্রায় দুই মিনিট যুদ্ধ করতে হল। কে যেন দৌড়ে এলে তাকে থামাতে। কিন্তু লোকটার হাত ঝাটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে পার্ক করা উঁচু স্টিলের ট্রাকগুলোর মাঝখানে নেমে পড়ল।
একপাশে কাত হয়ে চলতে হচ্ছে। জায়গাটা এতটাই সংকীর্ণ যে কাঁধ ঠেকে যাচ্ছে। আর সামনেই চিৎকার আওয়াজ শুনতে পেল যখন, ততক্ষণে ডাইভারের ক্যাবের দরজা বরাবর চলে এসেছে। মরিয়া হয়ে দৌড় লাগালো সে। বনেটের পাশে এসে মুহূর্তখানেক দাঁড়িয়ে রইল সামনের দৃশ্য দেখে।
হেলস্ এনজেলস এর লোকটা ট্রাকের সামনের অংশে মেয়েটাকে চেপে ধরে রেখেছে। মেয়েটার এক হাত পিছমোড়া করে কাঁধের সাথে লেপ্টে আছে। দু’জনে মুখোমুখি, কিন্তু নিজের কোমর আর বিশাল পেট দিয়ে মেয়েটাকে স্টিলের গায়ে ঠেসে ধরেছে লোকটা। সে বুঝতে পারল কী ঘটতে যাচ্ছে। মেয়েটার পিঠ বেঁকে যাচ্ছে। নিজেকে বাঁচাতে একপাশ থেকে অন্যপাশে মাথা নাড়াচ্ছে কেবল। হাসতে হাসতে খোলা মুখ নিয়ে লোকটা এগোতে চাইছে মেয়েটার মুখের কাছে।