“ওরাই সামলাক সবকিছু” দৃঢ় কণ্ঠে নিজেকে শোনালেন সেনটেইন। “এবারে আমি আমার গোলাপ, কুকুর আর নিকি’কে নিয়েই ব্যস্ত থাকব।”
বেলার কথা ভাবলেন সেনটেইন। নিজের কাজের জন্য অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়েছে বেলা। কিন্তু মাত্র এতটুকুতেই সন্তুষ্ট হননি সেনটেইন। নিজের এবং শাসা’র সাথে বহু তর্ক-বির্তকের পর সম্মত হয়েছেন আইনের হাত থেকে মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য।
তারপরেও ওকে প্রায়শ্চিত করতেই হবে। এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর সেনটেইন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেলা নিজের বাকি জীবনটা বিভিন্ন ভালো কাজ করেই শোধরাবে। পরিবারের প্রতিটি সদস্য আর এই সুন্দর দেশটা যার সাথে ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তার সেবা করেই নিজের জীবন কাটাবে বেলা। প্রতিটি ঋণ যেন কানায় কানায় পরিশোধ হয়, সে ব্যাপারে আমি নিজে দেখভাল করব। ভাবলেন সেনটেইন কোর্টনি ম্যালকমস্। নিকি’র দিকে তাকাতেই দেখলেন ওর লুকিয়ে রাখা পালকের ব্যাগটা ঠিকই খুঁজে বের করেছে কুকুর ছানা। বিজয়নীর ভঙ্গিতে লম্বা সিল্কের লেজখানা নাড়তে নাড়তে এগিয়ে এলো ইয়াং মাস্টারের কাছে।
অবশেষে কুকুর ছানা আর নিকি এসে বসল সেনটেইনের পায়ের কাছে। রোদে পোড়া উদোম হাত দিয়ে পাপি’র গলা ধরে আছে নিকি। আরেক হাত দিয়ে সেনটেইনকে জড়িয়ে ধরল। “তুমি পাপি’র জন্য এখনো কোন নাম ঠিক করোনি?” জানতে চাইলেন সেনটেইন। প্রায় দুই বছর লেগে গেছে ছেলেটার মন পেতে আর এখন অনুভব করলেন যে অবশেষে আদ্রা আর তার গত জীবনের স্মৃতি ভুলতে পেরেছে নিকি
“হ্যাঁ, নানা। আমি ওকে টুয়েন্টি সিক্স ডাকতে চাই” ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স জুনিয়র স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবার পর থেকে নিকি’র ইংরেজি খুব দ্রুত আরো উন্নত হচ্ছে।
“এটা তো বেশ অদ্ভুত একটা নাম, এই নামটাকেই কেন বেছে নিলে?”
“অনেক আগে আমার একটা কুকুর ছিল-ওটার নাম ছিল টুয়েন্টি সিক্স।” অথচ সে সময়কার স্মৃতি আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসছে।
“হুম, ঠিক আছে-বেশ সুন্দর নাম। ড্যান্ডি টুয়েন্টি সিক্স অব ওয়েল্টেভেদেন।”
“ইয়েস! ইয়েস!” টুয়েন্টি সিক্সের গলা জড়িয়ে ধরল নিকি? “ড্যান্ডি টুয়েন্টি সিক্স।”
নিকি’র প্রতি স্নেহে আদ্র হয়ে উঠল সেনটেইনের হৃদয়। ছেলেটার মানসিক অবস্থা এখনো বেশ অগোছাল হলেও ওর শিরা-উপশিরায় বইছে চ্যাম্পিয়নদের রক্ত।
খানিকটা সময় লাগবে, ভাবলেন সেনটেইন। ওর সাথে আরেকটু বেশি সময় কাটাতে হবে।
“তোমাকে একটা গল্প শোনাব, নিকোলাস?” সেনটেইনের কাছে আছে মজার সব পারিবারিক কাহিনী; সিংহ আর হাতি শিকারের গল্প; বোয়া, জুলু আর জার্মানদের সাথে যুদ্ধের কথা; হারিয়ে যাওয়া হীরের খনি আর ফাইটার প্লেন সহ এমন হাজারো ঘটনা যা ছোট্ট একটা ছেলের মাঝে গড়ে তুলবে উত্তেজনা আর বিস্ময়বোধ।
এবারে নিকি’কে এক ভাঙ্গা জাহাজ আর সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া মানুষের গল্প শোনালেন সেনটেইন। শোনালেন নিষ্ঠুর মরুভূমির মধ্যে ছোট ছোট হলুদ খুদে পরীদের ভ্রমণের কাহিনী-আর ওদের সাথে সাথে হেঁটে গেল গল্পে বিভোর নিকি।
অবশেষে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন সেনটেইন : “আজকের জন্য যথেষ্ট হয়েছে, ইয়াং মাস্টার নিকোলাস। আমাদের কী হয়েছে ভেবে ভেবে চিন্তায় পড়ে যাবে তোমার মা।”
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নানা’কে উঠতে সাহায্য করল নিকি। দু’জনে মিলে পাহাড়ের নিচ দিয়ে হেঁটে চলল বিশাল বড় বাড়িটার দিকে। মাঝখানে তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে টুয়েন্টি সিক্স।
সেনটেইনের পায়ে ব্যথা থাকাতে সকলেই আস্তে আস্তে হাঁটছে। উঁচু নিচু পথে নানা’র হাত ধরে সাহায্য করছে নিকি।