“সোজা টার্গেটে উড়ে যাও।” রূঢ়ভাবে আদেশ দিল রামোন, “ওর আর কিছুই করার নেই।”
মাইকেল আশা করেছিল যে রামোন হয়ত অপারেশনটা বাতিল করবে। কিন্তু তা না করে নিজের প্ল্যানেই অটল আছে। সেঞ্চুরিয়ন নিয়ে সবচেয়ে লম্বা গাছটারও দুইশ ফুট নিচে নেমে এলো মাইকেল। ওকে অনুসরণ করে পাশেই চলে এলো গ্যারি। মাত্র এক গজ দূরত্বে সমান হয়ে আছে দুটো এয়ারক্রাফটের ডানা।
আবারো মাইকেলকে ল্যান্ড করার সিগন্যাল দিল গ্যারি। কিন্তু ওকে উপেক্ষা করে নিজের রেডিও মাইক্রোফোনটা ছোঁ মেরে তুলে নিল মাইকেল। জানে গ্যারি’র রেডিও হল ১১৮.৭ মেগাহার্টজ। “অ্যায়াম সরি, গ্যারি।” চিৎকার করে উঠল মাইকেল, “আমাকে এটা করতেই হবে, অ্যায়াম সরি।”
কেবিনের মধ্যে রেডিও স্পিকারে গর্জে উঠল গ্যারির গলা,
“এক্ষুণি ল্যান্ড করো, মিকি, একটুও কোনো দেরি হয়নি। তোমাকে এখনো এর ভেতর থেকে বের করে আনতে পারব আমরা। বোকার মতো কাজ করো না। ম্যান।”
প্রচণ্ডভাবে মাথা নাড়ল মাইকেল। ইশারায় সামনের দিক দেখাল।
শক্ত হয়ে গেল গ্যারির চোখ-মুখ। খানিকটা পিছিয়ে এসেই মাইকেল কিছু করার আগে কুইন-এয়ারের ডানার মাথা ঢুকিয়ে দিল সেঞ্চুরিয়নের লেজের ভেতর। এরপর কন্ট্রোল হুইল চেপে ধরে লম্বালম্বিভাবে সামনের দিকে ডাইভ দিল।
সেঞ্চুরিয়ন অসম্ভব নিচে থাকাতে আর ডাইভটাও বেশ খাড়া হওয়াতে কোনো কিছু করার আগেই লম্বা একটা ব্লু-গাম গাছের ডালে আছড়ে পড়ল ছোট্ট প্লেন।
হাত দুটো বাড়িয়ে দিল মাইকেল। কিন্তু পুরুষের পেশিবহুল হাতের মতই শুকনো আর মোটা একটা ডাল এসে বাড়ি খেল উইন্ডস্ক্রিনের গায়ে একটু আগেই সেখানে লেগেছিল শ’নের বুলেট। মাইকেলের গলার নিচে ঢুকে গেল গাছের ডাল। কলার বোনসের ভেতরে ঢুকে বেরিয়ে এলো শোল্ডার ব্লেডের মাঝখান দিয়ে।
এয়ারক্রাফট নিচে পড়ে যেতেই আবার সাৎ করে বাইরে বেরিয়ে গেল গাছের ডাল।
দুর্বার গতিতে গাছের মাথা দুমড়ে মুছড়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেঞ্চুরিয়ন। প্রথমে একটা আর একটু পরেই খসে পড়ল দ্বিতীয় ডানা। কমে গেল গতি। অবশেষে মাটিতে আছড়ে পড়ল ডানাবিহীন ফিউজিল্যাজ। তারপরেও ঘষে ঘষে চলে গেল ভুট্টা ক্ষেত্রে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত।
বহুকষ্টে হাচোড় পাচোড় করে সিটের উপর উঠে বসল রামোন মাচাদো। এখনো বেঁচে আছে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেল। মাইকেলের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল নিঃশব্দে চিৎকার করছে খোলা মুখ। তছনছ হয়ে যাওয়া উইন্ডস্ক্রিনের উপর রক্তের ফোয়ারা ছুটছে।
সিট বেল্ট খুলে সিট থেকে উঠে পড়তে চাইল রামোন। কিন্তু না পেরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখল বাম পা ভেঙে গেছে সিট আর গ্যাস সিলিন্ডারগুলোর মাঝখানে জড়িয়ে আছে সেদ্ধ স্প্যাগেটির মত। হাঁটু পর্যন্ত উঠে গেছে ট্রাউজারের পা আর গোড়ালির ভেতরে এটে বসেছে স্টেইনলেস স্টিলের ভালব-হ্যান্ডেল।
নিচের দিকে তাকাতেই গ্যাস নির্গত হওয়ার হিসহিস শব্দ শুনতে পেল রামোন। ভাঙ্গা পা খুলে দিয়েছে ভালব-হ্যান্ডেল। হোস পাইপের ভেতর দিয়ে গিয়ে ফিউজের নিচের নজল দিয়ে স্প্রে হচ্ছে সিনডেক্স-২৫।
ডোর হ্যান্ডেল ধরে নিজের সারা শরীরের ভার দিয়ে ধাক্কা দিল রামোন। কিন্তু একেবারে পাথরের মতো শক্ত হয়ে আটকে গেছে দরজা।
আহত পায়ের হাঁটুর নিচে দুই হাত রেখে বহুচেষ্টা করল বের করে আনতে। কিন্তু কোনো কাজ হল না। হাড় ভেঙে যাবার শব্দ শুনতে পেলেও ভাল-হ্যান্ডেল ছেড়ে বের হল না পা।
হঠাৎ করেই রামোনের নাকে ধাক্কা দিল আমন্ডের গন্ধ। জ্বালা করে উঠল নাক। রুপালি মিউকাস ঝরতে লাগল নাকের ফুটো দিয়ে। ঠোঁট বেয়ে চিবুকে গড়িয়ে পড়ল সিকনি। কয়লার মতো জ্বলে উঠল চোখ জোড়া, ম্লান হয়ে গেল দৃষ্টিশক্তি।
অন্ধকারের ভেতর গুঙ্গিয়ে উঠল। আর কখনো বোধ করেনি এরকম ব্যথা। আত্ম-চিৎকার শুরু করল রামোন মাচাদো। পড়ে রইল নিজের মল মূত্রের মাঝে। আর এভাবে চিৎকার করতে করতে একসময় নিঃশেষ হয়ে গেল ফুসফুসের শক্তি। নীরব নিস্তব্ধ হয়ে গেল চারপাশ।
***
বনের কিনারে পড়ে থাকা গাছের গুঁড়ির উপর বসে আছেন সেনটেইন কোর্টনি ম্যালকম। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন কুকুরের বাচ্চাটাকে নিয়ে খেলছে। নিকি।
এই কুকুর ছানাটা ওয়েল্টেভ্রেদেনের ড্যান্ডি ল্যাসের সর্বশেষ নিদর্শন। বয়স হয়ে যাওয়ায় সেনটেইন বাধ্য হয়েছেন মাদী কুকুরটাকে কবর দিতে। তবে মায়ের সমস্ত ভালো দিকগুলোই পেয়েছে ছানাটা। একদিন যে এটাও চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই।
পাপি’র মতই দ্রুত সব কিছু শিখে নিতে পারে নিকি আর কুকুর। ঘোড়ার সাথে বেশ মিশে যেতে পারে।
আসলে এটা ওর রক্তেই আছে, আপন মনে ভাবলেন সেনটেইন। ও হচ্ছে সত্যিকারের কোর্টনি, হাস্যকর স্প্যানিশ একটা নাম আর পদবী থাকলেই বা কি আসে যায়।
অন্যান্য কোটনিদের কথা ভাবতে লাগলেন সেনটেইন।
অত্যন্ত যত্ন সহকারে মেরামত করে নেয়া ছোট্ট স্লেভ চার্চে আগামীকাল বিয়ে করবেন শাসা আর এলসা পিগনাটেলি। অন্তত এক দশকের মাঝে এত বড় আর কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি উত্তমাশা অন্তরীপে। ইংল্যান্ড, ইউরোপ, ইস্রায়েল আর আমেরিকা থেকেও আসবেন সব অতিথি।
মাত্র কয়েক বছর আগে হলেও বিয়ের সমস্ত পরিকল্পনা আর ব্যবস্থাপনা সেনটেইন নিজ হাতে করতে চাইতেন; কিন্তু এবারে সবকিছু বেলা আর এলসা’র হাতে ছেড়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত হয়েছেন।