“শন, ও আমাদের ভাই”
“না” সোজা-সাপ্টা জবাব দিল শন, “ও আমার ভাই নয়; কেবল একটা জঘন্য মাংসের দলা।”
***
কুইন এয়ারের ইঞ্জিন চালু করতে করতেই হিসাব করে ফেলল গ্যারি কোর্টনি।
ফারগ্রোভের চেয়েও শোগ্রাউন্ডস ক্যাপরিকর্ণের ষাট মাইল কাছাকাছি আর কুইন এয়ার সেঞ্চুরিয়নের চেয়ে সতুর কিংবা আশি নট দ্রুততর হওয়াতে মাত্র নয় মিনিটে মিকি আর কতটা গেছে!
তার মানে প্রায় মাইকেলের কাছে চলে এসেছে। অন্য কোনো কথা ভাবার দুঃসাহস না করে সোজা শো গ্রাউন্ডের কোর্স ধরল গ্যারি। তারপর ঘুরে গিয়ে মাইকেলের গতি রোধ করার চেষ্টা করবে।
থ্রটল খুলে রানওয়ে ধরে কুইন এয়ার নিয়ে ছুটতে গিয়েও খানিকটা আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করল যে দাঁতের ফাঁকে আটকে আছে হাফ স্মোকড় সিগার। এয়ারক্রাফটের পিছু ধাওয়া করার কথা ভাবতে ভাবতে ভুলে গেছে বাকি সবকিছু। জোড়া ইঞ্জিনের বিশাল মেশিন আকাশে তুলেই গভীরভাবে সিগারে টান দিল গ্যারি। হাভানা থেকে অত্যন্ত উৎকৃষ্টমানের সিগারাটা যেন ভাগ্যেরই পরিহাস। ধোয়ার সুগন্ধে খানিকটা শান্ত হলো নার্ভ।
“শনের মতো এ ব্যাপারে আমি ততটা দক্ষ নই” নিজেকেই যেন শোনাল গ্যারি, “এর চেয়ে স্টক একচেঞ্জ কিংবা ব্লাডি টেক ওভার ডি দিয়েই দেখুক না।” ম্যানুয়ালের উপর চাপ দিয়ে কুইন এয়ারের ভেতর থেকে নিংড়ে বের করে নিল আরো বাড়তি পনের নট।
প্রায় সাত মাইল দূর থেকেই দেখতে পেল শো গ্রাউন্ডস। রঙিন তিমি’র মতো উড়ছে বেলুনের বিশাল একটা স্তূপ। কারপার্কে থাকা হাজার হাজার গাড়ির গা থেকে ঠিকরে পড়ছে সূর্যরশ্মি।
ঘুরে গিয়েই কুইন এয়ার নিয়ে সোজা ফারগ্রোভের দিকে ছুটল গ্যারি। নিজের আসনে ঝুঁকে বসে উইন্ডস্ক্রিনের ভেতর দিয়ে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে আর কষে টান দিচ্ছে পুরু সিগারে। মাথার ভেতরে বইছে চিন্তার ঝড়। এখনো হিসাব করছে গতি, সময় আর দূরতু। “যদি ওদের সাথে দেখা হয় তাহলে সেটা পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই হবে-” গ্যারি’র চিন্তায় ছেদ পড়ল। সামনের দিক থেকে এগিয়ে আসা কিছু একটাতে সূর্যের আলো পড়তেই ঝলসে উঠল চোখ। নাকের উপরে ভালো করে বসিয়ে দিল হর্ণ-রিমড় চশমা। ভেতরে ভেতরে মায়োপিক চোখজোড়া নিয়ে রেগে উঠলেও চেষ্টা করল বস্তুটাকে খোঁজার।
আবাসিক এলাকা পেছনে ফেলে এসে এখন খোলা গ্রাম্য এলাকা দিয়ে উড়ে চলেছে গ্যারি। নিচে দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট গ্রাম আর আঁকাবাঁকা রাস্তা। ফসলের জমি আর গাছপালার জন্য ফোকাস করতে কষ্ট হচ্ছে। উম্মাদের মতো চারপাশে খুঁজছে গ্যারি; আর তারপরই বুঝতে পারল সেঞ্চুরিয়ন ঠিক তার নিচে।
প্রথমেই দেখতে পেল ছায়া। মাঠের উপর ঘাসফড়িং’র মতো লাফ দিচ্ছে। এর খানিক পরেই ছোট্ট নীল এয়ারক্রাফটটা চোখে পড়ল গ্যারি’র চেয়ে হাজার ফুট নিচে থাকলেও ঠিক দু’মাইল সামনে। বিপদজনকভাবে কুইন এয়ারের নাক নিচের দিকে নামিয়ে ডাইভ দেয়ার জন্য তৈরি হলো গ্যারি।
প্রায় পাঁচশ নট গতিতে পরস্পরের দিকে ছুটে আসছে দুটো এয়ারক্রাফট। কিন্তু কুইন এয়ার সেঞ্চুরিয়নের মতই একই উচ্চতাতে নামার আগেই নীল একটা আলোর ঝলকানির মতো পার হয়ে গেল মিকি’র এয়ারক্রাফট।
একটা উইং’কে যতদূর সম্ভব ঘুরিয়ে সেঞ্চুরিয়নের পিছনে চলে এলো গ্যারি। চাইছে কুইন এযারের সর্বোচ্চ গতি ব্যবহার করে ছোট্ট এয়ারক্রাফটের নাগাল পেতে।
***
“দশ মিনিটের ভেতরেই পৌঁছে যাবো” রামোন’কে সতর্ক করে দিল মাইকেল। “তৈরি হয়ে যাও।”
সামনের দিকে ঝুঁকে পায়ের ফাঁকে আটকে থাকা সিলিন্ডার দুটো ধরল রামোন। খুব সাবধানে প্রতিটা বোতলের গলার কাছে থাকা ট্যাপ খুলে ফেলল। টের পেল কানেকটিটি-পিসের মেইন ভালভের গেইটে গিয়ে আটকে গেল ভেতরের বাতাস।
এবারে ভালব-লিভারে বুড়ো আঙুল ছড়িয়ে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ঘোরালেই নার্ভ গ্যাস মিক্সড হয়ে হিসহিস করে লম্বা হোস দিয়ে ছুটে সেঞ্চুরিয়নের পেট থেকে ছিটিয়ে পড়রার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
সিধে হয়ে বসে পাশেই পাইলটের সিটে বসে থাকা মাইকেলের দিকে তাকাল রামোন।
“অল সেট-” বলতে গিয়েও কথা শেষ করতে পারল না রামোন। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল মাইকেলের মাথার পাশের সাইড উইন্ডোর দিকে।
পুরো জানালা জুড়ে দেখা যাচ্ছে বিশাল বড় একটা রুপালি ফিউজিলাজ। তাদের সাথে একই সমান্তরালে উড়ছে আরেকটা এয়ারক্রাফট। এদিকেই তাকিয়ে আছে পাইলট। বাচ্চাদের মতো চেহারার বড়-সড় মানুষটার চোখে হর্ণ-রিমড চশমা আর মুখের এক কোণায় ঝুলছে সিগার।
“গ্যারি?” চিৎকার করে উঠল আতঙ্কিত মাইকেল। ডান হাত তুলে বুড়ো আঙুল দিয়ে নিচের দিকে ইশারা করল গ্যারি।
হঠাৎ করেই সেঞ্চুরিয়ন নিয়ে নিচের দিকে টার্ন নিল মাইকেল। উপর থেকে ছেঁড়া পাথরের মতো ধপ করে নেমে এলো গাছের মাথা বরাবর।
রিয়ারভিউ মিররে তাকিয়ে দেখল মাত্র একশ গজ দূরে থাকা কুইন এয়ারের রুপালি নাকটাও দ্রুত এগিয়ে আসছে। এরপর এক ধাক্কায় সেঞ্চুরিয়ন নিয়ে উপরে উঠেই আবার ঘুরে গেল। কিন্তু ততক্ষণে পাশ থেকে গুতো দিল রুপালি মেশিন। পাইলট হিসেবে গ্যারি ওর চেয়ে অনেক দক্ষ আর কুইন-এয়ারের উইং’কেও এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
“ওর কাছ থেকে কিছুতেই পালাতে পারব না।”