একেবারে শেষ গুলিটা উইন্ডস্ক্রিনে লাগতেই মাথা নিচু করে ফেলল মাইকেল আর রামোন। সেঞ্চুরিয়নের নাক ঘুরিয়ে ফেলল মাইকেল। সীমানা প্রাচীর দুমড়ে-মুচড়ে স্বচ্ছ নীলাকাশে উড়ে গেল এয়ারক্রাফট।
দুইশ ফুট উপরে উঠেও খানিক কাশি দিয়ে তোতলাতে লাগলো শীতল মোটর। এরপরই মসৃণ গতিতে ছুটে চলল।
“শো-গ্রাউন্ডসের দিকে চলো” আবারো বলে উঠল রামোন, “ভরসটার’কে না পেলেও টার্গেট একেবারে খারাপ না। এখনো দুইশ কোটি মানুষ আছে ওখানে।”
এক হাজার ফুট উপরে উঠে এয়ারক্রাফট লেভেলড করল মাইকেল! উড়ে চলল নিজ গন্তব্যের দিকে।
***
মাথার উপর দিয়ে আকাশে উঠে যাওয়া সেঞ্চুরিয়নের পেট লক্ষ্য করে রিভলবার খালি করে ফেলল শন। কিন্তু কোথাও লাগল না তার বুলেট; বরঞ্চ ল্যান্ডিং হুইলস তুলে ফেলে অক্ষতভাবে ভেসে গেল সেঞ্চুরিয়ন।
ঝট করে দাঁড়িয়ে হ্যাঁঙ্গার ধরে ছুটল শন। ওয়াকবেঞ্চের উপরে থাকা টেলিফোনটাকে দেখতে পেয়েছে। “থ্যাঙ্ক গড়!” বেঞ্চের কাছে গিয়েই ছো মেরে ফোন তুলে নিল শন্।
ক্যাপরিকর্ণের নাম্বার ডায়াল করতে করতেই হাতের নিচে খোলা ম্যাপ আর ব্যান্ড ইস্টার শো’র ব্রোশিউর দেখতে পেল। শো-গ্রাউন্ডের লোকেশন আর বাতাসের গতি’কে রেডমার্ক দিয়ে সার্কেল করা আছে।
তৃতীয় বার রিং হতেই উত্তর দিল সুইচবোর্ডের অপারেটর “ক্যাপরিকর্ণ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ’ গুড ডে, হাউ মে আই হেল্প ইউ?”।
“আমি বোর্ডরুমে মি: গ্যারি কোর্টনির সাথে কথা বলতে চাই। আমি উনার ভাই আর দিস ইজ অ্যান ইমারজেন্সি।”
“উনি আপনার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এক্ষুণি লাইন দিচ্ছি।”
অপেক্ষা করতে করতে দ্রুত হ্যাঙ্গারের চারপাশে চোখ বোলালো শন্। দরজার পাশে দেয়ালে ঝুলে থাকতে দেখল সেফটি স্যুটস।
“শন, তুমি?” গ্যারির গলায় টান টান উত্তেজনার আভাস পাওয়া গেল।
“হ্যাঁ, আমি। এখনো ফারগ্রোভে। যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হয়েছে। মাইকেল, বেন আর শিয়ালটা। টার্গেট হচ্ছে শো-গ্রাউনড।”
“ওদেরকে থামাতে পারোনি শন?”
“না। মাইকেল আর ফক্স প্লেন নিয়ে ভেগে গেছে। দুই মিনিট আগেই টেক অফ করেছে। নিশ্চিত শো-গ্রাউন্ডের দিকেই যাচ্ছে।”
“তুমি নিশ্চিত, শন?”
“অফ কোর্স অ্যায়াম ব্লাডি সিউর। আমি এখন মিকি’র হ্যাঙ্গারে, ম্যাপের দিকে তাকিয়ে আছি। শো, গ্রাউন্ডস আর বাতাসের গতি মার্ক করে রাখা হয়েছে। দেয়ালে ঝুলছে দুটো স্মোক-প্রুফ স্যুট। এগুলোকে তুলে নেয়ার সুযোগ পায়নি।”
“আমি পুলিশ আর এয়ারফোর্সকে সতর্ক করে দিচ্ছি।”
“বোকার মতো কথা বলো না, গ্যারি। ফাইটার অথবা হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠানোর জন্য ডিফেন্স ফোর্সের চিফ আর মিনিস্টারের অর্ডার লাগবে আর তা করার জন্য মাসখানেক কেটে যাবে। এই ফাঁকে মারা যাবে দুই কোটি মানুষ।”
“এখন তাহলে কী করব, শন?” এতক্ষণে পথে এসেছে গ্যারি! “কুইন এয়ার নিয়ে আকাশে উঠে পড়ো” জানাল শন। “ছোট্ট সেঞ্চুরিয়নের চেয়ে এটা বেশি বড়, শক্তিশালী আর দ্রুত। তাই সেঞ্চুরিয়নের গতি রোধ করে নিচে নামতে বাধ্য করতে পারবে।”
“মিকি’র সেঞ্চুরিয়ন দেখতে কেমন?” ঠাণ্ডা গলায় জানতে চাইল গ্যারি।
“উপরে নীল। পেট সাদা। মার্কিংস হলো জেড এস-আর আর ডব্লিউ। রোমিও রোমিও হুইস্কি। ফারগ্রোভের লোকেশন জানো তুমি, আর সেই কোর্স ধরে শো’র দিকে যাও।”
“আমি এক্ষুণি রওনা দিচ্ছি।” ক্লিক করে কেটে গেল গ্যারির কানেকশন।
বেঞ্চের উপর থেকে নিজের স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন তুলে নিল শন চেম্বার থেকে ফেলে দিল খালিকেস। পকেট থেকে গুলির বক্স বের করে দ্রুত আবার রিলোড করে নিল। হাতে উদ্যত রিভলবার নিয়েই দৌড়ে দিয়ে লাথি মেরে খুলে ফেলল দরজা। আর সাথে সাথে হাটু গেড়ে বসে বসে রিভলবার তাক করল সামনের দিকে।
মারা যাবার আগে অথর্ব পা দুটোকে টেনে নিয়ে মাত্র কয়েক গজ যেতে পেরেছে বেন। তারপরই দলা মোড়া পাকিয়ে পড়ে গেছে পিচ গাছের নিচে। অসম্ভব রক্তপাত হওয়াতে ভিজে গেছে শার্ট আর ট্রাউজারের উপরিভাগ। তাল পাকানো মাংসের মতো ঝুলছে বাম হাত কাটা চামচের মতো দেহের মাঝে গেঁথে গেছে ভাঙ্গা হাড়ের টুকরো।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন তুলে নিল শন্। দরজা দিয়ে বেরিয়ে তাকাল বে’নের দিকে।
এখনো বেঁচে আছে বেন। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তাকালো শনের দিকে। পোড়া চিনির মতো বাদামি চোখ জোড়া যেন জ্বলছে।
“ওরা চলে গেছে, তাই না?” ফিসফিস করে বলে উঠল বেন, “ওরা সফল হবেই, তুমি আমাদেরকে থামাতে পারবে না। ভবিষ্যৎ এখন আমাদের হাতে।”
গাছপালার মধ্য দিয়ে দৌড়ে এলো বেলা। শ’কে দেখতে পেয়েই ওর দিকে দৌড় লাগালো।
“আমি না তোমাকে লুকিয়ে থাকতে বলেছিলাম” গর্জন করে উঠল শন্। “কথা শোন না কেন কখনো?”
বেন’কে দেখতে পেয়েই থেমে গেল বেলা।
“ওহ্ গড! ইটস বেন। তুমি ওর সাথে কী করেছ?” শনের পায়ের কাছে পড়ে থাকা বে’নের দিকে এগোতে গিয়ে হাঁটু ভেঙে ধপ করে বসে পড়ল বেলা।
আস্তে করে কোলের উপর বে’নের মাথা তুলে নিল; কিন্তু এই সামান্য নড়াচড়াতেই আহত ফুসফুস নিয়ে কাশতে শুরু করল বেন। ভোলা মুখ আর চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ল মুখ ভর্তি রক্ত।
“ওহ্ গড, শন। তুমি ওকে মেরে ফেলেছ!” ফুফিয়ে উঠল বেলা।
“তাই তো মনে হচ্ছে” নরম স্বরে জানাল শন। “সমস্ত হৃদয় দিয়েও আমি তাই চাই।”