শক্তিশালীরাই কেবল টিকে থাকবে। কিন্তু এই দুজনের মনোভাব ততটা শক্ত নয়। তাই আজ রাতের পরে তাদের প্রয়োজনও ফুরিয়ে যাবে।
আস্তে করে মাইকেলের কাঁধে হাত রাখল রামোন। ভালভাবেই জানে যে পুরুষের স্পর্শ কতটা উপভোগ করে মাইকেল।
“তুমি আসলেই চমঙ্কার কাজ করেছ। এখন গিয়ে খেয়ে রেস্ট নাও। সন্ধ্যায় তুমি টেক অফ করার আগেই আমি চলে যাব। দুজনের জন্যই রইল আমার স্যালুট।”
তিনজন মিলে একসাথে এগোল শেডের দরজার দিকে; কিন্তু খানিক গিয়ে থেমে গেল মাইকেল।
“আমি একবার নিজের হাতে বেনের কাজ চেক করে দেখতে চাই।” দৃঢ় কণ্ঠে বলল মাইকেল। কোনো অনিশ্চয়তা রাখতে চাই না।”
“তোমার এটা অধিকার কমরেড। সম্মত হলো রামোন। “এই ফাঁকে আমরা তোমার খাবার তৈরি করে ফেলছি।”
সেঞ্চুরিয়নের ককপিটে উঠে গেল মাইকেল আর বাকি দুজন এগোল দরজার দিকে।
“হ্যাঙ্গারের দেয়ালের গায়ে লাগানো ছোট্ট দরজাটা খুলে ফেলল রামোন। আর বেনসহ বের হতেই দেখল তাদের দিকে তাকিয়ে আছে শন কোর্টনি।
মাত্র ছয় ফুট দূরে দাঁড়িয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে, শন্ আর রামোন। প্রতিক্রিয়া হলো দেখার মত। কোর্টের নিচে হাত দিয়েই বিশাল ম্যাগনাম রিভলবার বের করে আনল শন। সেকেন্ডেরও কম সময় লাগল ট্রিগার কাজ করতে আর এরই ফাঁকে বেন আফ্রিকাকে টেনে এনে নিজের দেয়াল বানিয়ে ফেলল রামোন। উজ্জ্বল দিনের আলোতে আরো অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠল মাজলের ফ্ল্যাশ; শনের গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিল বে’নের শরীর।
বাম কনুই ভেদ করে হলো-পয়েন্ট বুলেট চলে গেল হাত থেকে দেহের এক পাশ পর্যন্ত। শেষতম পাঁজরে ঢুকতেই ভাঙ্গতে শুরু করল বুলেট। ফুসফুসে ভরে গেল বুলেটের খানিক অংশ। একটা তামার জ্যাকেট পরা স্পিন্টার মেরুদণ্ডের ভাট্রেবার মাঝখানে ঢুকে স্পাইনাল কর্ডকে প্রায় চুরমার করে দিল।
বুলেটের আঘাতে একপাশে দেয়ালের উপর ছিটকে পড়ল বেন। জং ধরা কারাগেটেড টিনের গায়ে ছিটিয়ে পড়ল রক্ত। শন আবারো রিভলবার ভোলার আগেই মাথা নিচু করে হ্যাঙ্গারে চলে গেল রামোন মাচাদো। লাথি মেরে পেছনে দরজা আটকেই শোল্ডার হোলস্টার থেকে তুলে নিল তোকারেভ পিস্তল।
পাতলা দেয়াল লক্ষ্য করে দ্রুত দু’বার গুলি ছুড়ল রামোন; ভাবল শন্ বুঝি এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আগে থাকতেই সন্দেহ করে মেঝের উপর সোজা হয়ে পড়ে গড়িয়ে গেল শন। গুলির শব্দ আর টিনের দেয়ালে বুলেটের গর্ত দেখে আন্দাজ করে নিল রামোনের অবস্থান। জোড়া হাতে ফায়ার করতেই ভারী বুলেটের আঘাতে দেয়ালে গর্ত হয়ে গেল; তবে এক ফুটের জন্য মিস্ হলো রামোনের মাথা।
হ্যাঙ্গারে কয়েকটা ড্রামের পেছনে লুকিয়ে থাকা রামোন এয়ারক্রাফটের কন্ট্রোলে বসে থাকা মাইকেলের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, স্টার্ট আপ!”
সেঞ্চুরিয়নের পাইলটের সিটে বসে আতঙ্কে যেন জমে গেল মাইকেল। কিন্তু রামোনের নির্দেশ শুনেই সম্বিত ফিরে পেয়ে দুটো মাস্টার সুইচ জ্বেলে চাবি ঘুরিয়ে দিল। খক খক করে কাশতে লাগল সেঞ্চুরিয়নের ইঞ্জিন, থ্রটল খুলে দিল মিকি গর্জন করে উঠল সেঞ্চুরিয়ন।
“গেট হার রোলিং” চিৎকার করে উঠেই দেয়াল লক্ষ্য করে এলোপাথারি আরো দুবার গুলি ছুড়ল রামোন।
খোলা হ্যাঙ্গারের দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেঞ্চুরিয়ন; গতি বাড়ছে দ্রুত। দৌড় দিল রামোন। উইং এর নিচে লুকিয়ে খুলে ফেলল প্যাসেঞ্জার জোর।
“বেন কোথায়?” রামোন’কে দেখেই চিৎকার করে জানতে চাইল মাইকেল।
“বেন শেষ” চিৎকার করেই উত্তর দিল রামোন, “স্কীপ গোয়িং।”
“শেষ মানে কী?” সিটের উপর মোচড় দিয়ে বসে থ্রটল বন্ধ করে দিল . মাইকেল, “আমরা ওকে এভাবে রেখে যেতে পারি না।”
“বেন মারা গেছে, ম্যান।” খ্রটলের উপর মাইকেলের হাত ধরল রামোন। “বেনের গায়ে গুলি লেগেছে। আমাদেরকে দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে হবে।”
“বেন-”
“প্লেন চালাও।”
আবারো থ্রটল খুলে দিল মাইকেল। রানাওয়ে ধরে ছুটতে শুরু করল সেঞ্চুরিয়ন। প্রচণ্ড শোকে কাতর হয়ে পড়েছে মাইকেল।
“বেন” ফিসফিস করেই সেঞ্চুরিয়নের ট্যাক্সিইং শুরু করল মিকি। একেবারে শেষ মাথায় পৌঁছে ব্রেক আর ইঞ্জিন ব্যবহার করে রানওয়ে ছেড়ে ওঠে পড়ল বাতাসে। “ইঞ্জিন একেবারে ঠাণ্ডা” জানাল মাইকেল, “ওয়ার্ম। আপের চান্স পায়নি তো।”
“কিন্তু ওকে চলতেই হবে” জোর গলায় বলে উঠল রামোন। “এখুনি এসে পড়বে পুলিশ। কে জানে কিভাবে খবর পেয়েছে।”
“বেন?”
“বেনের কথা ভুলে যাও” খেঁকিয়ে উঠল রামোন, “প্লেন চালাও।”
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?-বতসোয়ানা?” এখনো দ্বিধা করছে মাইকেল।
“হ্যা” জানাল রামোন, “কিন্তু তার আগে এই অপারেশন শেষ করতে হবে। শো-গ্রাউন্ডের দিকে চলো।”
“কিন্তু…তুমি তো বললে যে পুলিশ আমাদের পিছু নিয়েছে” প্রতিবাদ করে উঠল মাইকেল। “এখন ওরা আর কিভাবে থামাবে? এয়ারফোর্স ইম্পালা আকাশে উঠতেও ঘন্টাখানেক লেগে যাবে। গো-ম্যান-গো!”।
এমন সময় হ্যাঙ্গারের পিছন থেকে দৌড়ে এলো কেউ একজন। ভাইকে দেখে চিনতে পারল মাইকেল।
“শন!” সবিস্ময়ে বলে উঠল মিকি।
“কিপ গোয়িং” আদেশ দিল রামোন।
রানওয়ের শেষ মাথায় এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল শন। সামনে থেকে ছুটে আসা সেঞ্চুরিয়নকে লক্ষ্য করে ক্ল্যাসিক ডাবল-হ্যান্ডেড গ্রিপ করে তিনবার গুলি করল।