এয়ারক্রাফটের নিচ থেকে গ্যাসটাকে স্প্রে করতে কোন সমস্যাই হবে না। একই সাথে অক্ষত থাকবে সেঞ্চুরিয়নের আরোহীরা। তবে বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে সেফটি স্যুট পরা ছাড়াও গ্যাস ছাড়ার মুহূর্তে বোতল ভর্তি অক্সিজেন থেকে নিঃশ্বাস গ্রহণ করবে সেঞ্চুরিয়নের প্যাসেঞ্জার।
হ্যাঙ্গারের দেয়ালে ঝুলতে থাকা সুট যে কোনো মুহূর্তে চাইলেই গায়ে চাপানো যাবে। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের অ্যাপ্রুভ করা এসব সুট গোল্ড মাইনে রেসকিউ টিম হরহামেশা ব্যবহার করে থাকে।
দ্বিতীয় বারের মতো হোসের ভেতরে কোন লিক আছে কিনা চেক্ করে দেখল বেন। অবশেষে সন্তুষ্ট হয়ে খোলা কেবিনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। তুলার মাঝে হাত মুছে কাছাকাছি দেয়ালের সাথে লাগানো ওয়ার্কবেঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল।
অন্য দু’জন বেঞ্চের উপর ঝুঁকে পড়ে ম্যাপ স্টাডি করছে। মাইকেল কোর্টনির পিছনে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখল বেন। “অল সেট,. মিকি।” দক্ষিণ লন্ডনি টানে জানাল বেন।
এরপর মনোযোগ দিল রামোন মাচাদোর দিকে। এই লোকটাকে প্রায় পূজা করে বেন; রামোনের এতটাই অন্ধ ভক্ত সে। মাঝে মাঝে যখন মাইকেলের সাথে একা থাকে তখন তো যেন ধর্মীয় বিশ্বাসের মতই রামোনকে নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে মাইকেল অনুভব করে তাদের মিশনের বিভৎস দিক। লড়াইকে সফল করার জন্য যে এরকম কিছু করার প্রয়োজন আছে সে কথা নিজের মনকে বোঝাতেই তার লেগে গেছে বহু মাস।
মাইকেলের বিতৃষ্ণা অনুভব করে ওর দিকে তাকাল রামোন। মাইকেল, তুমি মেটকে ফোন করে আজ সন্ধ্যায় ফাইনাল ওয়েদার ফোরকাস্টটা জেনে নিও।”
সামনের বেঞ্চে থাকা টেলিফোন তুলে জান সুটস্ এয়ারপোর্টের ওয়েদার ইনফর্মেশনের নাম্বার ডায়াল করল মাইকেল। প্রি-রেকর্ডেড অ্যানাউসেমন্টটা শুনল মন দিয়ে, “বাতাস এখনো পাঁচ নট গতিতে ২৯০ ডিগ্রি কোণে বইছে; উত্তর দিল মাইকেল। “সকাল থেকে কোনো পরিবর্তন নেই। বায়ুমণ্ডলের চাপও স্থির আছে।”
“যাক, ভালোই হল।” নিজের রেড় মার্কার পেন্সিল তুলে নিল রামোন। লার্জ স্কেল অ্যারোনটিক্যাল ম্যাপের উপর পডিশন সার্কেল করল। তারপর বাতাসের গতিপথও মার্ক করল। “ওকে। এটাই হবে তোমার লাইন অব অ্যাপোচ। টার্গেটের এক মাইল পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী বাতাস পাবে। চেষ্টা করবে মাটি থেকে হাজার ফুট উঁচুতে থাকতে। ওয়াটার টাওয়ার পার হয়ে গেলেই গ্যাস ভালব খুলে দেবে। এগুলোর গায়ে বেশ স্পষ্ট নেভিগেশনলি ওয়ার্নিং লাইটস জ্বলছে।”
“ইয়েস” জানাল মাইকেল। “আমি ওই এলাকা দিয়ে গতকালও উড়ে এসেছি। স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট জ্বলবে। লেজার শো’ও হবে-মিস্ করার কোনো মানেই হয় না।”
“ওয়েল ডান, কমরেড।” নিজের সবচেয়ে দুস্পাপ্য হাসিগুলোর একটি মাইকেলকে উপহার দিল রামোন, “তুমি বেশ অসাধারণ প্রস্তুতি নিয়েছ।”
নিচের দিকে তাকাল মাইকেল আর বেন তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “আমি তো একটা’র খবরে শুনেছি যে দুপুরের মধ্যেই ওখানে আরো দুই কোটি দর্শক জমে যাবে। তাই ভরসটার ওপেনিং স্পিচ দিতে আসতে আসতে আরো হাফ মিলিয়ন। স্বাধীনতার জন্য আমাদের আজকের আঘাত কেউ ঠেকাতেই পারবে না।”
“সন্ধ্যা সাতটায় ভরস্টারের বক্তৃতা দেবার কথা।” শো কমিটির ইস্যু করা বিজ্ঞাপনের পুস্তিকাৰ্প তুলে নিল রামোন। বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ল শুরুর দিককার প্রোগ্রামগুলো। কিন্তু কয়েক মিনিট দেরি তো হতেই পারে। আর সম্ভবত চল্লিশ মিনিট থেকে শুরু করে ঘণ্টাখানেক বক্তৃতা দেবে। মিলিটারি ট্যাটু শুরু হবে রাত আটটায়। তুমি কখন রওনা দেবে?”
“যদি আমি ১৮৪৫ ঘণ্টায় রওনা দেই তাহলে আটচল্লিশ মিনিটে পৌঁছে যাবো। গতকালও সময় হিসাব করে দেখেছি। তার মানে সাতটা তেত্রিশে টার্গেটের উপর থাকব।”
“তাহলেই চলবে।” একমত হলো রামোন। “ভস্টার নিশ্চয় তখনো কথা বলতে থাকবে। দু’বার ঘুরে যাবে রেঞ্জের মধ্যে। তারপর পশ্চিমে ঘুরে সোজা বতসোয়ানা বর্ডার। রালেই তাবাকা’র সাথে কতটা নাগাদ দেখা করতে পারবে?”
“তিন ঘণ্টা পনের মিনিট” উত্তরে জানাল মাইকেল। “আজ রাতে প্রায় এগারেটার দিকে পৌঁছে যাবো। এই সময়ের মধ্যে বাড়তি কোনো গ্যাস থাকলেও তা নষ্ট হয়ে যাবে।”
“ফ্লেয়ার ছেড়ে এয়ারস্ট্রিপে আলো জ্বালিয়ে রাখবে রালেই তাবাকা। ল্যান্ড করার সাথে সাথে গ্যাস ইকুপমেন্ট সরিয়ে প্লেনে আগুন ধরিয়ে দিও। সেখান থেকে রালেই তোমাকে জাম্বিয়া দিয়ে বের করে টার্সিও বেসে নিয়ে যাবে।
দুই ভাইয়ের দিকে তাকালো রামোন। “তো, তাহলে এই হলো ব্যাপার। জানি এরই মাঝে ডজনখানেক বার বলা হয়ে গেছে, তবুও আর কোনো প্রশ্ন আছে?”
মাথা নাড়ল ভাতৃদ্বয়। মুখ বাঁকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসল রামোন। গায়ের রঙ আর চুলের দিক থেকে আলাদা হলেও এ দুই ভাইয়ের মাঝে অদ্ভুত কিছু মিল আছে।
এই ধরনের বাধ্যতা আর দ্বিধাহীন বিশ্বাস ব্যতীত বিপ্লব আসলে কখনো সফল হতে পারত না; আপন মনেই ভাবল রামোন। কেমন যেন ঈর্ষা হলো ওদের দেখে। থাকুক, ওরা না হয় বিশ্বাস করুক যে এই একটামাত্র দায়িত্ব পালন করলেই বদলে যাবে পৃথিবী আর সমাজতন্ত্রের নতুন সূর্যোদয় হবে। কিন্তু রামোন জানে যে কোনো কিছুই এত সহজ নয়।
দুই ভাইয়ের অন্ধ বিশ্বাস দেখে খুশি হলেও রামোন বুঝতে পারছে না যে হাফ মিলিয়ন মানুষ মেরে ফেলে এর পরের ধাপ রেড টেরর হজম করার মতো এদের কলজের জোর আছে কিনা।