“তুমি এটা দিয়ে কী করবে?” নার্ভাস হয়ে গেল বেলা। “বেন আর মিকি
“বেন আর মিকি’র কয়েকজন চমৎকার দোস্ত আছে।” আবারো বেল্টের সাথে রিভলবার ঝালিয়ে নিল শন।
“এই তো এসে গেছি” নিজের সিটে এগিয়ে বসল বেলা। সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওই তো মিকি’র বাড়ির গেইট দেখা যাচ্ছে।”
বি এম ডব্লিউ’র গতি ধীর করে কাদামাটির রাস্তায় নেমে গেল শন। বিল্ডিং’এর সামনে এসে তারপর আবার আড়াআড়ি ঘুরিয়ে ফেলল বি এম ডব্লিউ’র নাক। “কেন এরকম করছ?” জানতে চাইল বেলা।
“আমি পায়ে হেঁটে যাবো। আমার আগমনবার্তা জানাবার কোনো মানে হয় না।” জানাল শন্।
“কিন্তু তুমি রাস্তার উপর পার্ক করছ কেন?”
“যাতে কেউ তাহাহুড়া করে পালাতে না পারে।” ইগনিশন থেকে চাবি বের করে লাফ দিল শন্।
“তুমি এখানেই থাকো। না, গাড়ির ভেতরে না। ওদিকের গাছগুলোর ভেতরে লুকিয়ে থাকো। আর আমি না ডাকা পর্যন্ত মাথা বের করবে না, ঠিক আছে?”
“ইয়েস শন।”
“আর দরজা ঠাস করে আটকাবে না।” প্যাসেঞ্জার সিট থেকে পিছনে বের হয়ে গেল বেলা। “এখন বলল, মিকি ওর প্লেন কোথায় রাখে?”
“ফুল বাগানের শেষ মাথায়, বাড়ির পেছনে।” বুঝিয়ে দিল বেলা, “এখান থেকে না দেখতে পেলেও ভেতরে গিয়ে মিস্ করার উপায় নেই। বেশ বড় করোগেটেড টিন শেড আর সবকিছুই ভাঙ্গা-চোড়া, জং ধরা।”
“ঠিক আমাদের মিকির মত।” দাঁত কিড়মিড় করে উঠল শন্। “আমি যা বলেছি মনে রাখবে কিন্তু। যাও, এখন সরে যাও।” দৌড় দিল শন।
রাস্তার থেকে নেমে ফল বাগান আর চিকেন শেডের ওপাশ দিয়ে দৌড়াতে লাগল শন। এপাশে মূল দালান। মাত্র কয়েকশ গজ গেলেই মেইন বারান্দা। দেয়ালের পিছনে হামাগুগি দিয়ে বসে খুব দ্রুত পুরো বিল্ডিং দেখে নিল শন্। সদর– দরজা আর সবকটি জানালা হাট করে খোলা; কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
দেয়ালের উপর চড়ে বসে সহজেই এপাশে নেমে এলো শন। তারপর সদর দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে। সিটিং রুম আর কিচেন শূন্য হলেও সিঙ্কের উপর পড়ে আছে নোংরা বাসন কোসনের স্তূপ। তিনটা বেডরুমের প্রতিটা দেখেই বোঝা গেল যে বাসিন্দারা মাত্রই কোথায় গেছে বিছানা এলেমেলো। মেঝের উপর ছড়িয়ে আছে কাপড়। বাথরুম আর ড্রেসিং টেবিলের উপর মেনস টয়লেট আইটেমস। ‘
একটা শার্ট তুলে নিয়ে কলার দেখল শন্। ভেতরের দিকে লাল সুতা দিয়ে নাম সেলাই করা আছে : “বি. আফ্রিকা।”
শার্ট ফেলে দিয়ে নিঃশব্দে রান্নাঘরের দরজায় গেল শন পোকায় খাওয়া ফল বাগানের গাছগুলোর দিকের দরজাটা খোলা। এগুলোর পেছনেই দেখা গেল করোগোটেড শেড়অলা বিশাল শেড।
দৌড় দিয়ে ফল বাগানের ভেতর গিয়ে গাছগুলোর পেছনে লুকিয়ে পড়ল শন। তারপর এভাবেই চলে গেল শেড় অব্দি। পাতলা করোগেটেড গ্যালভানাইজড শিটের গায়ে কান পাততেই শোনা গেল কয়েকজন পুরুষের গলা। কিন্তু কথাগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। বেল্টের রিভলবার চেক করে নিল শন। দরকার পড়লেই যেন দ্রুত টেনে নিতে পারে হাতল। এরপর সহজ ভঙ্গিতে শেডে’র পিছনের দেয়াল ধরে এগিয়ে গেল ছোট্ট সবুজ দরজাটার দিকে। কিন্তু শন পৌঁছবার আগেই খুলে গেল দরজা। ঝকমকে রোদে বেরিয়ে এলো দু’জন পুরুষ।
***
নিজের কর্মদক্ষতা নিয়ে বেশ গর্ব বোধ করে বেন আফ্রিকা। সেসনা সেঞ্চুরিয়ন এয়ারক্রাফটের পাইলটের সিটে হাটু গেড়ে বসে ডান দিকের প্যাসেঞ্জার সিটের সামনের ডেকে বেধে ফেলল জোড়া সিলিন্ডার।
বোল্ট-হোলগুলো খুব সাবধানে ড্রিল করল যেন কন্ট্রোল কেবলস্ এর কোনো ক্ষতি না হয়। চাইলে সিরিল্ডারগুলোকে কেবিনের ফ্লোরে এমনিতেই শুইয়ে রাখতে পারত; কিন্তু তার ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা এ কাজ করতে দেয়নি। ফ্লাইটের সময় জোর বাতাসের ধাক্কা খেলেই ভালব অথবা টিউবের ক্ষতি হবে। স্টিলের বোতলগুলোকে এমনভাবে বসালো যেন পাইলট কিংবা তার প্যাসেঞ্জার যে কেউ চাইলেই ভালব-হ্যান্ডেল ধরতে পারবে।
যে বোতলটাতে এলিমেন্ট এ আছে সেটার গায়ে, মাঝখানে তিনটা লাল রিংঅলা সাদা-কালো চেক প্যাটার্নের রঙ করা হয়েছে। আর এলিমেন্ট বি হল শুধু একটা কালো রিংঅলা লাল টকটকে সিলিন্ডার। প্রতিটি বোতলের গায়েই লেখা আছে নির্দিষ্ট সিরিয়াল নাম্বার।
মেডিকেলের দুটো সাধারণ অক্সিজেনের বোতলকে এমনভাবে কাজে লাগানোর বুদ্ধিও বে’নের মাথা থেকেই বেরিয়েছে। নিজ হাতে খোদাই করেছে সিরিয়াল নাম্বার। এছাড়া বোতলগুলো এতই ছোট যে বিশেষভাবে সেলাই করা ওভারকোর্টের পকেটে করে ক্যাপরিকর্ণ কেমিকেলস থেকে বের করে আনতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। অসম্ভব চতুরতার আশ্রয় নিয়েই পার করে এনেছে প্ল্যান্টের মেইন গেইটের সিকিউরিটি চেক।
দু’টো বোতলকে স্টেইনলেস স্টিলের টি-পিস দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে যা আবার মুখের কাছে স্পেশ্যাল লেফট-হ্যান্ড থ্রেড দিয়ে আটকে দেয়া আছে। এগুলোকে ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই স্কুর গায়ে টোকা দিয়ে খুলে যাবে প্রতিটা বোতল। তারপর ভালব হ্যাঁন্ডেল ধরে হাফ-টার্ন দিলেই টি-পিসের মাধ্যমে একসাথে মিশে যাবে দুই বোতলের গ্যাস। হোসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে নার্ভ গ্যাস। পেছনের লাগেজ কম্পার্টমেন্টের সামনের দুটো সিটের মাঝখানে লাগানো হয়েছে হোস।
কম্পার্টমেন্টের ফ্লোরবোর্ডস আর সেঞ্চুরিয়নের আউটার মেটাল স্কিনের গায়ে তিন সেন্টিমিটার গর্ত করেছে বেন! গ্যাস হোসের শেষাংশ এই ড্রিল করা গর্তের মাঝখান দিয়ে পৌঁছে গেছে দশ সেন্টিমিটার রাস্তা; ফিউজিলাজ। প্রাটলি’র পুডিং লাগিয়ে হোস’কে জায়গামতো বসিয়ে রাখা ছাড়াও ছোটখাট গ্যাপ ভরে দিয়েছে। শুকিয়ে যা লোহার চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে।