“কমরেড জেনারেল”-গ্রুকুটি করে উঠলেন রালেই, “প্রথম থেকেই তো এটা আমার অপারেশন। দুই ভাইকে এতদিন আমিই সামলে এসেছি।”
“হ্যা” অধৈর্য হয়ে মাথা নাড়ল রামোন, “ভাল কাজ দেখিয়েছেন। এর সমস্ত কৃতিত্বই আপনার। কিন্তু এখন থেকে এ দায়িত্ব থেকে আপনাকে অব্যাহতি দেয়া হলো। এয়ারক্রাফট পাওয়া গেলেই আমি দক্ষিণে উড়াল দিব আর আপনিও আমার সাথে যাবেন।”
***
“এখানেই এর শেষ নয় বেলা” চিন্তিত ভঙ্গিতে জানালেন শাসা, “এমন ভাব করে লাভ নেই যে আর কিছু কখনো ঘটেনি। যাই হোক, এখন যেহেতু নিকোলাস ওয়েল্টেভ্রেদেনের নিরাপত্তায় চলে এসেছে তখন এ ব্যাপারে আরো কথা বলা প্রয়োজন। তোমার আর নিকোলাসের জন্য পারিবারের সকলেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছে শ’নের রেজিমেন্টের একজন ট্রুপার অপরিচিত টগবগে সেই তরুণ তোমাকে বাঁচাবেই প্রাণ দিয়েছে। এখন তাই আমাদেরকে সত্যি কথাটা খুলে বলো।”
আরো একবার গান রুমে এসে জড়ো হলো পুরো কোর্টনি পরিবার।
ফায়ারপ্লেসের একপাশে চেয়ারে বসে আছেন দাদি। একেবারে সিধে হয়ে বসে আছেন বৃদ্ধা। পাতলা দেহত্বক ভেদ করে দেখা যাচ্ছে হাতের নীল শিরা। একদা ঘন চুলের গোছা এখন রুপালি রঙ ধারণ করেছে; কিন্তু অভিব্যক্তি এতটুকু নরম হয়নি।
“আমরা সবকিছু শুনতে চাই ইসাবেলা। বিস্তারিতভাবে সবকিছু না বলা পর্যন্ত তুমি এ রুম থেকে বাইরে যেতে পারবে না।”
“নানা, আমি অনেক লজ্জিত; কিন্তু কিছু করার ছিল না।”
“আমি তো কোন অজু হাত কিংবা অনুশোচনা শুনতে চাইনি, মিসি। আমি শুধু সত্যটা জানতে চাই।”
“বুঝতে চেষ্টা করো বেলা, আমরা জানি যে তুমি দেশের স্বার্থ, পরিবার কিংবা নিজের ব্যাপারেও কোনো কিছুই চিন্তা করো নি। কিন্তু এবারে এই ক্ষতির ভরপাই করা আমাদের দায়িত্ব।” মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত নিয়ে ফায়ারপ্লেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন শাসা। এবারে খানিকটা নরম করলেন গলার স্বর, “আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চাই বেলা; কিন্তু সেটা করতে হলে সত্যটা অবশ্যই জানতে হবে।”
ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকাল বেলা, “আমি, তুমি আর নানা একাকী কথা বলতে পারি না?” ভাইদের দিকে তাকাল, বেলা। জানালার নিচে আর্মচেয়ারে বসে আছে গ্যারি। আগুন না ধরিয়েই মুখের একপাশ থেকে আরেক পাশে নাড়াচাড়া করছে সিগার। জানালার নিচে বসে গ্যারি’র সামনে পা ছড়িয়ে দিয়েছে শন্। বুকের উপর আড়াআড়ি করে রেখেছে রোদে পোড়া পেশি বহুল দুই হাত।
“না”, দৃঢ় স্বরে জানালেন সেনটেইন। “তোমার আর নিকি’র জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখেছে ওরা। যদি তুমি নিজের আর পরিবারের জন্য আরো কোনো ক্ষতির ব্যবস্থা করে রাখো তাহলেও ওরাই এগিয়ে যাবে তোমাকে বাঁচাতে। তাই এত সহজে তোমাকে ছাড়া যাবে না। ওদেরও সবকিছু শোনার অধিকার আছে। কিছুই বাদ দেবে না-বুঝেছ?”
আস্তে আস্তে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিল বেলা, “ওরা আমার কোড নেইম দিয়েছিল লাল গোপাল। “
“ঠিক করে কথা বলো, আমতা আমতা করবে না” বেলা’র পায়ের কাছে নিজের লাঠি ঠুকলেন সেনটেইন, সন্ত্রস্ত্র ইসাবেলা চোখ তুলে তাকিয়েই গড়গড় করে বলে দিল, “ওরা আমাকে যা যা বলেছে আমি করেছি” তাকিয়ে আছে দাদিমার মুখের দিকে, “নিকি তখনো একেবারে ছোট, মাত্র এক মাস বয়স; ওরা একটা ফিল্ম বানিয়ে আমাকে দেখিয়েছে। আরেকটু হলে আমার বেবি ডুবিয়েই মেরে ফেলেছিল। পা ধরে ওকে চুবিয়ে…থেমে গেল বেলা। তারপর গভীরভাবে দম নিয়ে আবার শুরু করল, “আমাকে সতর্ক করে দিয়েছে যে পরের ফিল্মে নিকির একেকটা অংশ কেটে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে-ওর আঙুল, পা, হাত আর তারপর…” বহুকষ্টে উচ্চারণ করল বেলা, তারপর ওর মাথা।”
বিমূঢ় হয়ে শুনছে সবাই। অতঃপর নীরবতা ভাঙ্গলেন সেনটেইন, “বলে যাও।”
“আমাকে ড্যাডির সাথে কাজ করার কথা বলেছে। যেন আর্মসকোরের কাজে পুরোপুরি যোগ দেই।” শাসা চোখ কুঁচকে তাকাতেই নিজের আঙুল মোচড়াতে লাগল বেলা, “অ্যায়াম সরি, ড্যাডি। আমাকে আরো বলেছে পারিবারিক কানেকশন কাজে লাগিয়ে যেন রাজনীতিতে ঢুকে পড়ি, সংসদের আসনের জন্য লড়াই করি।”
“হঠাৎ করেই রাজনীতিতে তোমার আগ্রহ দেখে আমার আসলে সন্দেহ করা উচিত ছিল।” উত্তপ্ত কণ্ঠে মন্তব্য করলেন সেনটেইন।
“আই অ্যাম সরি, নানা।”
“বারে বারে সরি বলো না তো।” খেঁকিয়ে উঠলেন শাসা, “এতে এখন আর কিছু যাবে আসবে না। বরঞ্চ শুনতেই বিরক্ত লাগছে। শুধু যা বলার বলে যাও।”
“কিছুদিনের জন্য আমার কাজ থেকে ওরা আর কিছুই চায়নি। প্রায় দুই বছর। এরপরই একের পর এক আদেশ আসতে লাগল। প্রথমটা ছিল সিমেন্স রাডার চেইন।”
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন শাসা। হাত বাড়িয়ে ব্লেজারের বুক পকেট থেকে রুমাল তুলে নিলেন।
“এরপর আরো বেশি বেশি অর্ডার দিতে লাগল।”
“দ্যা স্কাইলাইট প্রজেক্ট?” জানতে চাইলেন শাসা। বেলা মাথা নাড়তেই মায়ের দিকে তাকালেন শাসা।
“তুমি ঠিকই ধরেছিলে, মা?” আবারো মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি এক কাজ করো, সবকিছু লিখে ফেলো। যা যা ওদেরকে দিয়েছ, সব। আমি একটা লিস্ট চাই-তারিখ, কাগজপত্র, মিটিং সবকিছু। আমাদের কী কী গেল তার সবকিছু জানা প্রয়োজন।”
“ড্যাডি… ইসাবেলা বলা শুরু করলেও কেন যেন খানিকক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না।