“হোল্ড ইট, শন” দৌড়ে এসে ওকে শান্ত করতে চাইল ইসাউ। “তুমি আবার কোত্থেকে এলে?”
“আরেকটু হলেই তুমি আমাদের অ্যামবুশের মাঝে পা দিতে।” জানাল ইউ। “আর এক সেকেন্ড এগোলেই পিছনে আর পিজির রকেটের বাড়ি খেতে। আমরা এখানেই ছিলাম।” রাস্তার দিকে ইশারা করল ইসাউ।
“তোমাদের নৌকা কই?”
“নদীতে দুইশ গজ দূর।”
“তোমার লোকগুলোকে নিয়ে এসো-তোমার সাথে আমরাও ফিরে যাবো।” মাথা উঁচু করে তাকাল শন।
“লাইটগুলোকে নিভিয়ে দাও” নিজের একজন লোককে আদেশ দিল ইসাউ। পার্ক করা জিপের গায়ে ঝুঁকে সুইচে হাত লাগাতেই নিভে গেল হেডলাইট।
চুপচাপ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কান পাতল সকলে।
“এয়ারস্ট্রিপের দিক থেকে দ্রুত নেমে আসছে ট্রাক।”
“আরো কয়েকটা বাঞ্চোত” ঘোষণা করল ইসাউ।
“নৌকায় চলো” আদেশ দিল শন।
দল বেঁধে একসঙ্গে এগোল সবাই। একশ গজ যাবার পর হুইসেল দিল ইসাউ; সামনের অন্ধকার থেকে একইভাবে উত্তর পাওয়া গেল। কিন্তু রোড ব্লক দেবার জন্য পথের মাঝখানে টেনে আনা মরা তাল গাছের গুঁড়ির গায়ে পা। বেঁধে হোঁচট খেল শন।
“কাম অন রাস্তা থেকে ডেকে পাঠাল ইউ। “নৌকা এইদিকে।”
কথা বলার মাঝখানেই সামনের গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে হেডলাইটের আলো দেখা গেল। এয়ারস্ট্রিপ থেকে নেমে আসছে পুরো এক কনভয়।
শনের হাতের মাঝে সমানে নড়ছে নিকি। ওকে থামানোর জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করছে বেলা। “ঠিক আছে নিকি ডার্লিং, এরা সকলে আমাদের বন্ধু। ওরা আমাদেরকে নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে।”
“এটাই আমার ঘর-আমি বাবাকে চাই। ওরা আদ্রাকে মেরে ফেলেছে। আই হেইট দেইম! আই হেইট ইউ! আই হেইট দেইম!” স্প্যানিশে চিৎকার করে উঠল নিকি।
এবারে রেগে গিয়ে নিকি’কে খুব জোরে ঝাঁকি দিল শন। “আর একটাও যদি কোনো কথা বলে, তোমার ঘাড় থেকে ছোট্ট মাথাটা আলাদা করে দেব কিন্তু।”
“এই পথে এসো।” রোড ব্লক থেকে তাদেরকে দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো ইসাউ। আর পঞ্চাশ গজ গেলেই পৌঁছে যাবে নোঙ্গর করে রাখা নৌকাগুলোর কাছে।
চট করে একবার পিছনে তাকিয়ে রাস্তার মোড়ে পৌঁছে যাওয়া গাড়ি বহরের দিকে তাকাল শন। হেডলাইটের আলো দেখা গেলেও নদীর কিনার শ’দেরকে আড়াল করে রেখেছে। প্রতিটি ট্রাকের পেছনে গাদাগাদি করে থাকা সশস্ত্র লোকগুলোকে স্পষ্ট দেখতে পেল শন।
সবচেয়ে কাছের বোটে বেলা’কে তুরে দিল শন। পায়ের চারপাশে ঝুলতে থাকা ভেজা জার্সিতে পা বেঁধে উল্টে পড়ে গেল বেলা।
বিরক্তিতে ঘোৎ ঘোৎ করে ওর পাশেই নিকিকে নামিয়ে দিল শন। কিন্তু বড় একটা ভুল করে ফেলল।
রাবার বলের মতো গোল হয়ে শ’নের হাতের নিচ দিয়ে তীরে নেমেই দৌড় দিল নিকি।
“ইউ লিটল ডেভিল” ঘুরে দাঁড়িয়েই ওর পিছু নিল শন্।
“মাই বেবি” কাঁদতে কাঁদতে নৌকা থেকে লাফিয়ে নামল বেলা কাদার ভেতর পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে দু’জনের পিছনে দৌড় দিল সেও।
“ফিরে এসো নিকি-ওহ্ প্লিজ ফিরে এসো।”
বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা কনভয়ের দিকে এগোচ্ছে নিকি। খরগোশের মতই আঁকাবাকা হয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে শন’কে। রাস্তা থেকে মাত্র বিশ ফুট দূরে থাকতেই শূন্যে ডাইভ দিয়ে নিকি’র পা ফেলল শন। সেকেন্ডখানেক পরেই ওদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল বেলা।
হেডলাইটের আলো সোজা এসে ওদের উপর পড়লেও ছোট একটা কাটাঝোঁপের আড়ালে শুয়ে থাকায় তিনজনকে দেখতে পেল না প্রথম ট্রাকের সৈন্যরা। আবারো চিৎকার করে বেরিয়ে যেতে চাইল নিকি; কিন্তু এক হাত দিয়ে মুখ চেপে বজ্রমুষ্টিতে ওকে আটকে রাখল শন।
ওদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল ট্রাক। কিন্তু তাল গাছের গুঁড়ি দেখে বাধ্য হলো রাস্তার মাঝে থেমে যেতে। অন্ধকারে শন বোন আর বোনপো’কে নিয়ে যেখানে লুকিয়ে আছে তা থেকে মাত্র বিশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে গেরিলা ভর্তি ট্রাক।
নিকি’কে ধরে রেখেই ইসাবেলা’র মুখখানা মাটিতে চেপে ধরল শন। অন্ধকারে এতক্ষণ আয়নার মতই চকচক করছিল ইসাবেলা’র ফর্সা চেহারা।
ট্রাকের ক্যাব থেকে একজন লাফিয়ে নেমে রোড ব্লক দেখে এলো; তারপর চিৎকার করে কোন একটা আদেশ ও দিল। সাথে সাথে কমব্যাট ক্যামোফ্লেজ পরিহিত ডজন খানেক গেরিলা ট্রাক থেকে নেমে গাছের গুঁড়ি ধরে টানাটানি শুরু করে দিল।
একটু পরেই রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যেতেই আদেশ দাতা’র চেহারার উপর পড়া হেড লাইটের আলোতে লোকটাকে দেখে চিনে ফেলল বেলা। এই চেহারা একবার দেখলে কখনো ভুলে যাবার মতো নয়। এই লোকটাকেই সৎ ভাই বেন আফ্রিকার সাথে ভ্যানে বসে থাকতে দেখেছিল বেলা। বেন আর এই লোকটা মিলেই মাইকেল কোর্টনির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। আর আরেকটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে এতটা সুদর্শন আর কোনো কৃষাঙ্গ তরুণ দেখেনি বেলা। লম্বা-চওড়া রাজকীয় চেহারার অধিকারী যুবক ঠিক একটা শকুনের মতই হিংস্র।
মাথা ঘুরিয়ে এদিকেই তাকাল কৃষাঙ্গ তরুণ আর মনে হল ঠিক বেলার চোখে চোখে তাকিয়ে আছে। আর তারপরই আবার ঘুরে নিজের লোকদের দিকে ফিরে গেল। রাস্তা পরিষ্কার হবার সাথে সাথে ট্রাকে উঠে চলে গেল সকলে।
এরপর বাকি ট্রাকগুলোও একের পর এক চলে গেল বেলা’র সামনে দিয়ে। শেষ জোড়া হেডলাইটের আলো দূরে চলে যেতেই নিকি’কে হাতের নিচে ধরে বেলা’কে তুলে দাঁড় করাল শন। তারপর নিয়ে এলো নদী তীরে।