জুডিথ যেখানে বসে আছে জাহাজটি সরাসরি সেদিকেই এগিয়ে আসছে। কিন্তু জাহাজটি সে এর পূর্বে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু জাহাজের লোকদেরকে দেখে মনে হচ্ছে তারা যুদ্ধের ধামামা বাজিয়ে কোনো ক্ষতি সাধনের জন্যই এগিয়ে আসছে।
জাহাজটাতে যুদ্ধের সবরকম প্রস্তুতিই দেখা যাচ্ছে। সব গানপোর্টই ভোলা দেখা যাচ্ছে। কামানের লম্বা নল বের হয়ে আছে।”
জুডিথ-এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ডেস্ক-এর উপরের ড্রয়ারটা টান দিল। ওটাতে দুই জোড়া পিস্তল সাজানো আছে। একজোড়া পিস্তল সে কোমড়ের হলুদ ফিতায় আটকে রেখে আরেকজোড়া পিস্তল দুই হাতে নিয়ে গুলি করার জন্য উদ্যত হলো। এরপর কেবিন-এর দরজাটা পিঠ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খুলে ডেক-এর দিকে উঠতে শুরু করল।
সে ডেক-এর ওপর পৌঁছার পূর্বেই তার পায়ের নিচে জাহাজটা কাঁপতে থাকল এবং এরপর আরও একটা শক্ত ধাক্কা লাগল ওর শরীরে। ক্রমাগত বন্য চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে আশেপাশে। সে দ্রুত ডেক-এর ওপর উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে থাকল।
আরেকটা জাহাজ গোল্ডেন বাউ-এর পাশে দাঁড় করানো আছে। ওই জাহাজটা থেকে অনেক হুক বেরিয়ে ওটাকে বাউ-এর সাথে আটকিয়ে রেখেছে। গানেল-এর ওপর দিয়ে একটা লোকের মাথা দেখা যাচ্ছে। হাল-এর বর্ণনা শুনে-বিশেষ করে ওর মুখের কোণায় গোলাপি কাটা দাগ দেখে-সে লোকটাকে চিনতে পারল।
সেই পর্তুগীজ জাহাজের মালিক যে জাহাজে করে হালকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। লোকটির নাম জাও বারোস এবং জাহাজটির নাম হচ্ছে মাদ্রি দি ডিয়াস, সে এই মুহূর্তে নিশ্চিত যে বাউ-এর পাশে দাঁড় করানো জাহাজটিই হচ্ছে সেই জাহাজ।
এরপর আর কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা না করে ডান হাতে পিস্তলটা নিয়ে তাক করে গুলি ছুঁড়ে দিল জেনারেল জুডিথ নাজেত। গুলিটা গিয়ে বারোস-এর কপালের মাঝখানে আঘাত করল। বারোস এমনভাবে কেঁপে উঠল যে দেখে মনে হচ্ছে, গুলিটা তার মাথা ভেদ করে চলে গিয়েছে। বাতোস কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার সাথে-সাথে তার মাথার জায়গায় আরেকটা মাথা ভেসে উঠল।
এই মাথাটা হচ্ছে মানুষের চেহারা বিহীন একটা মাথা, যেখানে মুখের পরিবর্তে চামড়ার একটি মুখোশ পরানো আছে। মুখোশে একটিমাত্র চোখ আর ঈগলের ঠোঁটের মতো নাক রয়েছে। নাক-এর নিচে সাদা দাঁতের কতগুলো চিহ্ন আঁকা আছে যেগুলো দেখে মনে হচ্ছে যে সার্কাস-এর পাপেট শো করার জন্য কাউকে সাজানো হয়েছে।
“বুজার্ড,” জুডিথ এমনভাবে বলে উঠল যে মনে হচ্ছিল তার হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং সমস্ত শরীর প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে। সে ডান হাতের ফাঁকা পিস্তলটা ফেলে দিয়ে বাম হাতের পিস্তলটা নেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু বুজার্ড এত দ্রুত এগিয়ে এসে ব্লেডটা চালনা করল যে পিস্তলটা তার হাত থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল। পিস্তলটা গড়াতে গড়াতে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। সেই সাথে আঘাতের ফলে তার হাতটা যেন জমে বরফ-এ পরিণত হয়েছে। তাই সে হাত দিয়ে কোমড়ের ফিতায় আটকানো পিস্তলটা ধরারও চেষ্টা করল না। কারণ তাহলে হয়ত দানবটা তলোয়ার দিয়ে তার হাতই কেটে ফেলবে। যখন সে বুঝতে পারে যে সে বুজার্ড-এর তলোয়ার-এর নিচে আটকা পড়ে যাচ্ছে তখন সে আস্তে আস্তে পেছাতে থাকে। সিঁড়ি দিয়ে পেছন দিকে নামতে নামতে তার পা গাউনের নিচের অংশের ওপর গিয়ে পড়ে। হ্যাঁচকা টানের কারণে কোমড় থেকে পিস্তল দুটো খুলে মাটিতে পড়ে গেল। ওগুলোর একটা থেকে গুলি বের হয়ে কাঠের দেয়ালে গিয়ে লাগল।
সে সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছে উপরে তাকিয়ে দেখতে পেল বুজার্ড অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নিচে নেমে আসছে। কিন্তু সে অন্যান্য মানুষের চেয়ে বেশ উঁচু এবং তার কাধ বেশ চওড়া, তাই তাকে বানরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নামতে হচ্ছে।
জুডিথ ঘুরে দাঁড়িয়ে তার কেবিন-এর দরজার দিকে দৌড়াতে থাকে। কেবিন-এ প্রবেশ করে সে ঝনাৎ করে দরজা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করল।
কিন্তু ততক্ষণে বুজার্ড তীব্র গতিতে দরজার গায়ে ধাক্কা বসিয়ে দিয়েছে। ছিটকে বিছানার ওপর পড়ে গেল জুডিথ।
বুজার্ড জুডিথ-এর মাথা বরাবর তলোয়ার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করল কিন্তু জুডিথ গড়িয়ে অন্যপাশে সরে যাওয়ায় অল্পের জন্য শেষ রক্ষা হলো। বুজার্ড-এর তলোয়ারটা বিছানার কাঠের সাথে আটকে গেল। এক হাত দিয়ে তলোয়ারটা ছুটানোর চেষ্টা করতে-করতে মুখ দিয়ে নোংরা ভাষা ছুঁড়ে মারছিল সে।
“নোংরা বেশ্যা, আমি তোর পেট কেটে ওটার ভেতর থাকা জারজটাকে বের করে আনব। এরপর আমি ওটাকে টুকরা টুকরা করে ফেলব। তারপর মাংসগুলো তোকে খাইয়ে দেব।” এখনো সে ব্লেডটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু সফল হচ্ছে না।
জুডিথ বিছানা থেকে গড়িয়ে নেমে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার কিছু একটা করা উচিত। কিন্তু এই মুহূর্তে তার হাতে কোনো অস্ত্র নেই এবং বুজার্ড একমাত্র দরজাটি আগলে দাঁড়িয়ে আছে। এখন তার একমাত্র পালাবার পথ হচ্ছে কেবিনের জানালা। সে যদি জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে সাগরে পড়তে পারে তাহলে অন্তত সাঁতরে তীরে উঠার একটা সুযোগ থাকবে।
জুডিথ পাটাতনের কাছ থেকে সরে এসে জাহাজের স্টার্ন-এর দিকে এগুতে থাকে। বুজার্ড দেখতে পায় জুডিথ-এগিয়ে আসছে। তাই সে তলোয়ার-এর বাঁট ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে জুডিথকে আটকাতে যায়। জুডিথের কাঁধ লক্ষ্য করে ঘুসি চালিয়েছে বুজার্ড, যেটা তার লক্ষ্য মিস করেনি। পিছলে নিজের ডেস্কের ওপর পড়ে গেল জেনারেল জুডিথ নাজেত। এরপর লাফ দিয়ে ডেস্কের ওপর উঠে দাঁড়াল বুজার্ড। সে তার তিন আঙুল বিশিষ্ট হাত দিয়ে জুডিথকে ধরতে গেল।