আমার কথা কীভাবে জানতে পেরেছেন? জিজ্ঞেস করল তাইতা।
গোপন বিদ্যা ও সত্তা দিয়ে, ইথারে এক ধরনের ঝামেলা ছড়িয়ে দেন আপনি, দূর থেকে টের পাওয়া যায়, ব্যাখ্যা করলেন কশ্যপ।
কী চান আমার কাছে?
কিছু না, আবার অনেক কিছু, হয়তো এমনকি আপনার জীবন।
খুলে বলুন।
হায়! অনেক দেরি হয়ে গেছে। মরণের কালো চাঁদ তাড়া করে ফিরছে আমাকে। সূর্যাস্তের আগেই চলে যাব আমি।
আমার জন্যে রাখা কাজটা কি অনেক গুরুত্বপূর্ণ?
এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর হতে পারে না।
কী করতে হবে আমাকে? জিজ্ঞেস করল তাইতা।
আমি চেয়েছিলাম আপনার জন্যে অপেক্ষায় থাকা সংগ্রামের জন্যে আপনাকে তৈরি করে যাওয়া, কিন্তু এখন অপ্সরাদের কাছে জানতে পারলাম আপনি নপুংশক। আপনি এখানে আসার আগে জানা ছিল না কথাটা। যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবে এখন আর আপনাকে আমার বিদ্যা শেখাতে পারব না।
সেটা কেমন? জানতে চাইল তাইতা।
দৈহিক বিনিময়ে।
ঠিক বুঝলাম না।
আমাদের যৌন মিলনের প্রয়োজন হতো। আপনার ক্ষতের কারণে সেটা সম্ভব নয়। নীরব রইল তাইতা। ওকে সম্পর্শ করতে শীর্ণ থাবার মতো একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন কশ্যপ। কোমল কণ্ঠে কথা বললেন তিনি। আপনার আভা দেখে বুঝতে পারছি ক্ষতের কথা তুলে আঘাত দিয়ে ফেলেছি। সেজন্যে দুঃখিত। কিন্তু আমার হাতে সময় নেই। সোজাসাপ্টা কথা বলতেই হচ্ছে।
নীরব রইল তাইতা। তো খেই ধরলেন কশ্যপ। সুমনার সাথে বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। ওর মনটাও খুব পরিষ্কার। আমি চলে যাবার পর আমার কাছ থেকে শেখা বিষয়টুকু আপনাকে শেখাবে ও। আপনাকে বিচলিত করার জন্যে দুঃখিত।
সত্যি কথা বেদনাদায়ক হতে পারে, কিন্তু আপনি তা নন। আমাকে যা করতে বলবেন তাই করব।
তাহলে আমার সারা জীবনের শিক্ষা আর বিদ্যা সুমনাকে দেওয়ার সময় আমাদের সাথেই থাকবেন। পরে আপনার সাথে তা ভাগ করে নেবে ও। তখন আপনার দায়িত্ব পবিত্র প্রয়াসের জন্যে তৈরি হয়ে যাবেন আপনি, যেটা আপনার নিয়তি।
মেনে নেওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নোয়াল তাইতা।
জোরে হাত তালি দিল সুমনা, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল দুজন অচেনা অপ্সরা। দুজনই অল্প বয়সী, সুন্দরী; একজন কৃষ্ণকেশী, অন্যজন মধু রঙা চুলের অধিকারী। সুমনার সাথে দূরের দেয়ালের কাছে রাখা ছোট কাঁসারির দিকে এগিয়ে গেল ওরা। কয়লার আগুনে তীব্র গন্ধঅলা এক গামলা গুল্ম সেদ্ধ করতে সাহায্য করল ওকে। আরক তৈরি হয়ে গেলে কশ্যপের কাছে নিয়ে এল। একজন ওর মাথা ধরে রাখল, অন্যজন ওর ঠোঁটে ছোঁয়াল বাটিটা। শব্দ করে আরকটা খেলেন তিনি, চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ল খানিকটা, তারপর ক্লান্ত হয়ে তক্তপোষের উপর লুটিয়ে পড়লেন।
এবার দুই অপ্সরা সসম্মানে যত্নের সাথে নগ্ন করল ওকে। তারপর একটা অ্যালাবাস্টার শিশি থেকে সুগন্ধী মলম মাখাল কুঁচকিতে। গুঙিয়ে উঠলেন কশ্যপ। বিড়বিড় করে এপাশওপাশ মাথা দোলাতে লাগলেন। কিন্তু অপ্সরাদের নিপুন হাতের যত্ন ও ওষুধের প্রভাবে জেগে উঠল তার শিশ্ন।
সম্পূর্ণ ফুলে উঠলে ওর তক্তপোষের উপর সুমনা মিলিত হলো ওর সাথে এসে ফিসফিস করে তার কানে কানে কথা বলল: প্রভু, আমাকে আপনার যা কিছু দেবার আছে তা গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত।
আমি স্বেচ্ছায় তোমাকে তা হস্তান্তর করছি, ক্ষীণ ও অস্পষ্ট শোনাল কশ্যপের কণ্ঠস্বর। বুঝেশুনে কাজে লাগিয়ো। আবার এপাশ-ওপাশ মাথা দোলাতে শুরু করলেন তিনি। ভীতিকর ভঙ্গিতে হাঁ হয়ে আছে তার প্রাচীন চেহারা। তারপর সহসা আড়ষ্ট হয়ে গেলেন তিনি, গুঙিয়ে উঠলেন; তীব্র খিচুনীতে কেঁপে উঠল তার শরীর। প্রায় ঘণ্টাখানেক দুজনের কেউই নড়ল না। তারপর ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরিয়ে এল কশ্যপের গলা দিয়ে। তক্তপোষের উপর শিথিল হয়ে গেল তার দেহ।
আর্তনাদ ঠেকাল সুমনা। মারা গেছেন উনি বিপুল দুঃখ ও সহানুভূতির সাথে বলল ও। আস্তে করে কশ্যপের মরদেহ থেকে নিজেকে মুক্ত করে ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে ম্লান খোলা চোখজোড়া বুজে দিল। তাইতার দিকে তাকাল এবার।
সূর্যাস্তের সময় ওর লাশ পোড়াব আমরা। সারা জীবন আমার গুরু ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন কশ্যপ। আমার চোখে বাবার চেয়েও বেশি ছিলেন তিনি। এখন ওর সত্তা রয়েছে আমার সাথে। এক হয়ে গেছে আমার আত্মার সাথে। আমাকে ক্ষমা করবেন, মাগাস, কিন্তু এমনি ভীষণ অভিজ্ঞতা থেকে সামলে উঠতে অনেক সময় লাগবে আমার, ততক্ষণ আপনার কোনও কাজে আসব না আমি।
*
সেদিন সন্ধ্যায় ঘরের বাইরের অন্ধকার বেলকনিতে তানসিদের পাশে দাঁড়িয়ে নিচের মন্দিরের উদ্যানে যাজক কশ্যপের মরদেহ চিতায় পোড়ানো প্রত্যক্ষ করল তাইতা। মানুষটার সাথে আরও আগে পরিচয় হয়নি বলে এক ধরনের গভীর দুঃখ বোধ করল ও। এমনি সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের সময়টুকুতেও ওদের দুজনের আন্ত রিকতার ব্যাপারে সচেতন ছিল ও।
অন্ধকারে একটা কোমল কণ্ঠ কথা বলে উঠল, চমকে চিন্তায় ছেদ পড়ল ওর। ফিরে তাকাতেই সুমনাকে দেখতে পেল, চুপিসারে ওদের সাথে এসে যোগ দিয়েছে।
কশ্যপও আপনাদের দুজনের মাঝে বাঁধন সম্পর্কে সজাগ ছিলেন, তাইতার অন্য পাশে এসে দাঁড়াল ও। আপনওি সত্যের সেবাদাস। সে জন্যেই এমন জরুরি ভিত্তিতে আপনাকে তলব করেছিলেন তিনি। অত দূরে যাবার মতো শক্তিতে কুলালে নিজেই যেতেন। আপনার দেখা দৈহিক বিনিময়ের সময় সত্যির খাতিরে চূড়ান্ত মহান বিসর্জন দিয়েছেন তিনি। আপনাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আমার কাছে একটা বার্তা দিয়েছেন কশ্যপ। তার আগে আমি যেন আপনার বিশ্বাস পরীক্ষা করি সেটা চেয়েছেন তিনি। বলুন তো, গালালার তাইতা, আপনার ধর্ম বিশ্বাস কী?