মেরেন ওর জমিদারির নাম রেখেছে কারিম-এক-হোরাস-হোরাসের আঙুর বাগান। সে বছর বসন্ত কালে ফসল বোনার পর পৃথিবী যখন চমৎকার সাজে সেজে উঠল, কারনাক থেকে নদীর ভাটিতে সব রাজকীয় সঙ্গী নিয়ে লর্ড মেরেন ও তার স্ত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এলেন ফারাও।
মেরেন ও সিদুদু এক সাথে নদীর তীরে এলো। সেনাবাহিনীর মার্শালের রিগালা পরেছে মেরেন, হেলমেটে অস্ট্রিচের পালক, নগ্ন বুকে বীরত্ব ও প্রশংসার সোনার চেইন ঝুলছে। চুলে জেসমিন ফুল গুঁজেছে সিদুদু। পরনে ক্যাথে থেকে আমদানি করা শাদা মেঘের মতো পোশাক। নীলের জলের পাত্র ভাঙল ওরা, চুমু খেল। আর এদিকে লোকেরা আনন্দে চিৎকার করে উঠল, দেবতাদের আশীর্বাদ কামনা করল।
দশ দিন দশ রাত ধরে চলল উৎসব। প্রাসাদের ফোয়ারাগুলো মদে ভরে দিতে চেয়েছিল মেরেন, কিন্তু সিদুদু ওর স্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের বাড়াবাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মেয়েটা কত দ্রুত ওর সংসারের সর্বময় কর্তৃত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছে দেখে অবাক হয়ে গেছে মেরেন। তবে তাইতা ওকে সান্ত্বনা যুগিয়েছে। তোমার জীবনের সেরা স্ত্রীতে পরিণত হবে ও। ওর মিতব্যয়ীতাই তার প্রমাণ। অপচয়কারী স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর বিছানায় কাঁকড়া বিছের মতো।
রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাইতা ও মেরেনের সাথে চাঁদের পাহাড়ে ওদের অভিযানের কাহিনী মন দিয়ে শুনে যান নেফার সেতি। কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করার পর পুনরাবৃত্তির নির্দেশ দেন তিনি। সিদুদু, ফেন ও মিনতাকা বসে থাকেন ওদের সাথে। ফেনের প্রভাবে রানির চরিত্র পাল্টে গেছে। তিনি তার বিষাদ ও অপরাধ বোধের ভারমুক্ত হয়েছেন। আবার প্রশান্তি ও সুখে আলোকিত হয়ে উঠেছেন। এটা সবার কাছে পরিষ্কার যে আবার পরিপূর্ণভাবে স্বামীর আনুকূল্য ফিরে পেয়েছেন তিনি।
কাহিনীর একটা অংশ বিশেষভাবে তাদের, বিশেষ করে নেফার সেতিকে বিমোহিত করে। বার বার সেই অংশে ফিরে আসেন তিনি। আমাকে আবার ফন্টের কথা বলল,; তাইতার কাছে জানতে চান তিনি। একটা অংশও যেন বাদ না পড়ে। জ্বলন্ত লাভার হ্রদের উপর পাথরের সেতু পার হওয়ার ঘটনা দিয়ে শুরু করো।
তাইতা গল্পের শেষে পৌঁছলেও সন্তুষ্ট হন না তিনি। মুখে নেওয়ার সময় নীলত্বের স্বাদের কথা বলো, শ্বাস টানার সময় পানির মতো তোমার শ্বাসরুদ্ধ করল না কেন?; সেটা কি ঠাণ্ডা ছিল নাকি গরম?; ফন্ট থেকে উঠে আসার কতক্ষণ পরে ওটার বিস্ময়কর প্রভাব সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠেছিলে?; তুমি বললে তোমার পায়ের উপর লাভা পড়ায় পুড়ে যাওয়া পা সাথে সাথে ভালো হয়ে গেছে, হাত পায়ের শক্তি ফিরে এসেছে। ব্যাপারটা কি সত্যিই তাই?; আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ফন্ট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেটা কি জ্বলন্ত লাভায় ডুবে গেছে? কী বাজে একটা ক্ষতি হবে সেটা। সেটা কি চিরকালের জন্যে আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে?
জীবনদায়ী শক্তি যোগানোর মতো ফন্টও চিরন্তন। যতদিন এই পৃথিবীতে জীবন আছে, ততদিন ফন্টও থাকবে, জবাব দেয় তাইতা।
বছরের পর বছর দার্শনিকরা এই জাদুকরী ফন্টের স্বপ্ন দেখে এসেছেন, আমার সব পূর্ব পুরুষ এর সন্ধান করেছে। চিরন্তন জীবন ও চিরন্তন তারুণ্য, কি নিষ্ঠুর সম্পদ এসব? ফারাওর চোখজোড়া প্রায় ধর্মীয় উন্মাদনায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমার জন্যে এর সন্ধান এনে দাও, তাইতা। আমি তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি না। তবে আবেদন জানাচ্ছি। আমার আর মাত্র বিশ কি তিরিশ বছর আয়ু বাকি আছে। বেরিয়ে পড়ো, তাইতা, আবার আমার জন্যে ফন্ট খুঁজে বের করো।
ফেনের দিকে তাকানোর প্রয়োজন হয়নি তাইতার। ওর কণ্ঠস্বর ওর মাথার ভেতর স্পষ্ট গুঞ্জন করে উঠেছে। প্রিয় তাইতা আমার, রাজার সাথে সাথে আমার আবেদনও যোগ করছি। আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো। ফন্টের লুকানোর জায়গায় না পৌঁছানো পর্যন্ত চলো সারা দুনিয়া ছুঁড়ে বেড়াই। আমাকে সেই নীলে অবগাহন করতে দাও, যাতে আমি তোমার পাশে দাঁড়াতে পারি। সারা জীবন তোমাকে ভালোবেসে যেতে পারি।
ফারাও, তাঁর অধীর চেখের দিকে তাকায় তাই। আপনার আদেশ শিরোধার্য।
সফল হলে তোমার পুরস্কার হবে সীমাহীন। এই পৃথিবীর সমস্ত ধনরত্ন তোমাকে দান করব আমি।
এখন আমার কাছে যা আছে সেটাই যথেষ্ট। তারুণ্য ও বয়সের প্রজ্ঞা আছে আমার। আমার রাজা ও নারীর ভালোবাসা আছে। আপনাদের দুজনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই কাজটা করব আমি।
*
উইন্ডস্মোক হাঁকাচ্ছে তাইতা, ওয়ার্লউন্ডের পিঠে রয়েছে ফেন। দুজনই একটা ৩করে পুরোদস্তুর বোঝাই প্যাকহর্স টেনে নিয়ে চলছে। বেদুঈন পোশাক ওদের পরনে, তীর ধনুক ও তলোয়ার বহন করছে। মেরেন ও সিদুদু ওদের সাথে কারিম এক-হোরাসের শেষ প্রান্তের পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত এসেছিল; এখানেই বিদায় নিয়েছে ওরা। সিদুদু ও ফেন সহোদরাসুলভ চোখের পানি ফেলেছে, আর তাইতাকে আলিঙ্গন করে ওর গালে চুমু খেয়েছে মেরেন।
বেচারা ম্যাগাস! আপনার সেবা করার জন্যে আমি না থাকলে কেমন করে, চলবেন আপনি? কর্কশ শোনায় ওর কণ্ঠস্বর। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, চোখের আড়ালে চলে যাবার পর এক দিনের মধ্যেই ফের ঝামেলায় পড়বেন। তারপর ফেনের দিকে তাকিয়েছে সে। ওর দিকে খেয়াল রেখো, আবার একদিন আমাদের কাছে ফিরিয়ে এনো।