আমার কাছে কী চাও? জানতে চাইলেন নেফার সেতি।
রানি মিনতাকাকে সরিয়ে নিতে হবে। পশ্চীম তীরের মেমনরের প্রাসাদের স্বাধীনতা প্রয়োজন হবে আমার। হাথরের মন্দিরে বলী দিতে তাঁকে আপনি আসুইতে নিয়ে যান। তাকে বলুন দেবী আপনার সামনে আবির্ভূত হয়ে আপনাদের বাচ্চা যুবরাজ খাবা আর ওর বোন উনাসের স্বার্থে দুজনের কাছেই এই বলী দাবী করেছেন, এখন যারা অন্য জগতে রয়েছে।
হাথরের কাছে বলী দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছিলাম আমি, এটা ঠিক। পাঁচ দিনের মধ্যেই, পূর্ণিমার রাতে আমি আর রানি রাজ প্রাসাদ ছেড়ে যাব। আমার কাছে আর কী চাও তুমি?
লর্ড মেরেন ও আপনার সেরা যোদ্ধাদের ভেতর থেকে এক শো জন সৈনিক। মেরেনকে অবশ্যই আপনার বাজপাখির সীলমোহর বহন করতে দিতে হবে, ওকে আপনার সীমাহীন ক্ষমতা দেবে ওটা।
এসব সে পাবে।
*
রাজ দম্পতি বার্জে চেপে নৌকা ভাসানোর সাথে সাথে প্রহরীদের সাথে করে মানীল পেরিয়ে পশ্চিম তীরে চলে এলো মেরেন ও তাই। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে মিনতাকার আবাস মেমননের প্রাসাদের উদ্দেশে এগিয়ে চলল ওরা। ভোর বেলায় ওখানে পৌঁছাল।
হতবাক হয়ে গেল ওখানকার লোকজন। প্রাসাদের উযির বাড়ির প্রহরীদের একটা দল নিয়ে ওদের ঢোকার পথে বাধা দিতে চাইলেন। তবে প্রাসাদের রক্ষীরা ভোগ বিলাসে মত্ত জীবন কাটিয়ে নরম হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে ওদের মুখোমুখি দাঁড়ানো এক শশা কঠিন যোদ্ধার দিকে তাকিয়ে রইল ওরা।
বাজপাখির সীলমোহর দেখাল মেরেন। ফারাও নেফার সেতির নির্দেশ তামিল করছি আমরা। সরে দাঁড়াও, আমাদের ঢুকতে দাও!
ওর কাছে বাজপাখির সীল আছে। হার মানলেন উযির, প্রাসাদ রক্ষীদের দিকে ফিরলেন তিনি। তোমার লোকদের ছাউনীতে নিয়ে যাও, আমি খবর না দেওয়া পর্যন্ত ওখানেই থাকবে ওরা।
প্রবেশ পথের দহলিজে ঢুকল মেরেন ও তাই। মাৰ্বল পাথরের উপর আওয়াজ তুলছে ওদের পেরেক লাগানো স্যান্ডেল। এখন আর আত্মগোপনের জাদুতে নিজেকে আড়াল করে রাখেনি তাইতা, বরং কুমীরের চামড়ার একটা ব্রেসপ্লেট ও মানানসই হেলমেট পরেছে, ভাইজরটা নামিয়ে রেখেছে যাতে চেহারা আড়াল হয়। দেখে ভীষণ একটা চরিত্র বলে মনে হচ্ছে। ওকে দেখে সটকে পড়ল প্রাসাদ রক্ষী ও মিনতাকার পরিচারিকারা।
কোথায় তল্লাশি শুরু করব, ম্যাগাস? জিজ্ঞেস করল মেরেন। ব্যাটা কি এখনও এখানে লুকিয়ে আছে?
সোয়ে এখানেই আছে।
আপনাকে অনেক নিশ্চিত মনে হচ্ছে।
বাতাসে ইয়োসের বিশ্রী গন্ধ প্রকট হয়ে আছে, বলল তাইতা।
শব্দ করে গন্ধ শুঁকল মেরেন।
কোনও গন্ধ পাচ্ছি না।
তোমার দশ জন লোক রাখো আমাদের সাথে। বাকিদের সমস্ত দরজা আর গেট পাহারায় পাঠিয়ে দাও। শারীরিক কাঠামো আর আকার বদলানোর ক্ষমতা রাখে সোয়ে, সুতরাং কাউকে প্রাসাদ ছেড়ে যেতে দেওয়া যাবে না, পুরুষ, নারী বা প্রাণী যাই হোক। বলল তাইতা। নির্দেশ জারি করে দিল মেরেন। যার যার অবস্থানের উদ্দেশ্যে চলে গেল লোকেরা।
উদ্যেশ্যমূলকভাবে বিশাল আঁকালভাবে সাজানো কামরাগুলোতে ঘুরে বেড়াতে লাগল তাই। মেরেন ও ওর লোকজন খুব কাছে থেকে অনুসরণ করছে ওকে। সবার তলোয়ার বের করা। খানিক পর পর থেমে যেন হাওয়া পরখ করছে তাইতা। যেন শিকারের গন্ধ শুঁকে এগিয়ে চলেছে শিকারী কুকুর।
অবশেষে রানির অন্দরের বাগিচায় এলো ওরা, উঁচু স্যান্ডস্টোন পাথরের দেয়ালে ঘেরা, মেঘহীন আকাশের দিকে উন্মুক্ত একটা বড় সড় জায়গা। ফুলে ভরা গাছপালা আর মাঝখানে একটা ফোয়ারার চারপাশে রাস্তা ঘিরে বিছানো রয়েছে রেশমী গদিমোরা বেঞ্চি। সৈনিকদের আবির্ভাবে মিনতাকার পরিচরিকারা যেটা যেখানে ফেলে গেছে সেখানেই পড়ে আছে-লুটসহ আরও নানা রকম বাদ্যযন্ত্র। অল্প বয়সী মেয়েদের সৌরভ ভাসছে হাওয়ায়, মিশে গেছে কমলা রঙের ফুলের সুবাসের সাথে।
উক্ত এলাকার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছোট লতার আঁচা। একটু দ্বিধা না করে ওটার দিকে এগিয়ে গেল তাইতা। নিশ্চিত, দ্রুত পদক্ষেপ। মাঝখানের গোলাপি মাৰ্বল প্রিন্থের উপর দাঁড়িয়ে আছে ধাতু কুঁদে খোদাই করা একটা মূর্তি। ওটার পায়ের কাছে কেউ সূর্যপদ্মের একটা গোছা ফেলে রেখেছে। বাতাস মিষ্টি করে তুলেছে ওগুলোর গন্ধ। শক্তিশালী মাদকের মতো বোধবুদ্ধি ঘোলা করে দিচ্ছে।
ডাইনীর ফুল, ফিসফিস করে বলল তাইতা। গন্ধটা স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবার প্রিন্থের উপরের মূর্তিটা পরখ করল ও। প্রমাণ সাইজ। বোরকা ঢাকা নারীর আকৃতি। পর্দার ভাঁজ আপাদমস্তক ঢেকে রেখেছে তাকে। হেমের নিচে নিখুঁত পাজোড়া এমন দক্ষতার সাথে খোদাই করা হয়েছে যে শীতল প্রাণহীন পাথরের বদলে বরং জীবন্ত মাংসের বলে মনে হয়।
ডাইনীর পা, বলল তাইতা। এই মন্দিরেই রানি মিনতাকা তার পূজা করেছেন। তাইতার নাকে পদ্মের গন্ধের চেয়ে জোরাল হয়ে লাগছে এখন অশুভ গন্ধ। লড মেরেন, তোমার লোকদের মূর্তিটা ভেঙে ফেলতে বলো, শান্ত কণ্ঠে নির্দেশ দিল তাইতা।
এমনকি অদম্য মেরেনও ডাইনীর মন্দিরকে ভরে রাখা প্রভাবে হতবাক হয়ে গেছে। চাপা কণ্ঠে নির্দেশ দিল ও।
তলোয়ার খাপে ভরে মূর্তির গায়ে কাঁধ ঠেকাল সৈনিকরা। শক্তিশালী ও বেপরোয়া লোক ওরা, কিন্তু উপড়ে ফেলার প্রয়াস ঠেকিয়ে দিল মূর্তিটা।
তাশকালোন! বলে উঠল তাইতা, আরও একবার ইয়োসের শক্তি তার উপরই প্রয়োগ করল। নড়ে উঠল মূর্তিটা, মাৰ্বল পাথরের উপর তীক্ষ্ণ শব্দ তুলল মাৰ্বল পাথর, নিখোঁজ আত্মার মতো। সৈনিকদের চমকে দিল আওয়াজটা। ভয়ে পিছিয়ে এলো ওরা।