আপনার বাজপাখী এসেছিল, ওকে শুধরে দিল তাইতা। মিশরের দ্বৈত মুকুটের প্রতি আপনার রাজকীয় অধিকারের প্রমাণ সেই চমৎকার বাজপাখি।
আমরা ওকে বন্দি করেছিলাম, বিজয়ীর ঢঙে বললেন নেফার সেতি।
উঁহু, মেম। পুতুল অস্বীকার গেছে বাজপাখি, উড়ে গেছে।
শিকারে ক্ষান্ত দিয়েছিলাম আমরা।
এবারও না, মেম। আপনার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। পাখিটাকে অনুসরণ করে গভীর বনে চলে গিয়েছিলাম আমরা।
ও, হ্যাঁ! তোতা পানির হ্রদ নাত্রোনে।
ফের না। আমরা গিয়েছিলাম বির উম্ম মাসারা পাহাড়ে। আমি দড়ি ধরে রাখার সময় আপনি বাচ্চা তুলে আনতে পাহাড়ের পুব দিকের দেয়াল বেয়ে বাজপাখির উঁচু বাসায় নেমে গেছেন। এতক্ষণে ওর দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকাতে শুরু করেছেন নেফার সেতি। আপনি ওই বাসায় পৌঁছানোর পর দেখলেন আপনার আগেই কোবরা পৌঁছে গেছে ওখানে। পাখিগুলো মরে গেছে, সাপের বিষাক্ত ছোবলে প্রাণ হারিয়েছে।
ওহ, ম্যাগাস, তুমি ছাড়া এসব কথা আর কারও জানার কথা নয়। তোমাকে অস্বীকার করেছি বলে ক্ষমা করে দাও। সারা জীবন তুমি ছিলে আমার পরামর্শক ও পরিচালক, অথচ এখন তোমাকে উপেক্ষা করেছি। অনুতাপে আক্রান্ত হয়েছেন নেফার সেতি। ছুটে কামরার এপাশে এসে তাইতাকে শক্তিশালী আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলেন তিনি। অবশেষে যখন আলাদা হলেন ওরা, তাইতার মুখ থেকে চোখ সরাতে পরলেন না তিনি। তোমার পরিবর্তন আমার বোধের অতীত। বলো, কেমন করে ব্যাপারটা ঘটল।
সে অনেক কথা, সায় দিয়ে বলল তাইতা। কিন্তু তার আগে আমাদের মাথা ঘামানোর মতো আরও ব্যাপার আছে। প্রথমত, একজনকে আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। হাত বাড়িয়ে দিল তাইতা। আরও একবার বাতাস কেঁপে উঠল, তারপর এক তরুণীর আকার নিল। নেফার সেতির দিকে তাকিয়ে হাসল ও।
আগেও যেমন অনেক বার করেছ, তোমার জাদু দিয়ে বিভ্রান্ত করছ আমাকে, বললেন নেফার সেতি। এই মেয়েটি কে? কেন ওকে আমার কাছে নিয়ে এসেছ?
ওর নাম ফেন, ডানদিকের পথের একজন পণ্ডিত।
বয়সে তো অনেক ছোট।
আরও অন্য জীবন পার করে এসেছে ও।
অসাধারণ সুন্দরী। কামুক পুরুষের চোখে ফেনের দিকে তাকালেন তিনি।
কিন্তু তারপরেও কোথায় যেন একটা পরিচিত ভাব রয়েছে। ওর চোখজোড়া…ওই চোখজোড়া আমার চেনা। স্মৃতি হাতড়ালেন তিনি। এককালে খুব চেনা কারও চোখের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ফারাও, ও আমার স্ত্রী।
তোমার স্ত্রী? তা কি করে হয়? তুমি তো থেমে গেলেন তিনি। মাফ করবে ম্যাগাস। তোমার সম্মানের উপর কোনও রকম আঘাত করতে চাইনি।
কথাটা সত্যি, ফারাও, এককালে আমি খোঁজা ছিলাম, কিন্তু এখন আমি পূর্ণাঙ্গ পুরুষ। ফেন আমার মেয়েমানুষ।
অনেক কিছু বদলে গেছে, প্রতিবাদ করলেন নেফার সেতি। একটা ধাঁধার সমাধান করতে না করতেই আরেকটা ধাঁধা সামনে তুলে ধরছ তুমি- আবার থেমে গেলেন তিনি, ফেনের দিকে তাকিয়ে আছেন। ওই চোখ। সবুজ ওই দুটি চোখ। আমার বাবার! ওই চোখজোড়া বাবার ছিল। এমন হতে পারে কিনা ফেন আমারই রাজবংশের কেউ?
আরে, মেম! ওকে মৃদু স্বরে ভর্ৎসনা করল তাইতা। প্রথমে তোমার সামনে মেলে ধরা রহস্য নিয়ে অভিযোগ করলেন, তারপরই দাবি করলেন আপনার সামনে আরও বোঝা নামিয়ে রাখছি। আপনার একটা সহজ কথা বলি, ফেন আপনার বংশের প্রত্যক্ষ ধারার মানুষ। আপনার রক্তই ওর রক্ত, তবে অনেক দিন আগের।
তুমি বললে অন্য জীবন পার করে এসেছে ও। সেটা কি সেই অন্য কোনও জীবনে?
ঠিক তাইতা, সায় দিল তাইতা।
খুলে বলো! নির্দেশ দিলেন ফারাও।
পরে এর সময় পাওয়া যাবে। অবশ্য, আপনি আর মিশর এখনও হুমকির মুখে রয়েছেন। আপনি এরই মধ্যে ডাইনী ইয়োসের কথা জানতে পেরেছেন, নীল মাতার প্রবাহ যে বন্ধ করে দিয়েছিল।
এটা কি সত্যি যে তুমিই তাকে তার আস্তানায় গিয়ে ধ্বংস করে এসেছ?
ডাইনী এখন আর বেঁচে নেই, তবে তার এক চ্যালা এখনও মুক্ত আছে। তার নাম সোয়ে। খুবই বিপজ্জনক লোক।
সোয়ে! এই নামে এক লোককে চিনি আমি। মিনতাকা এর কথা বলেছে। যাজক। এক নতুন দেবীর কথা বলে।
উল্টো বানান করলে তার নাম দাঁড়ায় ইয়োস। জাদুকরীই ছিল তার দেবী। আপনাকে ও আপনার বংশধারাকে ধ্বংস করে তারপর ডাইনীর জন্যে মিশরের সিংহাসন দখল করাই তার উদ্দেশ্য।
নেফার সেতির চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। আমার প্রধান স্ত্রী মিনতাকার কাছে পৌঁছে গেছে সোয়ে লোকটা। তাকে বিশ্বাস করে ও। ওকে নতুন ধর্মে দীক্ষা দিয়েছে সে।
আপনি বাধা দেননি কেন?
আমি ওকে সম্মান করি। আমাদের মৃত বাচ্চাদের শোকে মিনতাকা ভেঙে পড়েছিল। সোয়ে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছে। এখানে আমি খারাপ কিছু দেখিনি।
অনেক খারাপ হয়ে গেছে, বলল তাইতা। আপনার ও মিশরের ক্ষতি। সোয়ে এখনও মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে। ডাইনীর শেষ অনুসারী সে, এই পৃথিবীর বুকে তার উপস্থিতির শেষ আলামত। মহা মিথ্যার অংশ সে।
আমাকে কী করতে হবে? নীল আবার বইতে শুরু করার সাথে সাথে সোয়ে সটকে পড়েছে। তার কী হয়েছে জানা নেই আমাদের।
সবার আগে তাকে পাকড়াও করে আপনার সামনে নিয়ে আসতে হবে। রানি মিনতাকা এমন গভীরভাবে তার শৃঙ্খলে আটকা পড়ে আছেন যে তিনি তার সব কথাই বিশ্বাস করে বসে আছেন। আপনাকে তার হাতে তুলে দিতেন তিনি। খোদ সোয়ের মুখ থেকে না শুনলে তার মধ্যে খারাপ কিছুর অস্তিত্ব মানতে চাইবেন না তিনি।