মেরেনকে রাজ দর্শনে নিয়ে এলেন তেনকে। কিন্তু মেরেন ফের অনুগতের মতো দাঁড়ালে নেফার সেতি এগিয়ে এসে আন্তরিক আলিঙ্গন করলেন তাকে। প্রিয় বন্ধু এবং লাল পথের সঙ্গী আমার, তোমাকে আবার ফিরে পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। শুধু যদি সাথে করে ম্যাগাসকে নিয়ে আসতে। ওর মৃত্যু আমার অন্তরে লেগেছে। এবার মেরেনকে সামনে ধরে ভালো করে ওর চেহারা দেখলেন। তুমি কখনওই আবেগ আড়াল করার দক্ষতা পেলে না। এখন কিসে জ্বালাচ্ছে তোমাকে? বলো।
বরাবরের মতোই তীক্ষ্ণ আপনার চোখ। কোনও কিছুই বাদ যায় না। আমার কাছে খবর আছে যা আপনাকে জানাব। জবাব দিল মেরেন। কিন্তু তার আগে বিরাট একটা ধাক্কা হজম করার জন্যে নিজেকে তৈরি রাখতে বলব আপনাকে। আপনাকে যা বলতে যাচ্ছি সেটা যেমন অদ্ভুত তেমনি বিস্ময়কর, প্রথম আমি এর মুখোমুখি হওয়ার পর আমার মনকে বিশ্বাস করাতে পারিনি।
আরে রাখো তো, মাই লর্ড, ওর দু কাঁধের মাঝখানে একটা ঘুসি মারলেন নেফার সেতি, টলে উঠল মেরেন।ঝেড়ে কাশো!
লম্বা করে শ্বাস টানল মেরেন, তারপর হড়বড়িয়ে বলল, তাইতা বেঁচে আছেন।
হাসি বন্ধ করলেন নেফার সেতি, অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলেন ওর দিকে। তারপর ভুরু কুঁচকে অন্ধকার করে ফেললেন চেহারা। আমার সাথে ঠাট্টা করলে তোমার বিপদ হবে, মাই লর্ড মার্শাল, শীতল কণ্ঠে বললেন তিনি।
আমি সত্যি কথাই বলছি, জাঁহাপনা, এমনি মেজাজে নেফার সেতি সবচেয়ে সাহসী জনেরও বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেন।
কথাটা সত্যি হলে, তোমার মঙ্গলের জন্যেই ভালো, মেরেন ক্যাম্বিসেস, তাহলে আমাকে বলো তাই এখন কোথায়।
আরেকটা জিনিস আপনাকে বলা দরকার, হে জাঁহাপনা ও মহামান্য, তাইতার চেহারাছবি অনেক বদলে গেছে। প্রথমে আপনি তাকে নাও চিনতে পারেন।
হয়েছে! চড়ে উঠল নেফার সেতির কণ্ঠস্বর। বলল সে কোথায়।
খোদ এই কামরাতেই আছেন তিনি, ভেঙে গেল মেরেনের কণ্ঠস্বর। আমাদের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন। তারপর চাপাকণ্ঠে যোগ করল, অন্তত তাই আশা করি।
ড্যাগারের হাতলে হাত রাখলেন নেফার সেতি। আমার ভালো মানুষির সুযোগ নিয়েছ তুমি, মেরেন ক্যাম্বিসেস।
বুনো দৃষ্টিতে শূন্য কামরার এদিক ওদিক নজর বোলাল মেরেন। ফাঁকা হওয়ার উদ্দেশে কথা বলার সময় করুণ শোনাল ওর কণ্ঠস্বর। ম্যাগাস, ও ম্যাগাস! দেখা দিন, নিবেদন করছি! ফারাওর কোপের বিপদে আছি আমি! তারপর স্বস্তির সাথে বলে উঠল, দেখুন, জাঁহাপনা! কামরার উল্টোদিকে কালো গ্রানিট কুঁদে বের করা একটা লম্বা মূর্তির দিকে ইঙ্গিত করল ও।
ওটা তাইতার মূর্তি, নিপূণ ভাস্কর ওশ খোদাই করেছে, বললেন নেফার সেতি, ক্ষুব্ধ তিনি। ম্যাগাসের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যে এখানে রেখেছি ওটা, কিন্তু ওটা কেবলই পাথর, আমার প্রিয় রক্ত মাংসের তাইতা নয়।
নাহ, ফারাও। মূর্তির দিকে তাকান, কিন্তু ওটার ডান পাশে।
মেরেন যেখানে ইঙ্গিত করেছে সেখানে একটা কম্পিত স্বচ্ছ মেঘের মতো উদয় হলো, মরুভূমির মরীচিৎকার মতো। ওটার দিকে তাকানোর সময় চোখের পাতা পিটপিট করলেন ফারাও। ওটা কিছু না। বাতাসের মতাই হাল্কা। এটা কি জিন? ভূত?
আরও ঘন হয়ে এলো মরীচিকা, আস্তে আস্তে নিরেট আকার নিল। একজন পুরুষ! বলে উঠলেন নেফার সেতি। কিন্তু এ তো তাইতা নয়। একজন তরুণ, কমনীয় তরুণ। আমার তাইতা নয়। নিজেকে আড়াল করার জাদু জানে যখন নিশ্চয়ই কোনও জাদুকর হবে।
এটা জাদুই, সায় দিল মেরেন, কিন্তু সবচেয়ে ভালো ও অভিজাত ধরনের। খোদ তাইতার সৃষ্ট জাদু। এটাই তাইতা।
না! মাথা নাড়লেন নেফার সেতি। এই লোককে আমি চিনি না, আদৌ যদি সে জীবিত প্রাণী হয়ে থাকে।
দয়াময়, এটাই তরুণ ও পূর্ণাঙ্গ পরিণত ম্যাগাস।
এমনকি নেফার সেতি পর্যন্ত বাকহারা হয়ে গেলেন। কেবল মাথা নাড়তে লাগলেন তিনি। চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে তাইতা।
মূর্তির দিকে তাকান, আবেদন জানাল মেরেন। ওশ যখন এটা বানিয়েছে তখন ম্যাগাসের বয়স হয়ে গেছে, কিন্তু এমনকি এখন আবার তরুণ হয়ে উঠলেও মিলটুকু ভ্রান্তির অতীত। ভুরুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ দেখুন, নাকের গঠন আর কান, কিন্তু সবার উপরে ওর চোখজোড়া দেখুন।
হ্যাঁ…হয়তো মিলটুকু দেখতে পাচ্ছি, সন্দিহান কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললেন নেফার সেতি। তারপর ওর কণ্ঠ দৃঢ় ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠল।হে, প্রেতাত্মা! তুমি সত্যিই তাইতা হয়ে থাকলে কেবল আমরা দুজন জানি এমন কিছু নিশ্চয়ই বলতে পারবে।
ঠিক তাইতা, ফারাও, সায় দিল তাইতা। এমন অনেক কিছুই আপনাকে বলতে পারি, তবে সবার আগে একটা কথা মনে পড়ছে। তখনকার কথা কি আপনার মনে আছে যখন আপনি ছিলেন নেফার মেমনন, দুই সাম্রাজ্যের ফারাও হননি। যখন আপনি আমার ছাত্র ও পোষ্য ছিলেন, আপনাকে আমি মেম ডাকতাম?
মাথা দোলালেন ফারাও। ভালো করেই মনে আছে। কর্কশ ফিসফিস শব্দে পরিণত হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর, দৃষ্টি কোমল। কিন্তু আরও অনেকেই এসব জানতে পারে।
আপনাকে আরও বলতে পারি, মেম। বলতে পারি আপনি ছোট থাকতে কীভাবে গেবেত নাগারার বুনো এলাকায় কবুতরের মূর্তি বসিয়ে বিশ দিন আপনার গডবার্ড রাজা বাজের ওগুলোর কাছে আসার অপেক্ষা করেছিলাম।
আমার গডবার্ড পুতুলের কাছে আসেনি কোনওদিন, বললেন নেফার সেতি, তাঁর আভার কেঁপে ওটা দেখে তাইতা বুঝতে পারল ওর জন্যে ফাঁদ পাতছেন ফারাও।