আপনাকে যে কাহিনী বলতে যাচ্ছি সেটা এমনই অদ্ভুত ও অনন্য যে সব কল্পনা আর বিশ্বাসকে হার মানায়। কিন্তু, সবার আগে, লোকজনকে তীরে এনে ওদের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে। অনেক দিন ধরে নীলের বুকে আছে ওরা, কষ্টকর ও বিপজ্জনক দীর্ঘ যাত্রা করেছে সাম্রাজ্যের এই চৌকি পর্যন্ত আসতে। এই দায়িত্ব শেষ হলেই আপনার কাছে পূর্ণাঙ্গ ও আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন দাখিল করব আমি, যা আপনি কারনাকে ফারাওর দরবারে পেশ করবেন।
আমি ক্ষমা চাইছি, নারার সহজাত ভদ্রতা আবার ফিরে এলো। আমার আতিথেয়তায় ঘাটতি হয়ে গেছে। ওদের এখুনি তীরে চলে আসতে বলে। তারপর তোমাদের কাহিনী বলার জন্যে আরও জোর করার আগে তরতাজা হও আর নিজেদের সামলে নাও।
সেদিন সন্ধ্যায় দুর্গের সম্মেলন হলে মেরেন, তিনাত ও অন্য উচ্চপদস্থ ক্যাপ্টেনদের সম্মানে এক অভ্যর্থনা সভার আয়োজন করলেন নারা। শহরের অন্য গণ্যমান্য লোকেরা উপস্থিত থাকল। ওরা খাওয়াদাওয়া শেষ করলে ভাষণ দিতে উঠে দাঁড়ালেন নারা। স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাগত ভাষণ দিলেন। বক্তব্য শেষ করলেন সমবেত অতিথিদের উদ্দেশে মেরেনকে দক্ষিণ যাত্রার কাহিনী বয়ান করার অনুরোধ জানিয়ে। তোমরাই প্রথম ওই রহস্যময় অজানা দেশ থেকে ফিরে এসেছ। ওখানে কী ঘটেছে বলো। বলল, নীল মাতার জন্মস্থানে পৌঁছুতে পেরেছিলে কিনা। জলের ধারা মরে যাবার ঘটনাটা কীভাবে ঘটল সেটা বলো, তারপর কীভাবে আবার এমনি আকস্মিক প্রাবল্যে ভরে উঠল। কিন্তু সবার আগে বলো গালালার তাইতার কী হয়েছে।
সবার আগে কথা বলল মেরেন। অনেক দিন আগে এই পথে যাবার পর থেকে ওদের জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা বলে গেল। কেমন করে তামাফুপায় নীলের মুখে পৌঁছেছিল বলল ও, নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে দেওয়া লাল পাথর আবিষ্কারের কথা বলল। তিনাত ওদের উদ্ধার করে কীভাবে জাররিতে নিয়ে গিয়েছিল, বলল তাও, যেখানে অলিগার্কদের সর্বোচ্চ পরিষদের সামনে হাজির হতে হয়েছিল ওদের।
এবার কর্নেল তিনাত আনকুতকে আহ্বান জানাব কর্নেল লর্ড লোত্তির নেতৃত্বাধীন অভিযানের কী পরিণতি ঘটেছিল তার বিবরণ দিতে। সে ও তার জীবিত লোকজন জাররিতে গিয়ে কী পরিস্থিতি আবিষ্কার করেছিল। তিনাতকে মঞ্চ ছেড়ে দিল মেরেন।
স্বভাবজাতভাবে তিনাতের বক্তব্য তীর্যক, কোনও রকম অলঙ্কার বর্জিত। সোজাসাপ্টা সৈনিকসুলভ ভঙ্গিতে রানি লখ্রিসের শাসনামলে লর্ড আকেরের হাতে আদি জাররিয় সরকারের প্রতিষ্ঠার বর্ননা দিল সে। তারপর সেটা কীভাবে রহস্যময়ী জাদুকরী ইয়োসের হাতে ভীষণ নিষ্ঠুর স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছিল বলল সেকথাও। সেজাসাপ্টা বক্তব্য দিয়ে নিজের বিবরণ শেষ করল সে। জাদুকরী ইয়োসই নীলের শাখাপ্রশাখায় বাঁধ সৃষ্টির জন্যে অশুভ জাদু ব্যবহার করেছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল মিশরকে পরাস্ত করে শৃঙ্খলে বন্দি করা। শ্রোতারা প্রতিবাদ আর নানা প্রশ্ন শুরু করায় শোরগোল শুরু হয়ে গেল।
বাধা দিতে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন নারা, কিন্তু ওদের শান্ত করতে বেশ কিছুটা সময় লাগল তার। কর্নেল মেরেনকে আবার কথা বলার আহ্বান জানাচ্ছি। দয়া করে তার বক্তব্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা প্রশ্ন করা বন্ধ রাখুন। আমি নিশ্চিত সে আপনাদের অনেক উৎকণ্ঠারই জবাব দিতে পারবে।
তিনাতের চেয়ে ঢের বেশি বাগ্মী মেরেন। ম্যাগাস গালালার তাইতা ইয়োসের ঘাঁটিতে প্রবেশ করে তার মোকাবিলা করতে যাবার বিবরণ দেওয়ার সময় মুগ্ধ হয়ে শুনল ওরা। একা নিরস্ত্র অবস্থায় গেছেন তিনি, কিন্তু আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল তাঁর সাথে। এই দুই রহস্যের গুরুর আধ্যাত্মিক সংঘাতের বিশালতা কেউ কখনও জানতে পারবে না। আমরা কেবল জানি শেষ পর্যন্ত তাইতাই জয়ী হয়েছেন। ধ্বংস হয়ে গেছে ইয়োস, সেই সাথে তার অশুভ সাম্রাজ্যও। নীল মাতার উপর তার তৈরি বাঁধ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে যাতে নদী আবার বইতে পারে। তাইতার শক্তিতে কেমন করে ওটা আবার জীবিত হয়ে উঠেছে দেখার জন্যে আপনাদের কেবল কেবুই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী দেখলেই হবে। কর্নেল তিনাতের সহায়তায় আমাদের লোজন, যাদের এতগুলো বছর জাররিতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তাদের মুক্ত করা হয়েছে। আজকের সন্ধ্যায় তারা আপনাদের মাঝে বসে আছে।
ওদের উঠে দাঁড়াতে বলো! বলে উঠলেন গভর্নর নারা। ওদের চেহারা দেখতে চাই আমরা যাতে আমাদের ভাই-বোনদের আমার মাতৃভূমিতে স্বাগত জানাতে পারি। এক এক করে তিনাতের রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ও অন্য অফিসাররা উঠে যার যার নাম আর পদমর্যাদা উল্লেখ করল, তারপর একটা ঘোষণা বাক্য উচ্চারণ করে বক্তব্য শেষ করল: আজ সন্ধ্যায় আমাদের সম্মানিত কর্নেল মেরেন ক্যাম্বিসেস ও কর্নেল তিনাতে আনকুরের মুখে যা যা শুনেছেন আমি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছি।
ওরা শেষ করার পর আবার কথা বললেন নারা। আজকের সন্ধ্যায় বর্ণনা করা অনেক বিস্ময়কর ঘটনার কথা শুনলাম আমরা, আমাদের বিস্ময়ে পরিপূর্ণ করে তুলতে যথেষ্ট। তবে আমি জানি এখন আমি সবার পক্ষেই কথা বলতে যাচ্ছি, আরও একটা প্রশ্ন আমাকে ভেতরে ভেতরে কুরেকুরে খাচ্ছে, সেটাই জিজ্ঞেস করছি। নাটকীয়ভাবে একটু বিরতি দিলেন তিনি। কর্নেল মেরেন ক্যাম্বিসেস, আমাদের বলো, ম্যাগাস তাইতার কী হয়েছে? কেন তিনি আর তোমাদের বাহিনীর নেতৃত্বে নেই?