দিনের আলো ছুঁইয়ে ভেতরে না আসা অবধি ঘুমাল ও। জেগে উঠল তারপর। মনে হলো যথেষ্ট বিশ্রাম হয়েছে, আবার তরতাজা হয়ে উঠেছে। ওর পুরোনো মলিন পোশাক অদৃশ্য হয়ে গেছে, সে জায়গায় টাটকা ঢিলেঢালা টিউনিক দেখা যাচ্ছে। পোশাক পরা শেষ করেছে কি করেনি, এমন সময় দরজার বাইরে মিষ্টি নারী কণ্ঠের হাসি আর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে। চীনা মটির ডিশ আর ফলের রস নিয়ে হুড়মুড় করে হাজির হলো মেয়ে দুটো। খাবার সময় মেরেনের সাথে মিশরিয় ভাষায় কথা বলল দুই অপ্সরা, কিন্তু নিজেরা কথা বলার সময় পাঁচ মিশেলি ভাষা চালিয়ে গেল, সব ভাষাই যেন ওদের কাছে ডালভাত মনে হলো। তবে দুজনই স্পষ্টতই যার যার মাতৃভাষার প্রতিই বেশি পক্ষপাত দেখাল। আস্ত্রাতা লোনিয়, ওর সূক্ষ্ম সোনালি চুলের কারণ বোঝা গেল। উ লু দূর ক্যাথের সুরেলা ঘণ্টাধ্বনির মতো কথা বলে।
খাবার শেষ হলে মেরেনকে বাইরে রোদের আলোয় নিয়ে এল ওরা। একটা ফোয়ারা গভীর পুকুরে পানি ঢেলে দিচ্ছে এখানে। পরনের হাল্কা পোশাক ঝেড়ে ফেলে নগ্ন দেহে পুকুরের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুজনই। মেরেনকে নিজের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে নিতে ফিরে এল আস্ত্রাতা। ওর চুল ও শরীর পানিতে চকচক করছে। হাসতে হাসতে ওকে জড়িয়ে ধরল ও। ওর টিউনিক খুলে নিল, তারপর টেনে পুকুরে নামাল। ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল উ লু। ওকে পুকুরে নামানোর পর খুশিতে পানি ছিটাতে লাগল ওরা। অচিরেই ভদ্রতা বিসর্জন দিল মেরেন। ওদের মতোই খোলামেলা, নিঃসঙ্কোচ হয়ে উঠল। ওর চুল ধুইয়ে দিল আস্ত্রাতা, অবাক হয়ে ওর গিঁট পাকানো পেশির ক্ষত চিহ্নগুলো দেখতে লাগল।
দুই অপ্সরা ওর সাথে গা মেলানোর সময় ওদের খুঁতহীন দেহ সৌষ্ঠভে রীতিমতো অবাক হয়ে গেল মেরেন। পানির নিচে সারাক্ষণই ব্যস্ত ওদের হাত। ওরা দুজনে মিলে ওকে পুকুর থেকে তুলে গাছপালার নিচে একটা ছোট তাবুতে নিয়ে এল। পাথুরে মেঝেতে কার্পেট আর সিল্কের কুশনের তূপ। ওকে তার উপর শুইয়ে দিল ওরা, পুকরের পানিতে এখনও ভেজা ও।
এইবার দেবীর পূজা দেব আমরা, বলল উলু।
কীভাবে সেটা করতে চাও? জানতে চাইল মেরেন।
ভয় পেয়ো না। তোমাকে বাৎলে দেব, ওকে আশ্বস্ত করল আস্ত্রাতা। ওর পিঠে নিজের রূপালি শরীর সম্পূর্ণ মিলিয়ে দিয়ে পেছন থেকে কানে চুমু খেল। হাত
বাড়িয়ে উ লুকে সোহাগ করতে চাইল ও। সামনে থেকে মেরেনকে দুই পায়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে সে। কিছুক্ষণ বাদে ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল যেন ওরা তিনজনই একসাথে ভেসে গিয়ে একটা মাত্র প্রাণে রূপান্তরিত হয়েছে, ছয় পা, ছয় হাত ও তিন মাথাঅলা একটা প্রাণী।
*
মেরেনের মতো সকাল সকাল জেগে উঠল তাইতা। দীর্ঘ পথ চলায় ক্লান্ত হলেও কয়েক ঘণ্টার ঘুমে শরীর-প্রাণ সেরে উঠেছে। তক্তপোষে উপুড় হয়ে বসে আছে ও, রোদের আলো চুঁইয়ে ঘরে আসছে। বুঝতে পারছে এখানে একা নয়
তক্তপোষের পাশে বসে ওর দিকে চেয়ে হাসছে তানসিদ। শুভ দিন, ম্যাগাস। আপনার খাবার আর পানীয় নিয়ে এসেছি। নিজেকে শক্তিশালী করে তোলার অবসরে কশ্যপ আর সুমনা আপনার সাথে পরিচিত হতে উদগ্রীব হয়ে আছে।
ওরা কারা?
কশ্যপ আমাদের সম্মানিত যাজক, সুমনা আমাদের সম্মানিত মা। আপনার মতোই দুজনই বিশিষ্ট ম্যাজাই।
মন্দিরের উদ্যানে কুঞ্জে ওর জন্যে অপেক্ষা করছিল সুমনা। অজ্ঞাত বয়সের সুন্দরী মহিলা সে, পরনে জাফরানি জোব্বা। ওর কানের উপরে ঘন চুলে রূপালি ছোপ দেখা যাচ্ছে, চোখজোড়া প্রচণ্ড বুদ্দিদীপ্ত। আলিঙ্গন সেরে তাইতাকে ওর পাশে মাৰ্বল বেঞ্চে বসার আমন্ত্রণ জানাল সে। মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রার কথা জানতে চাইল। খানিকক্ষণ আলাপের পর সুমনা বলল, আপনারা ঠিক সময় মতো যাজক কশ্যপের সাথে দেখা করার জন্যে আসায় আমরা দারুণ খুশি। আর বেশি দিন আমাদের সাথে থাকবেন না উনি। তিনিই আপনাদের জন্যে তোক পাঠিয়েছিলেন।
জনতাম, এখানে ডেকে পাঠানো হয়েছিল আমাকে, কিন্তু কে ডাক দিয়েছে, জানা ছিল না, মাথা দুলিয়ে বলল তাইতা। আমাকে কেন তলব করেছেন উনি?
নিজেই বলবেন তিনি, বলল সুমনা। এখন আমরা ওর কাছেই যাব। ওর হাত ধরল সে। তানসিদকে রেখে এটা সর্পিল সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল, মনে হলো ওটার শেষ নেই বুঝি। অবশেষে সর্বোচ্চ মন্দির মিনারের চূড়ার একটা ছোট বৃত্তাকার কামরায় পৌঁছুলো ওরা। ওটার চারপাশ খোলা, উত্তরে দূরের তুষার-ঢাকা পাহাড়সারি পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায়। মেঝের মাঝখানে গদি ভর্তি একটা নরম তক্তপোষে এক লোক বসে আছেন।
ওর সামনে গিয়ে বসুন, ফিসফিস করে বলল সুমনা। বলতে গেলে সম্পূর্ণ কালা উনি, কথা বলার সময় ঠোঁটের নড়াচড়া দেখতেই হবে। সুমনার কথামতো করল তাইতা। নীরবতায় কশ্যপ আর ও পরস্পরকে খানিকক্ষণ জরিপ করল।
প্রাচীন বুড়ো কশ্যপ। চোখজোড়া ম্লান, ফিকে; মাঢ়ী দাঁতহীন। গায়ের ত্বক প্রাচীন পার্চমেন্টের মতো শুষ্ক, কোঁচকানো। চুল, দাড়ি ও ভুরুজোড়া কাঁচের মতো মলিন ও স্বচ্ছ। নিয়ন্ত্রণের অতীত অবিরাম কেঁপে চলেছে মানুষটার মাথা ও হাত।
কেন আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, ম্যাগাস? জানতে চাইল তাইতা।
কারণ আপনার মনটা ভালো, ফিসফিসে কণ্ঠে বললেন কশ্যপ।