সে উত্তর দিল, অবশ্যই, প্রভু। আমার কিছু লোক ইতোমধ্যেই এই জাহাজে চড়েছে।
দ্বিতীয় তিনতলা জাহাজটা দেখিয়ে বললাম, দিলবার এটা তার অধীনে নেবে। আর আকেমি তৃতীয় জাহাজটা নেবে।
আপনার নির্দেশ যথারীতি পালন করা হবে, প্রভু। মনে হচ্ছে শুধু তায়তা হতে জারাস এবার আমাকে প্রভুর পর্যায়ে উন্নীত করেছে। যাইহোক আমার সাথে তার এখনও তেমন সখ্যতা রয়েছে যাতে সে এখনও উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করতে পারে। আর সাথে সাথে করলোও তাই।
খোলা সাগরে পৌঁছার পর আমরা কোনদিকে যাব? আমরা কি পূর্বদিকে সুমেরিয়া না পশ্চিমদিকে মরুতানিয়া উপকূলের দিকে যাবে? তারপর সে আগবাড়িয়ে একটু উপদেশ দিতে চেষ্টা করলো। এই দুইদেশেই অবশ্য আমাদের মিত্র আছে। পুবে আছে দুই নদীর রাজ্যের রাজা নিমরদ। আর পশ্চিমে মরিতানিয়াতে আনফার রাজা শান-ডাকির সাথে আমাদের একটা মৈত্রী চুক্তি রয়েছে। আপনি কোনদিকে যেতে চাচ্ছেন তায়তা?
আমি সাথে সাথে তার কথার কোন উত্তর দিলাম না। বরং তাকে আমি আমার নিজের প্রশ্নটাই করলাম, আচ্ছা তুমিই বল জারাস। এই পৃথিবীর কোন রাজাকে তুমি এই পাঁচ লাখ রূপার সম্পদ নিয়ে বিশ্বাস করবে?
জারাস একটু হতবুদ্ধি হল। এ-ধরনের প্রশ্নের কথা সে ভাবেনি। সম্ভবত… না, শান-ডাকিকে অবশ্যই বিশ্বাস করা যায় না। তার লোকেরা সবাই জলদস্যু আর তিনি হচ্ছেন চোরদের রাজা।
আমি বললাম, আর নিমরদ সম্পর্কে কি বলবে? আমি অবশ্য তাকে আমার বুড়ো আঙুলের সমান একটা রূপার টুকরা দিয়েও বিশ্বাস করতে রাজি নই।
সে প্রতিবাদ করে বললো, কিন্তু কাউকে না কাউকে তো আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে। আর নয়তো রূপাগুলো আমরা কোনো নির্জন সৈকতে বালুর নিচে চাপা দিয়ে রেখে, পরে সুবিধামতো সময়ে এসে আবার উদ্ধার করতে পারি।
আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম, পাঁচ লাখ রূপার বাট? এতবড় একটা গর্ত করতে তো প্রায় একবছর লেগে যাবে আর এগুলো ঢাকতে পর্বত পরিমাণ বালু লাগবে। তার হতবুদ্ধি অবস্থা দেখে আমি বেশ মজা পাচ্ছিলাম। তারপর তার জন্য যে জাহাজটা বরাদ্দ করা হয়েছে, সেটার মাস্তুলের মাথায় ক্রিটের সোনালি আঁড়ের ছবিওয়ালা মিনোজের পতাকার দিকে তাকিয়ে বললাম, বাতাস আমাদের অনুকূলে আছে! আর দেবতা সবসময় সাহসী এবং উচ্চভিলাষী মানুষকে পছন্দ করেন।
সে আমার কথার প্রতিবাদ করে বললো, না তায়তা। বাতাস আমাদের অনুকূলে নেই। এটা সাগর থেকে খালের উপর দিয়ে সরাসরি এদিকে আসছে। বাতাসটা আমাদেরকে ডাঙার দিকে চাপ দিচ্ছে। মধ্য সাগরের খোলা পানিতে যেতে আমাদেরকে সবগুলো দাঁড় বাইতে হবে। আর আপনি যদি শান-ডাকি আর নিমরদকে বিশ্বাস না করেন, তাহলে কাকে বিশ্বাস করেন? কার কাছে যাব আমরা?
আমি তাকে বললাম, আমি শুধু ফারাও ত্যামোসকে বিশ্বাস করি। এই প্রথম সে সত্যি আমার উপর হতাশ হল।
তারপর একটু অবজ্ঞাভরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তবে যে পথ ধরে আমরা এখানে এসেছি, সেই পথেই আপনি ফারাওয়ের কাছে ফিরে যেতে চান? তাহলে কি উশু থেকে মাথায় করে রূপার পেটিগুলো আমরা বয়ে নিয়ে যাব। তারপর সাঁতার কেটে লোহিত সাগর পার হব? অবশ্য সেখান থেকে থিবস অল্প হাঁটা দূরত্বে রয়েছে। ফারাও কিন্তু আপনাকে দেখে বেশ অবাক হবেন, এ-বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন।
আমি একটু প্রশ্রয়ের হাসি হেসে তাকে বললাম, না জারাস। এখান থেকে আমরা দক্ষিণে নীল নদী দিয়ে যাব। বিশাল এই তিনটি ক্রিস্টান জাহাজ আর এগুলোর খোলে যে রূপা আছে তা সবশুদ্ধ নিয়ে সরাসরি আমরা থিবসে ফিরে যাব।
এবার সে হাসি থামিয়ে বললো, আপনি কি পাগল হয়েছেন তায়তা? এখান থেকে আসিউত পর্যন্ত নীলনদের প্রতিটি ইঞ্চি বিওনের অধীনে। হাইকসোদের মধ্য দিয়ে তিনশো লিগ আমরা নদী পথে যেতে পারবো না। এটা সত্যি পাগলামি। উত্তেজনার চোটে সে হাইকসো ভাষা বাদ দিয়ে মিসরী ভাষায় কথাটা বলছিল।
আমি এ কথার প্রতিবাদে তাকে তিরস্কার করে বললাম, তুমি যদি হাইকসো ভাষায় কথা বল, তাহলে সবকিছু সম্ভব হবে। যাইহোক আমাদের দুটো নৌকাতো আগেই ডুবিয়ে দিয়েছি আর তামিয়াত ছাড়ার আগে তৃতীয়টাও পুড়িয়ে যাব। নিশ্চিত করে যাব, যাতে আমাদের প্রকৃত পরিচয়ের কোনো ধরনের চিহ্ন এখানে না থাকে।
এবার সে আবার দাঁত বের করে হেসে বললো, মহান মাতা আসিরিস আর তার প্রিয় পুত্র হোরাসের নামে শপথ করে বলছি তায়তা, আমার মনে হয় আপনি যা বলছেন তা আপনি বিশ্বাস করেন। আবার সে দুইগাল হাসিতে ভরিয়ে দিয়ে বললো, তার মানে আপনার পরিকল্পনা ছিল যে, এসব কথা বলে আমাকে আপনার মতোই পাগল বানিয়ে ছাড়বেন, যাতে আমিও পাগল হয়ে আপনার কথায় রাজি হই, তাই না?
যুদ্ধের সময় পাগলামিই হয়ে যায় মতিস্থিরতা। আমার পিছু পিছু এসো। আমি তোমাকে দেশে নিয়ে যাব। একথা বলে আমি সিঁড়ি বেয়ে সামনের জাহাজের ডেকে উঠলাম। জারাসের বিশজন লোক সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। ওরা ইতোমধ্যেই নাবিকসহ পুরো জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ক্রিটান জাহাজটির নাবিকেরা ডেকের উপর এক সারিতে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে, হাত পেছন দিকে বাঁধা। বেশিরভাগেরই শরীরের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে। মোট ছয়জন ক্রিটান নাবিকের পেছনে জারাসের লোকেরা খোলা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।