আমি তার হাত ধরে দূতাবাসের সামনের ফটকের দিকে ছুটে চললাম। জারাস আর হুই তাদের লোকজনদের নিয়ে সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। জারাস ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফ দিয়ে নেমে আমার কাছে এসে বলতে শুরু করলো, আপনি ওদেরকে খুঁজে পেয়েছেন? তারপর আলখাল্লাপরা লক্সিয়াসকে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলো, রাজকুমারীরা কোথায়?
আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, যথেষ্ট হয়েছে। যেতে যেতে সবকিছু খুলে বলবো। লক্সিয়াস জানে কোথায় ওদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে। সে আমাদেরকে সেখানে নিয়ে যাবে।
দূতাবাসের আস্তাবলে হুই আরও ছয়টি ঘোড়া খুঁজে পেয়েছিল। সবাই ঘোড়ায় চড়ে এগিয়ে চললাম। আমি লক্সিয়াসকে আমার পেছনে বসালাম। সে দুই হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। চাবুক মেরে ঘোড়া ছুটালাম।
লক্সিয়াস পর্বতের পাশ দিয়ে দ্বীপের পশ্চিম দিকে আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো। দুই লিগ দূরত্ব যাওয়ার পর পথের একটি দুইমুখি বাঁক পেলাম। রাস্তার মূল রাস্তাটি সোজা চলে গেছে। আর অন্য শাখাঁটি ইডা পর্বতের চূড়ার দিকে উঠে গেছে। এই পথের চিহ্ন হিসেবে একটি বিশাল সিডার গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর উপরের ডালপালাগুলো গর্জনরত আগ্নেয়গিরির মেঘের দিকে উঠে গেছে।
লক্সিয়াস আমার কাঁধের পেছন থেকে বলে উঠলো, প্রভু তোরান বলেছেন এই গাছটির বয়স তিনহাজার বছর। তারপর আঙুল তুলে সামনে সিডার গাছের কাঠে পেরেক দিয়ে লটকানো একটি বিশাল বন্য সঁড়ের মাথার খুলি দেখিয়ে বললো, আর ঐ যে ওটি হচ্ছে ক্রোনাস দেবতার প্রতিক। এর শিংগুলো আমার ক্রীতদাস ওয়াগাকে যে ষাঁড়টি হত্যা করেছিল তার প্রায় দ্বিগুণ। বহুবছর ধরে রোদে পুড়ে রং জ্বলে চকচকে সাদা হয়ে গেছে।
এসব নিয়ে ভেবে আর এক মুহূর্তও নষ্ট না করে আমরা লক্সিয়াসের দেখানো পথে উপরের দিকে এগিয়ে চললাম। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথটি উপরে উঠে গেছে। সংকীর্ণ পথটি দিয়ে পাশাপাশি কেবল দুটি ঘোড়া চলতে পারবে। তারপর হঠাৎ পথটি একটি উঁচু কালো পাথরের চূড়ার সামনে শেষ হল। চূড়ার পাদদেশে একটি বিশাল পিতলের দরজা দেখা গেল। দরজাটির ঠিক মাঝখানে একই ধাতুর একটি গোলাকার তালার চাকা রয়েছে।
লক্সিয়াস আমার পেছনে জিনের উপর থেকে একটা বিড়ালের মতো লাফ দিয়ে মাটিতে নামলো। তারপর এক দৌড়ে তালার চাকার কাছে গিয়ে চাকাটি ঘুরাতে শুরু করলো। জোরে জোরে গুণে সে একবার বামদিকে আরেকবার ডান দিকে এভাবে কয়েকবার চাকাটি ঘুরালো।
তার পেছনে আমি ঘোড়া থেকে নেমে আমার ধনুকে একটা নতুন শুকনো ছিলা পরিয়ে ছিলাটা টেনে ধরলাম। তারপর তৃণির থেকে একজোড়া তীর নিয়ে কোমরবন্ধে গুজলাম, যাতে দরকার মতো সাথে সাথে তুলে নিতে পারি। তৃতীয় আরেকটি তীর ধনুকে লাগিয়ে বাম হাতে ধনুকের মাথা ধরলাম। ডান হাত দিয়ে খাপ থেকে তলোয়ার বের করলাম। জারাস, হুই আর অন্যরা আমাকে অনুসরণ করে অস্ত্রহাতে নিয়ে প্রস্তুত হল।
লক্সিয়াস শেষ একবার চাকাটা ঘুরাতেই যন্ত্রটি থেকে জোরে ক্লিক শব্দ শোনা গেল। ঢাকনিটা টেনে খুলতে লক্সিয়াসকে সাহায্য করতে আমি জারাসকে ইশারা করলাম। তারপর একপাশে সরে দাঁড়িয়ে ধনুক উঁচু করে জারাসের কাঁধের উপর দিয়ে লক্ষ স্থির করলাম।
ভারী দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল। এর পেছনেই সবুজ পোশাক পরা হেরেমের দুইজন উগ্রচণ্ডা রক্ষী দাঁড়িয়ে রয়েছে। উভয়েই খোলা তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। দরজা খোলার সাথে সাথে ওরা সামনে এগিয়ে জারাস আর লক্সিয়াসকে আক্রমণ করলো।
জারাস তৈরি ছিল, সে একজনকে তার বালকসুলভ নগ্ন বুকে তলোয়ার বিধিয়ে হত্যা করলো। আমি অন্যজনকে তীর ছুঁড়ে মারলাম। এতো কাছের লক্ষ্যে তীরটি তার বুকে ঢুকে পাঁজর ভেদ করে পিঠ দিয়ে বের হল। দুই নারী যোদ্ধাই টু শব্দ না করে মাটিতে ঢলে পড়লো। আমরা মৃতদেহের উপর দিয়ে পার হলাম। কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে আমি আর জারাস সুরঙের মধ্য দিয়ে ছুটলাম। দুইপাশের দেয়ালে ব্র্যাকেটে লাগানো ধূঁয়া উঠা মশালের আলোয় সুড়ঙটি মৃদু আলোকিত হয়ে রয়েছে।
লক্সিয়াস আমার পেছন থেকে বলে উঠলো, তোরান বলেছেন প্রত্যেকবার বামদিকে ঘুরবেন আর নয়তো আমরা এই গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাবো।
আমি পর পর তিনবার বামদিকে মোড় ঘুরলাম। তারপর সুরঙের সামনে থেকে মন্ত্র পরার মৃদু শব্দ প্রতিধ্বনিত্ব হয়ে ভেসে এলো। সামনে এগোতেই শব্দটি বাড়তে লাগলো। আরেকবার বামে মোড় ঘুরতেই সামনে মৃদু আলোর আভাস চোখে পড়লো।
লক্সিয়াস আর অন্যদেরকে সাবধান করে সেখানেই দাঁড়াতে বললাম। তারপর দুইপাশে জারাস আর হুইকে নিয়ে আমি সামনে এগোলাম। আলো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, তারপর শেষ বাকটি ঘুরলাম।
সেখানে আরও দুইজন নারী যোদ্ধা আমাদের দিকে পেছন ফিরে সুরঙের পথ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওদের সম্পূর্ণ মনোযোগ সামনের দিকে থাকায় ওরা আমাদের উপস্থিতি টের পেল না। আমরা নিঃশব্দে ওদের পেছনে এগিয়ে গেলাম, জারাস আর হুই দুই হাত দিয়ে ওদের মুখ চেপে ধরলো, ওরা কোনো শব্দ করতে পারলো না। তারপর দ্রুত একবার তরবারি ঝলসে উঠতেই মেয়েগুলোর দেহ মাটিতে ঢলে পড়লো। ওদের শরীরের উপর দিয়ে সামনে এগোতেই আমরা একটা ব্যালকনিতে এসে পৌঁছলাম। জীবন্ত আগ্নেগিরির গা কেটে ব্যালকনিটি তৈরি কর হয়েছে।