এমন অতি উদারতা ঠিক হজম হচ্ছে না। কিন্তু সামনের প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে যাকে রানিং মেট করেছে, তার সম্পর্কে প্রশংসা না করে উপায় নেই!
ওরা দু জনেই টিসের ছোট্ট গোল নিতম্ব আর পিঠে ছড়িয়ে থাকা কোঁকড়া কালো চুলে চোখ বোলায়। স্কার্টের নিচে থেকে মাঝেমধ্যে উঁকি দিচ্ছে একজোড়া সুগঠিত বাদামি পা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে তোমাকে ঠিক মানায় না, কিন্তু টিসে অবশ্য সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে দারুণ উতরে যাবে।
আগামি আগস্টে আমরা যখন ইলেকশন জিতবো, ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওকে আরো ভালো মানাবে।
এই সময়ে ঘাড় ফিরিয়ে ওদের দিকে তাকালো রোয়েন।
রাস্তার ওপারে যাই এসো, কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে কখন যে ওরা লুক্সরের জাদুঘরের নতুন অংশের কাছে চলে এসেছে, টেরই পায় নি নিকোলাস। রাস্তা পার হয়ে মিউজিয়ামের প্রবেশ পথে যার যার স্বামীর হাত ধরলো ওরা।
চওড়া বুলেভার্দ অতিক্রমের সময় ঘোড়ায় টানা ছোট্ট রথের পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলো ওরা, মুখ নামিয়ে রোয়েনের গালে ঠোঁট বুলালো নিকোলাস। তুমি সত্যি খুব সুস্বাদু–লেডি কুয়েনটন-হারপার।
আপনি আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন, স্যার নিকি! খিলখিল হাসিতে ফেটে পরে
রোয়েন বলে। জানেনই তো, ও রকম করে আমাকে কেউ ডাকে না।
যাদুঘরের প্রবেশমুখে এসে থমকে দাঁড়ায় ওরা দু জনা। কারনাকের মতোই লম্বা, হাইপোস্টাইল থাম তৈরি করা হয়েছে এখানে। তবে আকৃতিতে ছোট্ট। হলুদ স্যান্ডস্টোনে তৈরি দেয়াল, ভবনের সারিগুলো পরিষ্কার এবং সাধারণ। খুবই আকর্ষণীয়।
মিউজিয়ামের প্রবেশপথে ওদের আমন্ত্রণ জানায় রোয়েন। এখনো পাবলিকের জন্য খোলা হয় নি যাদুঘরটা। সোমবারে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী প্রেসিডেন্ট মুবারক আসছেন। ইথিওপিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে থাকছে টিসে এবং মেক। দরজায় দাঁড়ানো প্রহরী দু জন রোয়েনকে সালাম দিয়ে গেট খুলে দিল।
যাদুঘরের ভেতরটা মৌন আর শীতল। এয়ার কন্ডিশনিং করা হয়েছে এমনভাবে, যেনো প্রাচীন সম্পদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি না হয়। মামোসের দারুণ ট্রেজারের চমৎকার প্রদর্শনী করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব এবং সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে সব সম্পদ; রাজকীয় নীল আলোয় যেনো জ্বলছে ওগুলো।
চার সদস্য শান্ত এবং সমাহিত ভঙ্গিতে সমস্ত ট্রেজার পেরিয়ে হেঁটে চলে, নরমস্বরে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয় রোয়েন। অবাক বিস্ময় ওদেরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। চূড়ান্ত প্রকোষ্ঠের সামনে দাঁড়িয়ে এখন সবাই, এখানেই রয়েছে সবচেয়ে মূল্যবান সংগ্রহ।
মামোসের সম্পদের বেশির ভাগটাই এখনো ডানডেরা নদীর নিচের সমাধিতে আটকে রয়েছে–ভেবে দেখুন, ফিসফিসায় টিসে। আরেকবার ওই অভিযান শুরু করতে ইচ্ছে করছে আমার।
আরে, বলতে ভুলে গেছি। মেক হাসে। স্মিথসোনিয়ান কোম্পানি বিরাট একটা অঙ্ক ঘোষণা করেছে, এ প্রজেক্টে ডানডেরা নদী থেকে আবার সমাধি সম্পদ উত্তোলনের কাজ হবে। মিশর আর ইথিওপিয়া–দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে।
দারুণ খবর! খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে রোয়েন। এই সমাধি নিজেই পৃথিবী শ্রেষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হয়ে উঠবে, ইথিওপিয়া বহু টাকা কামাবে ট্যুরিজম থেকে।
এতো দ্রুত নয়, মেক নিমুর বাধা দেয়। একটা শর্ত আছে তাদের।
মুখ মলিন হয়ে যায় রোয়েনের। কি শর্ত?
তাদের দাবি–আপনি, রোয়েন, প্রজেক্টের পরিচালক হবেন।
খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠলো রোয়েন। এরপর, কপট ভাগম্ভিরতার সাথে বলল, আমারও একটা শর্ত আছে।
সেটা আবার কী? মেক জানতে চায়।
আমি নিজে প্রজেক্টের জন্য সহকারী নির্বাচিত করব।
হাসিতে ফেটে পরে মেক নিমুর। আমরা সবাই জানি, কে সেটা। নিকোলাসের পিঠে চাপড়ে দেয় সে। শুধু লক্ষ্য রেখো, সমস্ত আর্টিফ্যাক্ট যেনো ওর হাত থেকে বাঁচিয়ে আনতে পারো!
নিকির কোমর ধরে কাছে টানে রোয়েন। ও বদলে গেছে একেবারে। এবারে তার প্রমাণ দিব। স্বামীর কোমর ধরে রেখে সবাইকে শেষ প্রকোষ্ঠে নিয়ে গেল রোয়েন।
প্রবেশমুখে এসে থমকে দাঁড়ায় মেক এবং টিসে। কক্ষের মধ্যখানে আর্মারড কাঁচে মোরা ডিসপ্লে কেস দেখতে থাকে। লাল-সাদা উচ্চ এবং নিম্ন রাজ্যের মুকুট আর ফারাও মামোসের মৃত্যু-মুখোশ বসে আছে তীব্র স্পটলাইটের নিচে।
মেক নিমুর সবার আগে এ শক থেকে মুক্তি পায়। ডিসপ্লে কেসের সামনের প্যানেলে এসে প্লেটটা ভালো করে পড়ে সে–স্যার নিকোলাস এবং লেডি কুয়েনটন-হারপারের উপহার।
অবাক বিস্ময়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিকোলাসকে দেখে সে। আর তুমি কিনা আমাকে তিরষ্কার করছিলে নীল মুকুটের টাকা সমস্তটা দিয়ে দেওয়ায়। নিজেই দেখছি লুটের শেয়ার দিয়ে দিয়েছ!
কাজটা কঠিন হয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বীকার করে নিকোলাস। কিন্তু অত্যন্ত নাজুক একটা আলটিমেটাম দিয়েছিল একজন–সে এ মুহূর্তে আমার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে!
খুব বেশি দুঃখ করো না, খোকা, হাসতে হাসতে বলল রোয়েন। নেমেস মুকুট পিটার ওয়ালশের কাছে বেঁচে ইতোমধ্যে সুইটজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছে ও। বলেও ওটা আদায় করতে পারি নি।
দ্যাখো, আমার ব্যক্তিজীবনের এতো কিছু প্রকাশ করে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না, নিকোলাস বলে ঘার গোঁজ করে। অনেক আগেই সূর্য অস্ত গেছে, এখন পানাহারের সময়। মনে হয়, হোটেলের বারে ভালো কিছু পানীয় দেখেছি আসার সময়। চলো গিয়ে দেখি, ঠিক দেখলাম কি না।