আরে, মজার ব্যাপার। লয়েডস্ সিন্ডিকেট ভালো খবর দিয়েছে। এখনো একেবারে শেষ হই নি বলা যায়।
আমার মা যেমন বলে–বিড়ালের অনেক জীবন।
অর্ধেক অবশ্য টিসে আর মেক নিমুরের ভাগে গেছে।
অন্তত, একটা ভালো কাজে গেছে। দাঁত দাঁত ঘষলো রোয়েন। কণ্ঠস্বরে আক্রমণাত্মক ভাব। এসব জানাতে আপনি ফোন করেছেন?
না। আরো একটা মজার খবর আছে। আপনার প্রিয় লেখক, উইলবার স্মিথ সমাধি আবিষ্কারের কাহিনী নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে সম্মত হয়েছেন। তিনি ওটার নাম দিয়েছেন দ্য সেভেন্থ স্ক্রোল। আগামী বছরের শুরুর দিকে প্রকাশ পাচ্ছে। বইটা। তাঁর অটোগ্রাফ সহ একটা কপি আমি পাঠিয়ে দিব আপনার কাছে।
আশা করি, এবার অন্তত ভদ্রলোক সব সত্যি কথা লিখেছেন, শুষ্ক স্বরে রোয়েন বলে।
বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা বজায় থাকলো। এরপর রোয়েন বলল, আমার সামনে পর্বতসমান কাজ। যদি আর কিছু বলার না থাকে, মানে
বলার আছে যে!।
বলুন?
আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
রোয়েনের দম আটকানোর আওয়াজটা স্পষ্ট শুনতে পেল নিকোলাস।
খুব নরম সুরে, বেশ খানিকটা পরে ও প্রশ্ন করলো, এরকম একটা অসম্ভব কথা কেন আপনি ভাবছেন?
কারণ আমি উপলব্ধি করেছি আপনাকে আমি ভালোবাসি, জবাব দিল নিকোলাস।
আবার নীরবতা। কিছুসময় পর রোয়েন বলল, ঠিক আছে।
ঠিক আছে মানে কী?
ঠিক আছে, মানে আমি রাজি। এ বিয়েতে আমার মতো আছে।
এ রকম একটা অসম্ভব কথা কেন আপনি ভাবছেন? এবারে, নিকির পালা।
কারণ, আমি উপলব্ধি করেছি। সবকিছুর পরেও, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আজ বিকেলে, ৫:৩০ মিনিটে হিথরো থেকে মিশরের উদ্দেশ্যে একটা বিমান ছেড়ে যাচ্ছে। পাগলের মতো গাড়ি চালালে হয়তো প্লেনটা ধরতে পারবো আমি। কিন্তু কায়রো পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে।
যতে দেরিই হোক আমি এয়ারপোর্টে আসবো।
তবে, আর দেরি নয়। আমি আসছি! তাড়াতাড়ি ফোন ছেড়ে দরজার উদ্দেশ্যে ছুটলো নিকোলাস। হঠাৎ কী মনে হতে থমকে দাঁড়ালো সে, দ্রুত ফিরে এসে ডেস্ক থেকে তুলে নিল টাইটার উশ তি।
এসো, ব্যাটা বুড়ো বর্বর, দরাজ হাসি হেসে বলল নিকি। বাড়ি ফিরে যাচ্ছ তুমি–বিয়ের উপহার হিসেবে!
*
শেষ কথা
রক্ত-বেগুনি সন্ধ্যার আলোয় গলিপথ ধরে হেঁটে ফিরছিল ওরা। ওদের নিচে চির-প্রবাহমান নীল নদ তার শান্ত, সবুজ জলরাশি নিয়ে বয়ে চলেছে, ধারণ করে রেখেছে কতো না পুরাতন গোপন কানাকানি। লুক্সরে, রামেসিস-এর মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের কাছে নদী তীরে একদিন যেখানে ফারাও মামোসের রাজকীয় জলযান নোঙর ফেলেছিল, পাটাতনে বসে ছিল গর্বিত ক্রীতদাস টাইটা আর তার ভালোবাসা, কত্রী লসট্রিস; সেখানটায় এসে একটু থেমে দাঁড়ালো কপোত কপোতি। নদীর ওপারে সন্ধ্যার ছায়া নেমে গেছে, দূর-দূরান্তের পাহাড়শ্রেণী ধারণ করে আছে বিগত জীবনের যতো স্মৃতি।
মামোসের সমাধি মন্দিরের গলিপথগুলো কবেই ঢাকা পরে গেছে তাঁর পরে জন্মানো ফারাওদের নিজস্ব স্থাপনার কারণে। কোনো মানুষ আজো পারে নি তার সমাধি মন্দির আবিষ্কার করতে, যে সমাধিতে কখনো শোয়া হয় নি মামোসের। ডুরেঈদ ইবনে আল সিমা যে প্রস্তরখন্ডের আড়ালে পরে থাকা সুড়ঙপথে খুঁজে পেয়েছিলেন বিস্মৃত রানি লসট্রিসের সমাধি এবং সেই সঙ্গে টাইটার লেখা স্ক্রোল, ধারণা করা হয়, তারই সন্নিকটে কোথায়ও অনাবিষ্কৃত রয়েছে ফারাও মামোসের সমাধির গুপ্তপ্রবেশ পথ।
ঘনায়মান সাঁঝের আলোয় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ওরা চারজন। নিজেদের মধ্যকার অটুট বন্ধুত্ত ওরা পবিত্র নিস্তব্ধতার মধ্যেই যেনো উপভোগ করতে চায়। একটা দ্রুতগতির নৌকা পার হয়ে যায় ওদের। নদীর উজান থেকে এসেছে ওটা, অনেক ট্যুরিস্টে বোঝাই, দশ দিনের জলপথ ভ্রমনে এতোটুকু ক্লান্ত নয়, উত্তেজিত ভঙ্গিতে হাত দিয়ে দেখাচ্ছে রামেসিসের সমাধি মন্দিরের থাম আর মূর্তি। সন্ধ্যার পবিত্রতা যেনো তাদেরও ছুঁয়ে গেছে, ফিসফিস করে কথা বলছে তারা।
টিসের হাতে হাত ধরে আছে রোয়েন। একসঙ্গে হাঁটছে দুই বান্ধবী। ওদের হালকা-পাতলা গড়ন, মধু-রঙা ত্বক আর মিষ্টি হাসির রিনিঝিনি শব্দ সাহারা মরু থেকে আসা তপ্ত বাতাসেও শান্তির পরশ বুলায়। নিকোলাস এবং মেক নিমুর আসছে ওদের পেছন পেছন। কোমল চোখে দেখছে নিজেদের জীবনসঙ্গিনীকে।
তো, তুমি তাহলে এখন আদ্দিসের বড়ো হর্তাকর্তা, মেক নিমুর। শেষমেষ যোদ্ধা থেকে রাজনীতিবিদ। বিশ্বাসই হয় না।
সবকিছুরই একটা সময় আছে। যুদ্ধ বলো বা শান্তি, এক মুহূর্তের জন্য সিরিয়াস হয়ে উঠে মেক। নিকি হাসে।
ওহ হো, রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে তোমার কথাবার্তার ধরনও পাল্টে গেছে দেখছি, হালকা করে মেকের হাতে ঘুসি মারে নিকোলাস। এক ধাক্কায় শক্তিশালী শুফতা দস্যু থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী!
নীল মুকটের বিক্রির টাকা কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। মেক স্বীকার করে। তবে ওরা জানতো, আমি ছ তা ইথিওপিয়ায় কোনো গণতান্ত্রীক ইলেকশন কেউ মেনে নেবে না। শেষ মেষ তো আমিই জিতলাম।
একটাই দুঃখ, সমস্ত টাকা তুমি ওদের দিয়ে দিলে। পনেরো মিলিয়ন পাউন্ড। অনেক টাকা! নি োলাস বলল।
সরাসরি তো আর দিই নি, মেক সংশোধন করে বলে, রাজস্ব খাতে দিয়েছি। এখন নজরদারী করছি, কী করা হয় ওই টাকা দিয়ে।
যাই বলো, পনেরো মিলিয়ন বহু টাকা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নিকোলাস।