প্রথমে কিছু না বলে হাসলো নিকোলাস। তারপর বলল, পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
কনফারেন্স টেবিলের দিকে পা টিপে টিপে এগুলেন ওয়ালশ, যেনো ভয় পাচ্ছেন দ্রুত হাঁটলে চোখের সামনে থেকে মুকুট দুটো গায়েব হয়ে যাবে। এগুলো একদম নতুন, ফিসফিস করলেন তিনি। তা না হলে অন্তত অস্তিত্ব সম্পর্কে খবর পেতাম।
বলতে পারেন সদ্য মাটির নিচে থেকে তোলা হয়েছে, বলল নিকোলাস। আপনিই প্রথম দেখছেন।
মামোস! নেমেস মুকুটের খোদাই করা লিপির উপর চোখ বুলালেন ওয়ালশ। গুজবটা তাহলে মিথ্যে নয়! আপনি নতুন একটা সমাধি খুলেছেন।
প্রায় চার হাজার বছরে পুরানো একটা সমাধিকে আপনি যদি নতুন বলেন, আমার আপত্তি নেই।
ওয়ালশ আর তাঁর উপদেষ্টারা টেবিলটাকে ঘিরে দাঁড়ালেন। কারো মুখে কথা নেই, সবার চোখ চকচক করছে।
শুধু আমরা নিজেরা এখানে থাকব। কিছুক্ষণ, বললেন ওয়ালশ, নিকোলাসকে সরে যেতে বলছেন। কথা বলার সময় হলে আপনাকে ডাকব আমি। প্লিজ!
এক ঘণ্টা পর আবার কনফারেন্স রুমে ফিরে এলো নিকোলাস। তিন ভদ্রলোক টেবিলের তিন দিকে এমন ভঙ্গিতে বসে আছেন, যেনো মুকুট দুটোর অবিচ্ছেদ্য অংশ পরিণত হয়েছেন তাঁরা। সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালেন ওয়ালশ, অনিচ্ছাসত্ত্বেও কনফারেন্স রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তারা।
দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ালশ কর্কশ সুরে জানতে চাইলেন, কত?
পনেরো মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জবাব দিল নিকোলাস।
তার মানে প্রতিটি সাড়ে সাত মিলিয়ন।
না, প্রতিটি পনেরো মিলিয়ন। দুটো ত্রিশ মিলিয়ন।
ওয়ালশ এমনভাবে দুলে উঠলেন, মনে হলো চেয়ার থেকে সরে যাবেন। আপনি পাগল, না অন্য কিছু?
আসুন পার্থক্য কমিয়ে আনি, বললেন ওয়ালশ। সাড়ে বাইশ মিলিয়ন।
মাথা নাড়লো নিকোলাস। এক দর।
এ আপনার সাংঘাতিক অন্যায়, হারপার! আপনি ডাকাতি করতে চাইছেন।
উত্তর না দিয়ে হাতঘড়ি দেখলো নিকোলাস। তারপর ছোট্ট করে বলল, দুঃখিত।
চেয়ার ছাড়লেন ওয়ালশ। দুঃখিত আমিও। ঠিক আছে, আমি তাহলে গেলাম। পরে হয়তো আপনার সঙ্গে দেখা হবে, নতুন কিছু পেলে আমাকে খবর পাঠাবেন।
পেছনে হাত বেঁধে দরজার দিকে এগুলেন তিনি। দরজাটা খুলছেন, পেছন থেকে ডাকলো নিকোলাস, মি. ওয়ালশ!
ব্যঙ্গভঙ্গিতে ওর দিকে ঘুরলেন ওয়ালশ। ইয়েস?
পরের বার আপনি আমাকে শুধু নিকোলাস বলে ডাকবেন, আর আমি আপনাকে শুধু পিটার বলে, ঠিক আছে? আমরা তো পুরানো বন্ধুই, তাই না?
শুধু এটুকুই বলার আছে আপনার?
হ্যাঁ! আর কি? নিকোলাসকে হতভম্ব দেখাচ্ছে।
আপনি আমাকে টরচার করছেন, অভিযোগ করলেন ওয়ালশ, ফিরে এলেন টেবিলের কাছে। চেয়ারটায় ধপাস করে বসে পড়লেন। আপনি নরকে পচবেন।
নিকোলাস কথা বলছে না।
ঠিক আছে, টাকাটা আপনি কীভাবে চান?
দুটো ব্যাংক ড্রাফটে, প্রতিটি পনেরো মিলিয়ন ডলার।
ইন্টারকমের দিকে হাত বাড়ালেন ওয়ালশ, চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট, মসিউ মন্টিফ্লেরিকে ডাকুন।
*
কুয়েনটন পার্কে, নিজের স্টাডিরুমের ডেস্কে বসে সামনের দেয়াল ঢাকা প্যানেলিং-এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে নিকোলাস। ডেস্কের তলায় হাত গলিয়ে ইলেট্রনিক কন্ট্রোল-এর গোপন বোতামে চাপ দিল, প্যানেলের একটা অংশ নিঃশব্দে সরে গেল একপাশে বেরিয়ে পড়লো ডিসপ্লে কেবিনেটের আর্মারড প্লেট গ্লাস। একই সঙ্গে আপনা থেকে জ্বলে উঠলো সিলিঙের স্পটলাইট, চোখ ধাঁধানো রশ্মিগুলো পড়লো কেবিনেটে রাখা জিনিসগুলোর উপর। ফারাও মামোসের মৃত্যু মুখোশ আর দ্বৈত মুকুটের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো নিকোলাস।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মনে হলো কী যেনো নেই ওখানে। তারপর ডেস্ক থেকে টাইটার উশব তি তুলে নিল ও, মুখের সামনে ধরে এমন সুরে কথা বলল, যেনো নিজের সঙ্গেই আলাপ করছে। নিঃসঙ্গতা কী জিনিস, তুমি তা ভালোই বোঝে, তাই না? এ ও বোঝ যে কাউকে ভালোবেসে না পাওয়াটা কী যন্ত্রণাময় একটা অভিজ্ঞতা!
স্ট্রাচুটা রেখে দিয়ে ফোনের দিকে হাত বাড়ালো নিকোলাস। আন্তর্জাতিক একটা নাম্বারে ফোন করে তিন বার রিঙ হতে আরবি কণ্ঠস্বর উত্তর দিল।
মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালকের অফিস। আপনার জন্য কী করতে পারি?
ডক্টর আল সিমা আছেন? আরবিতেই জানতে চাইলো নিকোলাস।
একটু ধরুন। আমি ওনাকে লাইনে দিচ্ছি।
ডক্টর আল সিমা বলছি। রোয়েনের গলা শুনে নিকোলাসের শিরদাঁড়া বেয়ে রোমাঞ্চকর একা শিহরণ নেমে এলো।
রোয়েন?
আপনি! ফিসফিস করে বলল রোয়েন। জীবনেও ভাবিনি আবার কথা হবে!
ডিরেক্টর হয়েছেন, কংগ্রাচুলেট করার জন্য ফোন করলাম।
আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন, বলল রোয়েন।
তিনটা ক্রেট কম পেয়েছি। আমরা।
জ্ঞানী এক লোক যেমন বলেছিল, বন্ধুদের ঠকানো সবচেয়ে সহজ-ওরা বেঈমানী আশা করে না। আপনিও করেন নি, আমিও না। কথাটার সত্যতা আপনার অন্তত বোঝা উচিত, রোয়েন।
তিন সেকেন্ড চুপ করে থাকলো রোয়েন। আপনি ওগুলো বিক্রি করেছেন, শুনেছি আমি। মুকুটগুলোর জন্য পিটার ওয়ালশ বিশ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন।
ত্রিশ মিলিয়ন, শুধরে নিল নিকোলাস। তবে শুধু নীল আর নেমেস মুকুটের বিনিময়ে। এ মুহূর্তে আমার চোখের সামনে লাল আর সাদা ক্রাউন সহ ডেথ-মাস্ক কেবিনেটে সাজানো রয়েছে।
এখন তবে লয়েডস্ ব্যাঙ্কে সমস্ত দেনা শোধ করতে পারবেন। আপনি উঠে দাঁড়িয়েছেন আবার।