প্যানেল খোলা হতে ভেতরে হাত গলিয়ে একটা জিনিস বের করলো নিকোলাস। ওর হাতের দিকে তাকিয়ে প্রায় আঁতকে উঠলো জেনি। গড! কি ওটা?
প্রাচীন মিশরের নীল যুদ্ধ মুকুট, বলল নিকোলাস। মুকুটটা ড্যানিয়েলের হাতে তুলে দিল ও। বাঙ্কের উপর রাখো, তবে খুব সাবধানে।
কমপার্টমেন্টের ভেতর আবার হাত গলালো নিকোলাস, আরেকটা, মুকুট বের করে আনলো। আর এটা হলো নেমেস ক্রাউন। জেনি বাদেনহোর্সটের হাতে ধরিয়ে দিল।
আর এটা কী? এটা হলো একত্রিত দুই রাজ্যের লার আর সাদা ক্রাউন। আর এটা? ফারাও মামোসের ডেথ-মাস্ক। এটা? এটাই কিন্তু শেষ নয়-লিপিকা টাইটার উশব তি।
কিন্তু, হতভম্ব দেখাচ্ছে ড্যানিয়েলকে, মাথা নাড়ছে এদিক ওদিক, আসওয়ানে ওরা যে ক্রেটগুলো নামিয়ে নিয়ে গেল, ড. রোয়েন গোনেন নি?
গুনেছেন কিনা জানি না, বলল নিকোলাস। তবে গুনলেও বাহান্নটা ক্রেট হত।
তাহলে তো অন্তত তিনটে লম্বা ক্রেট হালকা হয়ে গেছে, মাথায় করে নিয়ে যাবার সময় টের পায় নি ওরা যে ওগুলো খালি?
টয়লেটের জন্য এক গ্যালনের প্রচুর কেমিকেল বোতল ছিল এখানে, আরো ছিল বিশ-পঁচিশটা স্পেয়ার অক্সিজেন সিলিন্ডার, বলল নিকোলাস। ওজন ঠিক রাখার জন্য ওগুলো ক্রেটে ভরে দিয়েছি।
ড্যানিয়েলের হাসি দেখে কে! তবে তার প্রশ্ন শেষ হয় নি এখনো। আপনি জানলেন কীভাবে ড. রোয়েন আমাদেরকে ধোঁকা দেবেন?
আমার জানা উচিত যে ও চোর নয়, ওর ওই কথাটা মিথ্যে ছিল না। রোয়েন সত্যি সৎ একটা মেয়ে, পা থেকে মাথা পর্যন্ত, সর্ব অর্থে। আমি বলতে চাইছি, আমাদের ঠিক বিপরীত চরিত্র।
খোঁচা মেরে বলা হলেও প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ, মি. নিকোলাস, শুকনো গলায় বলল জেনি। কিন্তু আপনাকে সন্দিহান করে তোলার জন্য নিশ্চয়ই আরো কারণ ছিল।
হ্যাঁ, অবশ্যই ছিল, তার দিকে ঘুরলো নিকোলাস। প্রথম সন্দেহ জাগে আমরা যখন ইথিওপিয়া থেকে ফিরে আসি, এসেই মিশনে যাবার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন রোয়েন। বুঝতে পারি কিছু একটা করছেন। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হই রোয়েন যখন টিসের মাধ্যমে আদিসের মিশরীয় দূতাবাসে একটা মেসেজ পাঠালেন। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট সম্পর্কে মিশরের কাউকে সতর্ক করে দিয়েছেন উনি।
আরে, একটা জঘন্য মেয়ে!
সাবধান! হুঙ্কার দিয়ে উঠলো নিকোলাস। সে অত্যন্ত সভ্রান্ত একজন মেয়ে। সৎ, দেশপ্রেমিক, তরুণী। মনের মধ্যে তার এতোটুকু কলুষতা নেই
আচ্ছা, আচ্ছা! ড্যানি স্যাপারকে চোখ মারলো জেনি। ভুল হয়েছে। মাপ চাই!
*
প্রাচীন মিশরের মাত্র দুটো মুকুট রাখা হয়েছে পালিশ করা ওয়ালনাট কনফারেন্স টেবিলে। কনফারেন্স রুমটা জুরিখের একটা ফাইভ স্টার হোটেলের দশতলায়। সবগুলো জানালোর পর্দা টেনে দিয়েছে নিকোলাস, সিলিঙে লুকানো উৎস থেকে আলো পড়ছে মুকুট জোড়ার উপর। হোটেলটার একটা স্যুইট ভাড়া নিয়েছে নিকোলাস, সেই সঙ্গে প্রাইভেট কনফারেন্স রুমটাও।
আমন্ত্রীত অতিথির জন্য একা অপেক্ষা করার সময় চারদিকে তাকিয়ে প্রস্তুতিতে কোনো খুঁত আছে কিনা দেখে নিল নিকোলাস, তারপর আয়নার সামনে হেঁটে এসে স্যান্ডহার্সট টাইয়ের নটটা অ্যাডজাস্ট করলো। চিবুকের কাটাটা শুকিয়ে গেছে। ওর পরনের ডোরাকাটা স্যুটটা সেভাইল রো থেকে অর্ডার দিয়ে তৈরি করা।
কোমল শব্দে ইন্টারকম বেজে উঠলো। হ্যান্ডসেট তুললাম নিকোলাস।
পিটার ওয়ালশ, আপনার অতিথি, নিচের লবিতে পৌঁছেছেন, স্যার নিকোলাস।
প্লিজ, ভদ্রলোককে ওপরে পাঠিয়ে দিন, বলল নিকোলাস।
কলিংবেল বাজতেই কনফারেন্স রুমের দরজা খুলে দিল ও। দরজার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন পিটার ওয়ালশ। স্যার নিকোলাস, বললেন তিনি, আশা করি আপনি আমার সময় নষ্ট করছেন না। আপনার মেসেজ পেয়ে ব্যক্তিগত প্লেন নিয়ে সেই ফোর্ট ও অর্থ থেকে ছুটে আসতে হয়েছে আমাকে। নিকোলাস তাঁকে টেলিফোন করেছিল ত্রিশ ঘন্টা আগে। এতো তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবার অর্থ হলো, ফোন পেয়েই প্লেনে চড়ে বসেন ভদ্রলোক।
ভেতরে আসুন, মি, ওয়ালশ, সহাস্যে বলল নিকোলাস। বলুন কী খাবেন।
এসব প্যাচাল বাদ দিন তো, ভেতরে ঢুকে বললেন ওয়ালশ। আগে বলুন কী দেখাতে চান। তাঁর পিছু দিয়ে আরো দুই জ্বলোক ভেতরে ঢুকলেন, দু জনকেই চেনে নিকোলাস।
দরজা বন্ধ করে কনফারেন্স টেবিলের দিকে তাকালো নিকোলাস। আসুন আমার সঙ্গে।
ধনকুবের পিটার ওয়ালশের বয়স সত্তর হলেও, দেখে মনে হয় পঞ্চাশ। পাকানো, তেল চকচকে খুঁটির মতো কাঠামো। ফর্বস ম্যাগাজিন-এর ধনকুবেরদের তালিকায় সাত নম্বরে আছেন তিনি, বলা হয়েছে এক দশমিক সাত বিলিয়ন নগদ মার্কিন ডলারের মালিক ভদ্রলোক।
অ্যান্টিকুয়ারিয়ান জগত্তা খুব ছোটই বলতে হবে, এ জগতে অল্প কিছু লোক চলাফেরা করেন, কাজেই তাদের প্রায় সবাইকেই চেনে নিকোলাস। ওয়ালশের একজন সঙ্গী ডালাস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, প্রাচীন ইতিহাস পড়ান। ওই ভার্সিটিতে নিয়মিত চাঁদা দেন ওয়ালশ। অপর ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব চেয়ে নাম করা ও শ্রদ্ধেয় আন্টিকস ডিলার।
ওয়ালশ অকস্মাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন, ফলে পেছনের ওঁরা দু জন তার সঙ্গে ধাক্কা খেলেন, যদিও ওয়ালশ তা খেয়ালই করলেন না।
এ আমি কী দেখছি? বিড়বিড় করলেন তিনি, তারপর নিকোলাসের দিকে চট করে একবার তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বললেন, এগুলো কি নকল?