তাই কী? বিড়বিড় করলো নিকোলাস, এখনো রোয়েনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।
মন্ত্রীর হাতের ইশারায় একজন সেক্রেটারি এগিয়ে আসে। হাতের ট্রেতে লাল ভেলভেট কাপড়ের উপর শুয়ে আছে একটা রাজকীয় তারা–মাঝখানে সিংহের ছবি।
তারাটা হাতে তুলে নিকোলাসের দিকে এগুলেন আবু সিন। মিশরের সাহসী সিংহ, প্রথম ক্লাস মর্যাদা বলে নিকোলাসের গলায় লাল ফিতে জড়ানো মেডালটা পরিয়ে দিলেন। ওর নীলে কাদা-মাটি চৰ্চিত শার্টে ঝুলে রইলো ওটা।
আহত লোকজনকে একটা ট্রাকে তোলা যেতে পারে। পেছন ফিরে কাকে যেনো ইঙ্গিত দিলেন তিনি, প্লেনের ভেতর সশস্ত্র লোকজন ঢুকে পড়লো। তাদের মধ্যে পাঁচজন লোক পাহারায় থাকলো, বাকি দশ-বারোজন হাত লাগালো . ক্রেটগুলো নামানোর কাজে।
দশ মিনিটের মধ্যে খালি হয়ে গেল বিগ ডলি। বাহান্নটা ক্রেট চারটে চাচ চনী ট্রাকে তোলা হলো, ট্রাকগুলো ঢেকে দেওয়া হলো তারপুলিন দিয়ে। সময় নষ্ট না করে কনভয়টা রওনা হয়ে গেল তখুনি। বাকি একটা ট্রাকে আহত গেরিলাদের তোলা হয়েছে, তবে এখনো সেটা দাঁড়িয়ে আছে।
বিদায়, স্যার নিকোলাস, মিটিমিটি হেসে নিকোলাসের দিকে ডান হাতটা বাড়ালেন। আবু সিমবেল থেকে এদিকে সরিয়ে আনার জন্য সত্যি দুঃখিত। তবে কী জানেন, সব ভালো যার শেষ ভালো। আমি জানি, নিজের পথে রওনা হবার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন আপনি। কাজেই আপনাকে আর আটকে রাখব না। বিদায়ের আগে আপনার জন্য আর কিছু করতে পারি আমি? আপনাদের সঙ্গে যথেষ্ট ফুয়েল আছে তো?
জেনি বাদেনহোর্সটের দিকে তাকালো নিকোলাস, জেনি তিক্ত সুরে বলল, আছে।
নিকোলাসের দিকে ফিরে আতালান আবু সিন বললেন, লুক্সরের যাদুঘরে আপনার উদ্ধার করে আনা ফারাও মামোসের ট্রেজার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছি আমরা। খুব শীঘ্রই আমাদের প্রেসিডেন্ট মুবারক আপনাকে আমন্ত্রণ জানাবেন। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে। ডক্টর আল সিমা যে আমাদের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যান্টিকুইটিজ এর ডিরেক্টর হয়েছেন–এতো আশা করি আপনি জানেন। নতুন মিউজিয়ামের দায়িত্বে তিনিই থাকবেন। নিশ্চই আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন উনি।
ড্যানি স্যাপার আর দু জন পাইলটকে মাতা নুইয়ে সম্মান দেখালেন মন্ত্রী।
আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন, বলে র্যাম্প বেয়ে নামতে শুরু করলেন।
রোয়েন তাকে অনুসরণ করতে যাবে, পেছন থেকে নরম সুরে ডাক দিল নিকোলাস, রোয়েন।
পাথর হয়ে গেল রোয়েন। তারপর অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধীরে ধীরে নিকোলাসের দিকে ঘুরলো, ওরা ল্যান্ড করার পর এ প্রথম ওর চোখের দিকে তাকালো।
এ আমার পাওনা ছিল না, বলল নিকোলাস, আর তারপরই আবেগের একটা ধাক্কা খেয়ে উপলব্ধি করলো নিঃশব্দে কাঁদছে রোয়েন। ওর ঠোঁট জোড়া, কাঁপছে, চোখের পানি গড়াচ্ছে গাল বেয়ে।
আমি দুঃখিত, নিকি ফিসফিস করে বলল রোয়েন। কিন্তু আপনার জানার কথা যে আমি চোর নই। মামোসের গুপ্তধন মিশরের প্রাপ্য, আমাদের নয়।
তাহলে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল, সেটা মিথ্যে? জিজ্ঞেস করলো নিকোলাস।
না! বলল রোয়েন। আমি… ভাষা হারিয়ে ফেলে থরথর করে কেঁপে উঠলো রোয়েন, ঝট করে ঘুরে এস্তা হরিণীর মতো ছুটে নেমে গেল র্যাম্প বেয়ে। ওখানে, রোদের মধ্যে, ক্যাডিলাকের দরজা খুলে অপেক্ষা করছে শোফার। মন্ত্রী আগেই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। বাকি ট্রাকটায়ও সশস্ত্র লোকগুলো উঠে পড়ছে।
এই ব্যাটা মিশরীয়রা এ পাল্টে ফেলার আগেই, চলুন ভাগি এখান থেকে! জেনি বলল।
দারুণ আইডিয়া, তিক্ত স্বরে বলল নিকোলাস।
*
আবার আকাশে ওঠার পর মেডিটারেনিয়ান কোর্স ধরে সেই উত্তর দিকেই রওনা হলো হারকিউলিস। নিকোলাস, ড্যানিয়েল, জেনি আর ফ্রেড-চারজনই ককপিটে রয়েছে। দীর্ঘ সবুজ সাপের মতো নীলনদ ওদের পাশাপাশি এঁকেবেঁকে পেছন দিকে ছুটছে।
দীর্ঘ যাত্রা পথে খুব কম কথা বলছে ওরা। তিক্ত প্রসঙ্গটা একবার শুধু জেনি তুললাম। এ যাত্রা ফি ছাড়াই কাজ করতে হলো, কী বলেন?
আমি ঠিক টাকার লোভে আসিনি, মন্ত্রব্য করলো ড্যানিয়েল। তবে পারিশ্রমিক পেলে ভালো লাগত। বাচ্চাকাচ্চাদের নতুন জুতো দরকার।
কেউ চা খাবে নাকি? জিজ্ঞেস করলো নিকোলাস, ওদের কথা যেনো শুনতে পায় নি।
মন্দ হয় না, বলল জেনি। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন পাওনা ষাট হাজার ডলার এক কাপ চা খাইয়ে পরিশোধ করবেন, আমার বলার কিছু নেই।
গ্যালিতে চলে এলো নিকোলাস, সবার জন্য চা বানালো। ককপিটে ফিরে এসে পরিবেশনও করলো নিজ হাতে। সবাই আশা করছে কিছু না কিছু বলবে ও। কিন্তু মিশরীয় সীমান্ত পার না হওয়া পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে রাখলো নিকোলাস
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ খুলল, ঋণশোধ করি নি, এমন রেকর্ড কি আমার আছে? নেই। যার যা পাপ্য সবাই তা পাবে, বোনাসসহ।
সবাই ওরা কঠিন দৃষ্টিতে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলো নিকোলাসের দিকে। সবার মনের সন্দেহ প্রকাশ পেল জেনি বাদেনহোর্সটের একটা মাত্র শব্দে। কীভাবে?
আমাকে একটু সাহায্য করো, স্যাপার, বলল নিকোলাস, তারপর সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে কন্ট্রোল ফ্রেডের হতে দিয়ে ওদেরকে অনুসরণ করলো জেনি। মেইন ডেকে বেরিয়ে এসে ল্যাভেটোরতে ঢুকলো ওরা। জেনি আর স্যাপার দোরগোড়া থেকে দেখছে, পকেট থেকে একটা টুল বের করে কেমিকেল টয়লেটের ঢাকনি খুলে ফেললো নিকোলাস। স্কুগুলো খুলছে নিকোলাস, পেছনে নিঃশব্দে হাসছে জেনি। স্কুগুলো গোপন প্যানেলটাকে জায়গা মতো বসিয়ে রেখেছে। হারকিইলস স্মাগলারদের প্লেন, কাজেই করিগরি ফলিয়ে ভেতর দিতে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। জেনি আলফ্রেড শুধু পরিশ্রম করে নি, বাপ-বেটাকে অনেক মাথা খাঁটিয়ে পরিবর্তনগুলো গোপন রাখারও ব্যবস্তা করতে হয়েছে। এ রকম গোপন হোল্ড শুধু ল্যাভেটোরিতেই নয়, ইঞ্জিন হাইজিং আর ফিউজিলাজের অন্যান্য অংশেও আছে।