অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকালো জেনি, তারপর মাইক্রোফোনে বলল, দিস ইজ জেডডব্লিউইউ ফাইভহানড্রেড। আমরা সহযোগিতা করব। প্লিজ আপনাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করুন।
আপনার নতুন হেডিং জিরো ফাইভ থ্রী। নির্দেশ এখুনি পালন করুন।
প্লেনটাকে পুব দিকে ঘুরিয়ে নিল জেনি, তারপর চার্টের দিকে তাকালো। আসওয়ান! সবিস্ময়ে বলল। ওরা আমাদেরকে আসওয়ানে পাঠাচ্ছে! তাহলে তো এখুনি আসওয়ানকে জানাতে হয় যে আমাদের সঙ্গে আহত লোকজন আছে।
মেইন হোল্ডে ফিরে এসে রোয়েনের ঘুম ভাঙালো নিকোলাস, লক্ষ্য করলো ল্যাভেটোরির দিকে যাবার সময় সামান্য একটু টলছে। তবে দশ মিনিট পর যখন ফিরে এলো, পুরোপুরি তাজা ও সচেতন দেখালো ওকে, মুখ ধুয়ে চুল আঁচড়েছে।
*
ওদের সামনে এখন আবার নীলনদকে দেখা যাচ্ছে, দুই পাড়েই ছড়িয়ে পড়েছে আসওান শহর। আসওয়ানের কন্ট্রোল টাওয়ার নির্দেশ দিতে ল্যান্ড করার জন্য রানওয়ে বরাবর সোজা হলো হারকিউলিস। মরুভূমি থেকে ওদেরকে পথ দেখিয়ে এদিকে এনেছে মিশরীয় এয়ারফোর্সের ফাইটারগুলো, এখন আর ওগুলোকে দেখা যাচ্ছে না, তবে টাওয়ারের সঙ্গে তাদের রেড লীডারের কথাবার্তা শোনা গেল। বন্দি হারকিউলিসকে আসওয়ান টাওয়ারের হাতে তুলে দিয়ে ফিরে যাচ্ছে তিন ফাইটারের বহরটা।
পেরিমিটার বেড়া পেরিয়ে এসেরানওয়েতে ল্যান্ড করলো হারকিউলিস। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে নির্দেশ এলো, ডান দিকে ঘুরে যান। মেইন রানওয়ে থেকে বাঁক ঘুরতেই সামনে ছোট একটা ভেহিকেল দেখা গেল, ছাদের সাইনবোর্ডে লেখা, ইংরেজি ও আরবিতে, আমাকে অনুসরণ করুন।
ভেহিকেলটা ওদেরকে পথ দেখিয়ে একটা হ্যাঁঙ্গারের সামনে নিয়ে এলো। প্লেন স্থির হতেই হ্যাঁঙ্গারের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো পাঁচটনী পাঁচটা ট্রাক, দ্রুত এগিয়ে এসে ঘিরে ফেললো হারকিউলিসকে সাদা কাপড় পরা সশস্ত্র কিছু লোক লাফ দিয়ে নিচে না এলো, হাতের অটোমেটিক রাইফেল প্লেনের দিকে তাক করা।
টাওয়ারের নির্দেশ পেয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করলো জেনি। কী ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না, বলে নিকোলাসের দিকে তাকালো সে। আপনি পারছেন, নিকি?
কথা না বলে মাথা নাড়লো নিকোলাস, খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে আবার নির্দেশ এলো। টেইল র্যাম্প নামাতে বলছে।
ককপিটে ওরা কেউ কথা বলছে না, আড়ষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সবাই, চেহারায় বিস্ময় ও উদ্বেগ।
হঠাৎ পেরিমিটার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো সাদা একটা ক্যাডিলাক, সরাসরি ছুটে এসে হারকিউলিসের কার্গো র্যাম্পের সামনে ব্রেক কষল। লাফ দিয়ে নিচে নেমে দরজা খুলল শোফার, শেষ বিকেলে রোদে বেরিয়ে এলেন বিশাল বপু আরোহী। চেহারায় বলে দেয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অভিজাত মানুষ, ধীর-স্থির ও দৃঢ়চেতা। হালকা রঙের ট্রপিক্যাল স্যুট পরে আছেন, জুতো জোড়া সাদা, মাথায় পানামা হা, চোখে গাঢ় চশমা। র্যাম্প বেয়ে প্লেনে চড়ছেন তিনি, সঙ্গে দু জন পুরুষ সেক্রেটারি।
প্লেনের ভেতর ওরা পাঁচজন অপেক্ষা করছে।
কর্তা ব্যক্তি চোখ থেকে গাঢ় চশমা খুলে ব্রেস্ট পকেটে খুঁজলেন। রোয়েনকে চিনতে পেরে হ্যাট মাথা থেকে খুলে হাসলেন। ডক্টর আল সিমা–রোয়েন! আপনি অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন! কংগ্রাচুলেশন্স। রোয়েনের হাতটা ধরে ঝাঁকালেন, নিকোলাসের দিকে তাকাবার সময়ও সেটা ছাড়লেন না।
আপনি নিশ্চয়ই স্যার নিকোলাস কুয়েটন-হারপার। সত্যি কথা বলতে কি, আপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি। ডক্টর রোয়েন, আপনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন না?
কথা বলার সময় নিকোলাসের সরু চোখের দিকে তাকাতে পারলো না রোয়েন, উনি আমাদের মাননীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী আতালান আবু সিন।
সত্যি কথা বলতে কী, নিকোলাসের গলায় ক্ষীণ ব্যঙ্গ, আমিও আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে অপ্রত্যাশিত উল্লাস অনুভব করছি, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়।
আমাদের প্রাচীন ও গৌরবময় অতীত ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া বিপুল প্রত্ন সম্পদ মিশরে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও মিশরীয় জনগণের তরফ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, স্যার নিকোলাস। সাজিয়ে রাখা অ্যামুনিশন ক্রেটগুলোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকালেন মন্ত্রী আতালান আবু সিন।
প্লিজ, এটাকে খুব বড় করে দেখবেন না, বলল নিকোলাস, তবে রোয়েনের উপর থেকে পলকের জন্যও সরাতে পারছে না। যদিও রোয়েন ওর দিকে ভুলেও তাকাচ্ছে না।
কী যে বলেন, স্যার, মন্ত্রী অমায়িক হাসি হাসলেন।এই অভিযানে আপনার অনেক টাকা খরচ হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ সচেতন। কাজেই আমরা চাই না আপনি খালি পকেটে ফিরে যান। ড. রোয়েন আমাকে জানিয়েছেন, আপনার পকেট প্রায় আড়াই লাখ স্টার্লিং বেরিয়ে গেছে। কোটের ভেতরের পকেট থেকে একটা এনভেলাপ বের করলেন তিনি, বাড়িয়ে দিলেন নিকোলাসের দিকে।
এতে মিশরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটা চেক আছে, দু লাখ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডের। চেকটা নিয়ে আপনি আমাদেরকে ঋণমুক্ত করুন, স্যার নিকোলাস, প্লিজ।
আপনি সত্যি খুব উদার মানুষ, মিনিস্টার, এনভেলাপটা পকেটে ভরার সময় বলল নিকোলাস, ভাব দেখে মনে হলো হাসি চেপে রেখেছে। এটাও বোধহয় ড. আল সিমার পরামর্শ?
অবশ্যই, সহাস্যে বললেন। আপনার সম্পর্কে ড. রোয়েনের খুব উঁচু ধারণা…