চায়ের পানি ফুটছে, নিজের ইমার্জেন্সি প্যাক থেকে একটা নাইলন ওয়ালেট বের করলো নিকোলাস, ভেতরে কিছু ওষুধপত্র আছে। একটা শিশি থেকে পাঁচটা ট্যাবলেট বের করলো, গুড়ো করে ফেলে দিল দুটো মগে। মগ দুটোর চা ঢেলে চিনি আর দুধ মেশালো, ভালো করে নাড়লো চামচ দিয়ে। আরব দেশের মেয়ে, গরম এক মগ চায়ের লোভ সামলতে পারবে না।
আহত গেরিলাদের খাওয়ানো হয়ে গেছে, গ্যালি থেকে ফিরে এসে ড্যানিয়েল আর রোয়েনকে মাখন লাগানো রুটি আর সুপ খেতে দিল নিকোলাস, সঙ্গে মগ ভর্তি চা। ওরা দু জন চা খাচ্ছে, ফ্লাইট ডেকে ফিরে এলো নিকোলাস, হেলাল দিল জেনি বাদেনহোর্সটের সিটের পিঠে। মিশরীয় সীমান্তে পৌঁছতে কতক্ষণ লাগবে আপনার? জানতে চাইলো ও।
চার ঘণ্টা বিশ মিনিট, বলল জেনি।
মিশরীয় এয়ার স্পেস এড়িয়ে যাবার কোনো উপায় আছে? আবার প্রশ্ন করলো নিকোলাস।
সিটে ঘুরে গিয়ে নিকোলাসের দিকে অবাক হয়ে তাকালো জেনি। লিবিয়ার উপর দিয়ে যাওয়া যেতে পারে, তবে গাদ্দাফির এয়ারফোর্স বিনা নোটিশে গুলি করে ফেলে দিলে কিছু করার নেই। আরো সমস্যা আছে। ওদিকে গেলে সাত ঘণ্টা বেশি। থাকতে হবে আকাশে, ফুয়েলে কুলাবে না-সাহারার কোথাও ফোর্স ল্যান্ডিং করতে হবে। একটা ভুরু কপালে তুললাম সে। কী ব্যাপার, নিকোলাস, এ ধরনের প্রশ্ন করার অর্থ কি?
কোনো অর্থ নেই, হঠাৎ উঁকি দিল মনে, বলল নিকোলাস।
এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে ঘাবড়ে দেয়, জোর করে হাসলো জেনি।
তার কাঁধ চাড়ে দিল নিকোলাস। ভুলে যান।
মেইন হোল্ডে ফিরে এসে নিকোলাস দেখলো দুটো ফোল্ড-ডাউন বাঙ্কে বসে রয়েছে রোয়েন ও মাটিন। রোয়েনের খালি মগটা ওর পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে। পাশে বসলো নিকোলাস; একটা হাত তুলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল রোয়েন।
ভাগ্য ভালো যে আপনার মাথার ক্ষতটা প্রায় শুকিয়ে গেছে, ফিসফিস করে বলল নিকোলাসকে।
প্রথমে ঘুমিয়ে পড়লো ড্যানিয়েল। শুয়ে পড়লো সে, চোখ বুজল, খানিক পরই নাক ডাকতে শুরু করলো। কয়েক মিনিট পর নিকোলাসের গায়ে ঢলে পড়লো রোয়েন, সাবধানে ওর পা দুটো বাঙ্কের উপর তুলে ভালো করে শুইয়ে দিল নিকোলাস, একটা চাদর গলা পর্যন্ত টেনে দিল। তারপর ঝুঁকে আলতো একটা চুমো খেলো রোয়েনের কপালে। যাই তুমি করে থাকো, তোমাকে কীভাবে আমি ঘৃণা করতে পারি!
ল্যাবেটোরিতে ঢুকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিল নিকোলাস। হাতে প্রচুর সময় আছে। অন্তত তিন-চার ঘণ্টার আগে রোয়েন আর ড্যানিয়েলের ঘুম ভাঙবে না। আর জেনি ও ফ্রেডকে ককপিটে ব্যস্ত থাকতে হবে সারাক্ষণ, প্লেনের কোথায় কী ঘটছে জানার সুযোগ হবে না ওদের।
কাজটা শেষ হতে হাতঘড়ি দেখলো নিকোলাস। দু ঘণ্টা লেগেছে। টয়লেট সিট বন্ধ করে হাত ধুলো ও। ক্ষুদে কেবিনে আরেকবার চোখ বুলিয়ে দরজার তালা খুলল।
ফোল্ড ডাউন বাঙ্কে এখনো অঘোরে ঘুমাচ্ছে রোয়েন আর ড্যানিয়েল। মেইন হোল্ড থেকে আবার ফ্লাইট ডেকে চলে এলো নিকোলাস। কান থেকে এয়ারফোন খুলে ঘাড় ফিরিয়ে ওর দিকে তাকালো ফ্রেড। সামনে নীলনদ। এতো সময় ধরে টয়লেটে ছিলেন, আমি তো ভাবলাম আপনার কিছু অবশিষ্ট থাকে কি না!
তার বাপের সিটের উপর ঝুঁকে নিকোলাস জানতে চাইলো, ঠিক কোথায় রয়েছি আমরা?
উরুর ওর মেলা চার্টটায় মোটা তর্জনী রাখলো জেনি। এখানে। দেড় ঘণ্টার মধ্যে মিশরীয় সীমান্তে পৌঁছে যাব।
জবাব না দিয়ে রেডিও সেট অন করলো জেনি। এবারে আমার কাজ দেখাবার পালা।
মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মাউথপিসে কথা বলছে, হ্যালো, আবু সিমবেল দিস ইজ জুলু হুইস্কি ইউনিফর্ম ফাইভ জিরো জিরো।
তৃতীয়বার ডাকার পর আবু সিমবেল কন্ট্রোল সাড়া দিল। রুটিন অনুসারে নিজের পরিচয় ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলো জেনি। পাঁচ মিনিট পর আবু সিমবেল কন্ট্রোল টাওয়ার উত্তরে গতি বজায় রাখার অনুমতি দিল তাকে।
আরো এক ঘণ্টা নির্বিঘ্নে উড়লো ওরা, তবে প্রতি মিনিটে স্নায়ুর উপর চাপ আরো বাড়ছে নিকোলাসের।
অকস্মাৎ, কোনো রকম আভাস না দিয়ে, একটা ফাইটার ইন্টারসেপটরের রূপালি ঝলক দেখা গেল সরাসরি সামনে। ওদের নিচ থেকে উঠে এলো সেটা, হারকিউলিসের বো-র সামনে। ওদের নিচ থেকে উঠে এলো সেটা, হারকিউলিসের বো-র সামনে। রাগে ও বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলো জেনি, পর মুহূর্তে দেখলো রকেট বেগে আরো দুটো ফাইটার ওদের প্লেনের নিচ থেকে উঠে আসছে, এতো কাছে মনে হলো যে কোনো মুহূর্তে সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
সবাই ওরা ফাইটার প্লেনগুলোর টাইপ চিনতে পারল। মিগ টোয়েনটি ওয়ান, মিশরীয় এয়ারফোর্সের মুল শক্তি। ডানার নিচে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এয়ার-টু এয়ার মিসাইল, পড় থেকে ঝলছে। আনআইডেনটিফায়েড এয়ারক্রাফট! মাউথপিসে চিৎকার করছে জেনি। স্টেট ইওর কল সাইন!
ইতোমধ্যে দুটো ফাইটার হারকিউলিসের দু পাশে চলে এসেছে, অপরটা উঠে এসেছে ওদের মাথার উপর আকাশে।
জবাব এলো, জেড-ডব্লিউ-ইউ ফাইভ হানড্রেড, মিশরীয় বিমান বাহিনীর রেড লিডার। ইউ উইল কনফার্ম টু মাই অর্ডারস।
ঘাড় ফিরিয়ে নিকির দিকে তাকালো জেনি। কোথাও কিছু একটা ঘটেছে। কী ব্যাপার?
ঠিক কী ঘটছে আমিও বুঝতে পারছি না।
রেড লীডার যা বলছে শোনো, ড্যাড, বাপকে পরামর্শ দিল ফ্রেড। তা না হলে মিসাইল ছুঁড়ে উড়িয়ে দেবে আমাদের।