কারো হাতেই অস্ত্র নেই। বেশিরভাগই ওদেরকে ঘরটা থেকে বের হতে দেখেনি, বা দেখলেও বোঝেনি যে ওরা আসলে কারা।
সেন্টারাসের দলটা দেরি না করে আক্রমণ করে বসলো। ডোরি আর আবোলি অভিজ্ঞ যোদ্ধা। অসংখ্য যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছে। যামা আর তুলা ওদের বাবার লড়াইয়ের কাহিনি শুনে শুনে বড় হয়েছে। ওরাও আজ জীবনে প্রথম লড়াইয়ের স্বাদ নিলো। আলফ উইলসন আর বাকিরা এর আগে এভোবার কোর্টনীদের সাথে নানান অভিযানে গিয়েছে যে ওরা একেবারে নিখুঁতভাবে জানে যে কি করতে হবে।
দস্যুরা বলা যায় টেরও পেলো না যে ওদের সাথে কি হচ্ছে। বেশিরভাগই কিছু বুঝে ওঠার আগেই অক্কা পেলো। কয়েকজন হাতের কাছে যা পেলো তা দিয়েই আত্মরক্ষার চেষ্টা করলো-নেভিগেশনের বই, থালা বাটি, কাপড়ের গাটরি-কিন্তু তাদেরকেও অনায়াসে পেড়ে ফেলা হলো। চোখের কোনা দিয়ে টম দেখতে পেলো যে ডোরিয়ান মাপা পদক্ষেপে সামনে আগাচ্ছে। ওর সামনের দস্যুর হাতে ছুরি। ডোরিয়ান তরবারি দিয়ে ঝটকা মেরে ছুরিটা ফেলে দিলো, সাথে সাথেই সেটা ঘুরিয়ে দস্যুর হৃৎপিণ্ড বরাবর বসিয়ে দিলো। তারপর কবজির মোচড়ে তরবারিটা বের করে হাতল দিয়ে পিছনে আক্রমণোদ্যত একজনের মুখে আঘাত করলো। লোকটা মুখ চেপে পিছিয়ে গেলো কয়েক পা, ডোরিয়ান সামনে এগিয়ে তাকেও এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো।
কিন্তু গুটিকয়েক দস্যু ঠিকই সিডি পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। “সবাই ডেক-এ যাও জলদি,” আদেশ দিলো টম। এতোক্ষণে উপরের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই নিচে কি হচ্ছে সেটা টের পেয়ে গিয়েছে, ওদের কেউ যদি উপরে ওঠার রাস্তাটা বন্ধ করে দেয় তাহলে টম আর ওর দল নিচেই আটকা পড়ে যাবে।
টম গুলির বেগে সিঁড়ির দিকে ছুটলো। সিঁড়িটা রক্তে পিচ্ছিল হয়ে আছে, তবুও ও তিনটা করে ধাপ একবারে পার হতে লাগলো। সিঁড়ির মাথায় একজন লোককে দেখা গেলো; টম একটা পিস্তল বের করে বাম হাত দিয়ে গুলি করলো তাকে। এতো কাছে থেকে গুলি না লাগার প্রশ্নই আসে না। লোকটা ওর উপর মুখ থুবড়ে পড়লো। টম একদিকে সরে গিয়ে সংঘর্ষ এড়ালো, তারপর এক লাফে বাকি সিঁড়িটা টপকে উপরের ডেক-এ এসে উঠলো।
যুদ্ধের উত্তেজনায় ওর সবগুলো স্নায়ু টানটান হয়ে আছে। এক নজরেই সব চোখে পড়লো ওর পিছন দিকে বন্দীদেরকে জড়ো করে রাখা হয়েছে অস্ত্রধারী দস্যুরা ঘিরে রেখেছে তাদেরকে; জাহাজের ক্যাপ্টেন হাঁটু মুড়ে বসে আছে, সারা শরীর রক্তাক্ত; একটা মহিলাকে মেঝেতে চেপে রাখা হয়েছে, বিবস্ত্র, এক দাড়িওয়ালা দস্যু তার উরুর ফাঁকে একটা তরবারি ধরে আছে।
টম ওর দ্বিতীয় পিস্তলটা বের করে গুলি করলো। কিন্তু একটু বেশি তাড়াহুড়া করায় গুলি লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পিছনের আর একটা লোকের গায়ে লাগলো। দস্যুদের ক্যাপ্টেন লাফ মেরে উঠে দাঁড়ালো। অন্ধ আক্রোশে সে হাতের তরবারিটা দিয়ে শোয়ানো মেয়েমানুষটাকে বিদ্ধ করতে গেলো।
আর একটা গুলির শব্দ পাওয়া গেলো। ডোরিয়ান টমের পাশে উঠে এসেছে। ওর হাতের দুটো পিস্তল থেকেই ধোঁয়া উড়ছে; দস্যুদের ক্যাপ্টেন তরবারি ফেলে কবজি চেপে টলতে টলতে পিছনে সরে গেলো। রক্ত পড়ছে সেখান থেকে।
টম ভাইয়ের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসলো। “গুড় শট, ডোরি।”
“আমিতো ব্যাটার হৃদপিণ্ডের দিকে তাক করেছিলাম,” ডরিয়ান গুলিহীন পিস্তলটা কোমরে গুজতে গুজতে বললো। তারপর আবার তরবারিটা তুলে নিলো ডান হাতে। এক দস্যু বর্শা হাতে ওর দিকে এগিয়ে এলো। ডোরিয়ান একপাশে সরে গিয়ে আঘাতটা এড়ালো, ফলে লোকটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। ডোরিয়ান সেই সুযোগে নিজের তরবারি গেঁথে দিলো। একেবারে বুকের মাঝ বরাবর ঢুকলো তরবারিটা, ফলে শোল্ডার ব্লেডের মাঝখানে প্রায় এক বিঘত পরিমাণ লম্বা একটা ক্ষত সৃষ্টি হলো।
আবোলি ততোক্ষণে আবার নিচে নেমে গিয়েছে। টমও ওর পিছু পিছু নিচে নেমে গেলো। আবারও জাহাজের পিছনে আর একটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেলো। হুঙ্কার দিয়ে উঠে ডাওজারের লোকজন এবার ওদের বন্দীকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ওদের কাছে অস্ত্র ছিলো না কিন্তু দস্যুরা ছিলো একদম অপ্রস্তুত। কয়েকজন লুটতরাজে চলে গিয়েছিলো; আর বাকিরা ছিলো লেগ্রাঞ্জের সাথে মহিলাটার কান্ড কীর্তি দেখায় ব্যস্ত। কয়েকজন নিজেদের অস্ত্র নামিয়ে রেখেছিলো, ফলে এখন ওরা দুই দিক থেকেই আক্রমণের শিকার হলো। নাবিকেরা দস্যুদের অস্ত্র জোর করে কেড়ে নিলো, নাহয় এমনভাবে চেপে রাখলো যাতে ওরা ওগুলো আর ব্যবহার করতে না পারে। টম এর ভিতর দিয়েই এগিয়ে দস্যুদের সর্দারকে খুঁজতে লাগলো।
ওর পা কিছু একটায় আটকে গেলো। চোখ নামিয়ে সেদিকে তাকালো ও। একটু আগে দেখা মহিলাটা, শরীর বাকিয়ে একটা বল-এর মতো হয়ে আছে, ছেঁড়া জামা দিয়েই আব্রু রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কাছেই একটা গনগনে ব্রেজিয়ার জ্বলছে। আশেপাশের হট্টগোলে সবাই ভুলে গিয়েছে সেটার কথা।
এই যুদ্ধের উত্তেজনার মাঝেও, টম সতর্ক হয়ে গেলো। আগুন হচ্ছে সকল নাবিকের নিকৃষ্টতম ভীতি–যা কিনা একটা জাহাজকে মুহূর্তেই কালো ছাইতে রূপান্তরিত করতে পারে।
আবোলিও দেখেছে সেটা। ও একটা পা দিয়ে ব্রেজিয়ারটা তুলে নিয়ে পাশের দস্যুদের জাহাজে ছুঁড়ে দিলো। গরম কয়লা ছড়িয়ে পড়লো ডেক জুড়ে। একটা গিয়ে পড়লো এক গাদা রশির উপর, কিন্তু ডাওজারের এই হট্টগোলের মাঝে কেউ সেটা খেয়াল করলো না।