লেগ্রাঞ্জের শিকার হাত ফসকে যাচ্ছে। কিন্তু ফাইটিং কক-এ প্রায় দুইশ লোক আছে; আর ডাওজারে সর্বোচ্চ হলে একশোর কাছাকাছি লোক হবে। ফলে এতো ক্ষয় ক্ষতির পরেও দস্যুরা এখনো সংখ্যায় বেশি। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে ওদের দরকার শুধু সাহস।
প্রচণ্ড আক্রোশে চিৎকার করে উঠে লেগ্রাঞ্জ একটা দুলতে থাকা রশি পাকড়ে নিজের কোমরে বেঁধে নিলো, তারপর মুক্ত হাতটায় একটা পিস্তল তুলে নিয়ে আবার রেইলের উপর উঠে দাঁড়ালো।
“কাউকে জ্যান্ত ছাড়বো না,” গর্জে উঠলো ও। তারপর দড়িতে ঝুলে ধোঁয়ার ভিতর দিয়েই ডাওজারের ডেক-এ গিয়ে নামলো। একজন নাবিক ওকে দেখতে পেলো, কিন্তু হাতের মাস্কেটের গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় সে একটা তরবারি তুলে নিতে গেলো। লেগ্রাঞ্জ একেবারে মুখে গুলি করে শুইয়ে দিলো তাকে। তারপর পিস্তলটা ছুঁড়ে ফেলে কোমর থেকে আর একটা তুলে নিলো। আর একটা নাবিক ওর সামনে পড়ে গেলো, লেগ্রাঞ্জ ওকেও গুলি করলো, তারপর নিজের তরবারি বের করলো।
একটু পরেই ডাওজারের ডেক জুড়ে লোহার ঝনঝনানি আর খালি পায়ের ধুপধাপ শব্দ শোনা যেতে লাগলো, কারণ লেগ্রাঞ্জের সাঙাতেরাও ওকে অনুসরণ করে এটায় এসে নামতে শুরু করেছে। প্রায় প্রত্যেকের গায়েই মৃত সঙ্গীদের রক্ত আর মাংস মেখে আছে, প্রথমেই ওরা হাত দিয়ে নাড়িয়ে ধোয়াটা পরিষ্কার করে নিলো। ডাওজারের লোকজন মুহূর্তের মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়লো। এতো কিছুর পরেও দস্যুরা ওদের চাইতে সংখ্যায় এখনো অনেক বেশি। আর এই মুহূর্তে দস্যুরা সবাই একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্যে মারাত্মক ক্ষেপে আছে। একে একে ডাওজারের প্রায় সবগুলো ক্রু-কে হত্যা করা হলো। শুধু কয়েকজনকে জাহাজের লেজের কাছের হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হলো।
লড়াই শেষ হয়েছে বোঝমাত্র কয়েকজন দস্যু ছুটে গেলো লুট শুরু করতে। বাকিরা ডাওজারের যে কয়জন জীবিত আছে তাদেরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইলো। হাতের তরবারি দিয়ে মাঝে মাঝে খোঁচা দিতে লাগলো, কিন্তু মেরে ফেলার কোনো চেষ্টা করলো না। কারণ ওরা জানে যে ওদের ক্যাপ্টেন এতে তাড়াতাড়ি সব শেষ করতে চাইবে না। ওদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এরা যা করেছে সেটার প্রতিশোধ নিতে হবে ধীরে ধীরে।
লেগ্রাঞ্জ ধীর পায়ে লাশগুলোর ফাঁক দিয়ে, রক্তে ভেজা ডেক ধরে এগিয়ে এলো। “তোদের মধ্যে ক্যাপ্টেন কে?” জানতে চাইলো ও।
ইঞ্চবার্ড লেংচে লেংচে সামনে এগিয়ে এলো। হাতের একটা কাটা থেকে রক্ত ঝরে ওর জামা লাল হয়ে আছে। “জোসিয়াহ ইঞ্চবার্ড, আমিই মাস্টার।”
লেগ্রাঞ্জ ওর ঘাড় ধরে সামনে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে ডেক-এ ফেলে দিলো। “আত্মসমর্পণ করলি না কেননা?” হিসহিসিয়ে উঠলো ও। “আমাদের সাথে লড়াই করিস, কতো বড় সাহস তোর!”
লেগ্রাঞ্জ কোমর থেকে একটা ছুরি বের করে ইঞ্চবার্ডের গালে চেপে ধরলো। আমি তোর জ্যান্ত চামড়া ছাড়িয়ে নেবো, তারপর তোর সামনে তোর নাড়িভুড়ি কেটে হাঙ্গরকে খেতে দেবো।”
পাশের লোকগুলো সব হেসে উঠলো। ইঞ্চবার্ড কাঁপতে কাঁপতে অনুনয় করতে লাগলো।
“আমরা মাদ্রাজ থেকে মশলা আর সুতি কাপড় নিয়ে এসেছি, সব জাহাজের খোলে আছে। আর বাইরে আছে মরিচ। সব নিয়ে নিন।”
লেগ্রাঞ্জ ওর দিকে মুখ এগিয়ে নিলো। “তাতো নেবোই। আমি তোর জাহাজের প্রতিটা তক্তা, প্রতিটা পেরেক খুলে ফেলবো। তারপর প্রতিটা লুকানো পয়সা পর্যন্ত খুঁজে বের করবো। কিন্তু সেজন্যে আমি তোকে কিছু করবো না, তুই শাস্তি পাবি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার জন্যে, আমার লোকেদের যা করেছিস সেটার জন্যে।”
নিচে নামার সিঁড়ির মুখে একটা ধ্বস্তাধস্তির আওয়াজ হলো। লেগ্রাঞ্জ ঘুরে সেদিকে তাকাতেই দেখে ওর দুজন লোক এক বন্দিকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে। আসছে। বন্দিটা একজন মহিলা, সেটা চোখে পড়তেই সবাই শিষ দিয়ে উঠলো। মহিলার শরীরের উর্ধাংশের কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, হাত দিয়ে নিজের গলা আর বুক ঢেকে রেখেছে সে। লোক দুটো মহিলাটাকে ধাক্কা দিয়ে লেগ্রাঞ্জের সামনে ফেলে দিলো।
“ক্যাপ্টেনের কেবিনে পেয়েছি একে। এগুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলো।” একজন দস্যু নিজের মুঠি খুলতেই একগাদা সোনার মুদ্রা গড়িয়ে পড়লো। বাকিরা তা দেকেহ আবারও শিষ দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করলো।
লেগ্রাঞ্জ মেয়েটার থুতনির নিচে হাত দিয়ে জোর করে ওর মুখটা নিজের দিকে ফেরালো। মেয়েটা কালো নিষ্কল্প চোখে চেয়ে রইলো ওর দিকে, চোখের মণিতে অপরিসীম ঘৃণা, অনুগ্রহ ভিক্ষার কোনো চিহ্ন সেখানে নেই।
“ব্রেজিয়ারটা নিয়ে এসো,” আদেশ দিলো লেগ্রাঞ্জ। তারপর চুল ধরে টেনে মেয়েটাকে দাঁড় করিয়ে আচমকা প্রচণ্ড জোরে দিলো একটা ধাক্কা। মেয়েটা পিছন দিকে সরে গিয়ে একটা রশিতে বেঁধে উল্টে পড়ে গেলো। পড়ে গিয়ে নড়ার আগেই চারজন দস্যু এগিয়ে গেলো ওর দিকে, তারপর ওর চার হাত পা চারদিকে টেনে ডেক-এর সাথে চেপে ধরে রাখলো।
লেগ্রাঞ্জ এগিয়ে গেলো ওর দিকে। তারপর হাতের ছুরি দিয়ে মেয়েটার স্কার্টের খানিকটা কেটে দিতেই ওর লোকেরা মেয়েটার দুই পা দুদিকে টেনে ধরলো। মেয়েটা মোচড়া মুচড়ি করতে লাগলো কিন্তু লোকগুলো শক্ত হাতে ওকে ধরে রাখলো। লেগ্রাঞ্জ স্কার্টের আরো খানিকটা উপরে তুললো, মেয়েটার মসৃণ উরু বের হয়ে গেলো তাতে। লোকজন অশ্লীল শব্দ করতে লাগলো।