“আশা করি শিগগিরিই আমরা আরো বেশি পরিচিত হতে পারবো।”
*
ওখান থেকে প্রায় একশো মাইল দক্ষিণে টম ওর নতুন জাহজের সামনের ডেক-এ দাঁড়িয়ে আছে। হাতে জাহাজের দড়াদড়ি। জাহাজটা আংরিয়ার বহরে ছিলো। ফ্রান্সিসের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছে সে রাতে। শাহুজি ওটা টমকে দিয়ে দিয়েছেন, সাথে কয়েকজন জেলে আর মারাঠা স্বেচ্ছাসেবীও দিয়েছেন। আর কেস্ট্রেল-এর সর্বশেষ বেঁচে থাকা কু-রা তো আছেই। মেরিডিউকে পাল এর মাস্টার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদটা পেয়ে খুবই সন্তুষ্ট ও।
“ওগুলো আমাদেরকে একটানে কেপ টাউনে নিয়ে যাবে,” মেরিডিউ বললো। “বা এরপরে যেখানেই যেতে চান, সেখানেই।”
উপসাগরের উপরে দুর্গে এখন শাহুজির পতাকা উড়ছে। পাশ দিয়ে যেসব জাহাজ যাচ্ছে তারা সবাই তার বিজয়ের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছে। দুর্গে লুকানো সমস্ত গুপ্তধন খুঁজে বের করতে শাহুজির লোকদের প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে গেলো। এখনো ওগুলোর অনেকগুলো সাতারার মহলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বক্সে ভরা হচ্ছে। টমের জাহাজের খোলের ভিতরেও বেশ ভালো একটা পরিমাণ আছে। শাহুজি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দিয়েছেন সেসব।
“শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে এবারের অভিযানে লাভ-ই হলো, চাচা,” ফ্রান্সিস বললো। অ্যানার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে ও।
“লাভের চাইতেও বেশি,” টম জবাব দিলো। সারাহের কোলের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বললো ও। জীবনে এর আগে এতোটা গর্ব আর ভালোবাসা অনুভব করেনি টম। “আমরা যা পেয়েছি, তা… অমূল্য।”
“আপনি কি থাকবেন-ই না?” ফ্রান্সিস বললো।
অ্যানা আর ফ্রান্সিস ভারতে থেকে যাবে ঠিক করেছে। অ্যানার বাবার ব্যবসা আর কুঠিগুলো আবার নতুন করে শুরু করবে। ঠিক করেছে কোচিনে বাড়ি বানাবে ওরা, ওটা হচ্ছে ওলন্দাজ উপনিবেশ। ওখানে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নাক গলাতে পারবে না। মোহিত যাবে ওদের সাথে।
“আমাদের জন্যে ভালো ভালো মাল জোগাড় করে রেখো,” টম বললো। “ধাগামী বর্ষার পরেই আসবো আমরা।”
“দস্যুদের কাছ থেকে বেঁচে বর্তে থাকতে পারলে হয়।”
ওটা আসলেই মারাত্মক ঝুঁকির। কিভাবে যেনো আংরিয়া টিরাকোলা থেকে পালিয়ে গিয়েছে। ওর আরো কয়েকটা দুর্গ আর আরো অনেকগুলো জাহাজ আছে; কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থেকে ও যে আবার মালাবার উপকূলে দস্যুগিরি করতে নামবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে আপাতত টম আশা করলো ও ডাঙাতেই লুকিয়ে থাকবে।
“লাকুইডিভা দ্বীপে যাবেন নাকি?” অ্যানা জিজ্ঞেস করলো। নাদুস নুদুস গাল আর উজ্জ্বল চোখে ওকে দেখতে বেশ লাগছে। “ও ওর জামার কোমর বড় করছে,” দুই রাত আগে সারাহ টমকে চুপিচুপি বলেছে। “আমার মনে হয় আমরা যখন ফিরে আসবো তখন জেমস একজন খেলার সাথী পেয়ে যাবে।” টমের মনে হলো ও এখনি অ্যানার পেটের ফোলা অবস্থাটা টের পাচ্ছে।
“দেরি হয়ে যাবে,” টম বললো। “আমাদের আরো প্রায় এক বছর আগে ফেরার কথা ছিলো। ডোরিয়ান আমাদের জন্যে অপেক্ষা করেনি নিশ্চিত। কেপ টাউনে গিয়েই ওকে খুঁজে পাবো আশা করি।”
“ঈশ্বর সহায় হোক চাচা,” ফ্রান্সিস বললো। “আর আমার জন্যে যা যা করেছেন তার জন্যে ধন্যবাদ।”
টম ওর চুল এলোমেলো করে দিলো। “একজন কোর্টনী নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে নেয়।”
ওরা সবাই কোলাকুলি করে বিদায় নিলো। তারপর আবার কোলাকুলি করলো। একটা নৌকায় করে ডাঙ্গায় ফিরে গেলো ফ্রান্সিস আর অ্যানা। আর গ্রাবটা নোঙর তুলে সাগরের দিকে আগাতে লাগলো। টম সম্মতিসূচক মাথা নাড়তেই নতুন আসা লোকগুলো পাল তুলতে দৌড়ে গেলো। কয়েকদিনের মাঝেই ওরা দক্ষ নাবিকে পরিণত হবে।
সারাহ ওরা পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাতের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলো।
“আমি জানি তুমি কি ভাবছো, টম কোর্টিনী।”
“কি?”
“ভাবছো এই জাহাজ আর এদের লোকজনকে কোথায় নিয়ে যাবে, আর একবার বাড়ি ফেরার পর কি কি মুনাফা-ই বা তুমি করতে পারবে।”
টম মাথা নাড়লো। “মালপত্র সব বিক্রি করে-সব দেনা শোধ করার পরেও হাতে ভালোই টাকা পয়সা থেকে যাবে। আমি ভাবছি কেপ টাউনে একটা জায়গা কিনে সেখানে আমাদের জন্যে একটা বাড়ি বানাবো।”
“ডাঙায় থাকা তোমার কাজ না,” সারাহ বললো। “কয়েক মাস পরেই আবার সাগরের ডাক শুনতে পাবে।”
টব বাচ্চাটার কথা ভাবলো, এখন ওদের কেবিনে একটা খাটে ঘুমিয়ে আছে, তার পাশেই নেপচুন তরবারিটা ঝোলানো। “কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এবার ব্যাপার স্যাপার একটু অন্যরকম হবে।”
সারাহ হেসে টমের বুকে মাথা ঠেকালো। হাতে হাত রেখে রেলিং-এর ধারে দাঁড়িয়ে রইলো ওরা। পরিপূর্ণ তৃপ্ত দুজনেই। পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের গোলাপি আভা ছড়িয়ে পড়লো। জাহাজ সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে, আর ওদের পিছনে মালাবার উপকূল আর ভারত উপমহাদেশ ধীরে ধীরে অন্ধকারের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েকমাস আগে জাহাজডুবি হয়ে ডাঙায় ওঠার পর থেকে ওদের জীবনে কি কি হয়েছে সেসব ভাবতে লাগলো টম।
“ভাবছি আমাদের মতো ডোরিয়ানের অভিযানও কি এতো রোমাঞ্চকর হয়েছে কিনা,” টমের কণ্ঠে মজাং।
সারাহ ওর গালে চুমু খেলো। “ওদেরটাও কম মজার হয়নি, দেখো।”