“আমি এখানে তোমার নীল কোট পরা চাকর হতে ফিরে আসিনি। আমি ওর চেয়ে অনেক ভালো কিছু পারি।”
গাই ওর আপাদমস্তক দেখল একবার। ওর ভিতর নতুন কিছু একটা আছে, যা আগে ছিলো না। কঠোর আর ভয়ঙ্করে মেশানো জিনিসটা।
“সেটাই মনে হচ্ছে,” ধূর্ত কণ্ঠে বললো গাই। “আমি তোমাকে সেটা প্রমাণ করার সুযোগ দেবো। খবর পেয়েছি যে মাদ্রাজের গভর্নর নাকি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য না-সে নাকি আমাদের চিরশত্রু একজনকে সাহায্য করেছে। তুমিই ওর জায়গা নিতে পারো।”
ক্রিস্টোফার ঢোক গিললো। কোম্পানির তিনটা বিশাল প্রদেশের একটার গভর্নর হওয়াটা ওর বয়সী একজনের জন্যে অভূতপূর্ব এক সম্মানের বিষয়। আর গাই-এর দিক থেকে ওর উপর ভরসা করার পক্ষে বিশাল একটা প্রমাণ। যদিও জানে যে এর ফলে ও সারা জীবনের জন্যে গাই-এর কাছে বাধা থাকবে। আর সারাজীবন ও এটাই এড়াতে চেয়েছে।
“তোমার উপর কি আমি ভরসা করতে পারি?” গাই জানতে চাইলো।
প্রশ্নটা ঝুলে রইলো ওদের মাঝে। ক্রিস্টোফার গাই-এর চোখের দিকে তাকালো। কি বলা যায় ভাবছে : আমি জানি কেনো তুমি আমার সাথে এমন করতে। আমি জানি কেনো তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারোনি। তোমার ভাই তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছে সেটার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই স্মৃতি মনে পড়তেই, ওর জামার ডান হাতার নিচে ওর কাটা হাতটা কেঁপে উঠলো।
গাই তখনও উত্তরের অপেক্ষায় আছে। ওর আঙুলগুলো কোটের বোতামে খেলে বেড়াচ্ছে; গাই গাল ফুলিয়ে ঠোঁট গোল করে বাতাস বের করে দিলো। ক্রিস্টোফার বুঝলো গাই দুশ্চিন্তার মাঝে আছে। ক্রিস্টোফার কি করে না করে তা নিয়ে আসলেই সে দুশ্চিন্তা করে।
ক্রিস্টোফারের চোখে পানি চলে এলো। ও মুখ ঘুরিয়ে নিলো যাতে গাই দেখতে না পায়। গাই ভাবলো ও বুঝি চলে যেতে চাচ্ছে। ও হাত বাড়িয়ে ক্রিস্টোফারের জামার হাতা টেনে ধরলো। আচমকা টানে ক্রিস্টোফার থমকে দাঁড়ালো। আর গাই এসে পড়লো ওর উপরে।
ক্রিস্টোফার সোজা হয়ে দাঁড়ালো আবার। বাবা আর ছেলে মুখোমুখি দাঁড়ানো। নীল আর বাদামি চোখ জোড়ার মাঝে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব।
“তোমার উপর ভরসা করতে পারি তো?” গাই আবার বললো।
ক্রিস্টোফার অনেক কিছু বলতে পারতো, অনেকগুলো জবাব ওর জানা ছিলো, কিন্তু সেগুলোর কি আসলে কোনো দাম আছে?
“জ্বী, বাবা,” বললো ও।
*
ক্রিস্টোফার গাই-এর অফিস থেকে এমন হতবুদ্ধি অবস্থায় বেরিয়ে এলো যে বসার ঘরে বসে থাকা মেয়েটাকে-বা মেয়েটা ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টি কোনোটাই খেয়াল হলো না। মেয়েটা নিজের পোশাকের বুকের দিকটা একটু নামিয়ে নিয়ে, গদি আটা চেয়ার ছেড়ে উঠে ওর দিকে এগিয়ে এলো।
“মিস্টার কোর্টনী?” ডাক দিলো মেয়েটা।
ক্রিস্টোফার অবাক হয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকলো মেয়েটার দিকে। একটা যুবতী মেয়ে। ধারালো চেহারা, পূর্ণ স্তন ওর জামা ফুড়ে যেনো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। প্রথমে ওর চেহারার দিকে ঠিকমতো নজর যায়নি ক্রিস্টোফারের। মাথার টুপির নিচে পরিপাটি করে চুলগুলো আচড়ানো তার, লম্বা হাতার জামা পরার কারণে শেকলের দাগ-ও আর দেখা যাচ্ছে না। টিরাকোলার সেই বেহায়া প্রেমিকার সাথে এখন ওকে মেলানো প্রায় অসম্ভব।
তারপরেই প্রবল আতংকে ক্রিস্টোফার মেয়েটাকে চিনতে পারলো। আজ বিকেলেই দ্বিতীয়বারের মতো ওরা পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। মেয়েটা ওর সব গোপন খবর জানে। ও যদি ওর বাবাকে বলে দেয়, তাহলে গাই-এর অফিসে এতোক্ষণ যতো অগ্রগতি হয়েছে সবগুলো দরজা আবার বন্ধ হয়ে যাবে। আর সবচে বড় কথা আংরিয়াকে সহায়তার দায়ে কোম্পানি ওকে ফাঁসিতেও ঝুলাতে পারে।
“আমরা কি পরিচিত?” নরম সুরে বললো ও।
মেয়েটা ওর কাছে ঘেষে এলো। “আমার মনে হয় না আমাদের দেখা হয়েছে, বা হলেও এতে আগে যা আপনার মনে থাকার কথা না। আমার নাম লিডিয়া ফয়।”
ক্রিস্টোফার কিছু বললো না সাথে সাথে! সম্ভবত মেয়েটা ওর নীরবতা বিক্রি করতে ইচ্ছুক।
“খবর পেলাম আপনি নাকি আপনার বাবার কাছে ফিরে এসেছেন,” বললো লিডিয়া। “আমি জানি আপনাদের পুনর্মিলনে এখানকার সবাই খুব খুশি হবে।”
ক্রিস্টোফার সতর্ক চোখে ওকে দেখতে লাগলো। চায় কি মেয়েটা? ও নিজের কোট এ হাত দিলো, ভিতরের ছুরিটার স্পর্শ পেলো হাতে।
“আমার মনে হয়, আর একটু নিরিবিলি কোথাও আলাপ করলে ভালো হবে,” ক্রিস্টোফার বললো।
“না না, তার দরকার হবে না,” লিডিয়া বললো। “আমাদের গোপন কিছুই বলার নেই। আমরা হচ্ছি দায়িত্ববান দুজন ইংরেজ, তাই না?”
এতো নিষ্পাপ ভঙ্গিতে কথা বলছে লিডিয়া যে ক্রিস্টোফার মুগ্ধ হয়ে . গেলো। যেনো ওরা আসলেই কেউ কাউকে চেনে না, দেখেও নি আগে। কি খেলা খেলছে এ?
“শুনেছিলাম আপনাকে নাকি দস্যুরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো?” সাবধানে জিজ্ঞেস করলো ক্রিস্টোফার।
“এখন মুক্ত আমি।”
“নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হয়েছে!”
লিডিয়ার চেহারা কালো হয়ে গেলো। “ভয়ংকর। যদিও…” বলে ও ইঙ্গিতময় একটা হাসি হাসলো। “একদম যে একঘেয়ে ছিলো তা বলবো না। তবে আমি নিশ্চিত যে আপনিও স্বীকার করবেন যে আমাদের আসলে অতীত আঁকড়ে ধরে থাকা উচিত না। বিশেষ করে ভবিষ্যতে যখন অপার সম্ভাবনার দুয়ার খোলা আছে।”
ওদের চোখাচোখি হলো-আর চোখে চোখেই বোঝাঁপড়াটা হয়ে গেলো দুজনের। লিডিয়া সামনে এগিয়ে ক্রিস্টোফারের গাল স্পর্শ করলো।