হতে পারে সৈন্য দুজন কোনো শব্দ করে ফেলেছিলো, বা একেবারে প্রবৃত্তির বশে ঠিক এক মুহূর্ত আগে টম টের পেয়ে গেলো যে আক্রমণ আসছে। আঘাতটা আটকানোর সময় পেলো না ও। শুধু মাথা নিচু করে মেঝেতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাথে টেনে নামিয়ে নিলো মোহিতকেও। তরবারির ফলা দুটো ওদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো। এদিকে কোনো কিছুতে বাধা না পাওয়ায় দস্যু দুজন ভারসাম্য হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে ওদের গায়ের উপরেই এসে পড়লো। টম আর মোহিত ওদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে, তরবারির দুই খোঁচাতেই ঐ দুজনের ভবলীলা সাঙ্গ করে দিলো।
টম দুটো সিঁড়ির দিকেই তাকিয়ে থাকলো। কোনটায় যাবো? “আপনি ডানটায় যান, আমি বায়েরটা খুঁজে দেখছি,” টম বললো।
দুজন দুই দিকে চলে গেলো ওরা। টম ঝড়ের বেগে নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে। প্রতিটা সেকেন্ড যেনো ওর উপর চেপে বসছে। উপরের ঐ দুজন লোক কোত্থেকে আসলো? আরো অনেকেই ছিলো নাকি? ওরা সারাহ আর অ্যাগনেসের কিছু করেনি তো? টমের বুকটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো।
সিঁড়ির গোড়ায় একটা লোহার দরজা। এটাই নিশ্চিত কয়েদখানা। টম একবার ভাবলো মোহিতকে ডেকে আনবে কিনা, কিন্তু তাতে মূল্যবান সময়ের অপচয় হবে ভেবে বাদ দিলো চিন্তাটা। আর তাছাড়া দরজাটা খোলাই আছে। গুহার ভিতরের দিক থেকে একটা মহিলার আর্তচিৎকার শুনতে পেলো ও। একটু পরেই একজন পুরুষ মানুষও আর্তনাদ করে উঠলো। সমস্ত কুচিন্তা আবার ফিরে এলো মাথার ভিতর। কোনো সতর্কতার ধার না ধরে ও সোজা দৌড় দিলো গুহার ভিতরের দিকে। একটু পরেই একটা বড়সড় কক্ষে এসে হাজির হলো টম।
একবার তাকিয়েই সব বুঝে গেলো ও। ওর সুদূরতম আশা, আর ওর গভীরতম ভয়, দুটোই একই সাথে বাস্তব হয়ে ধরা দিলো সামনে। সারাহ নগ্ন অবস্থায় চার হাত পায়ে ভর দিয়ে চিৎকার করছে আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে; অ্যাগনেস জবুথবু হয়ে বসে আছে পাশে; ফ্রান্সিস পায়ে একটা গভীর ক্ষত চেপে ধরে দেয়ালের গায়ে সেটে আছে। আর সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওদের সাথে বেঈমানি করা লোকটা। এক হাতে উদ্যত নেপচুন তরবারি, অন্য হাতে সেই চাবুকের মতো ফলাটা।
লোকটার পিঠে টমের দিকে–কিন্তু অ্যাগনেসের চেহারা ছিলো এদিকে। ফলে টমকে দেখে ওর চোখে মুখে যে স্বস্তির ছাপ পড়লো সেটা ও লুকাতে পারলো না। টম কিছু করার আগেই ক্রিস্টোফার অ্যাগনেসের চেহারার পরিবর্তন ধরতে পেরে ঘুরে গেলো পিছনে। বিকট এক হাসি ফুটে উঠলো ওর চেহারায়।
“টম কোর্টনী,” ইংরেজিতে বলে উঠলো ও। “আমি আশা করে ছিলাম যে আপনি শেষ দৃশ্যটা দেখতে সময়মতো হাজির হবেন।”
প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলো টম। হাতের তরবারিটা তুলে নিয়ে জ্যাভেলিনের মতো ছুঁড়ে দিলো। ঠিক যেভাবে টেমসের তীরে নেপচুন তরবারিটা ছুঁড়ে বিলির হৃৎপিণ্ড ফুড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু মারাঠা তরবারি অনেক ভারী, ফলে ঠিকমতো ছুঁড়তে পারলো না। লক্ষ্যে পৌঁছার আগেই মাথাটা নিচু হয়ে গেলো, আর ক্রিস্টোফার উরুমি ছুঁড়ে ওটাকে নিজের দিক থেক সরিয়ে দিলো। ঝন করে মেঝেতে পড়ে পিছলে গেলো ওটা।
এখন অসহায় হয়ে গেলো টম। ক্রিস্টোফার এগিয়ে এলো। উরুমির ফলাটা সাপের মতো একেবেকে আগালো ওর সাথে সাথে, পাথরের উপর সরসর শব্দ করছে। ঘরের অন্য শব্দটা করছে সারাহ, গোঙাচ্ছে।
“আমি এই অস্ত্রটা ঠিক একজন চিত্রকরের আকার তুলির মতো ব্যবহার করতে পারি,” ক্রিস্টোফার বলে উঠলো। “আমি একটা একটা করে আপনার হাত পা কেটে নেবো। তারপর যখন আর আপনার কিছু করার থাকবে না তখন আপনি চেয়ে চেয়ে দেখবেন কিভাবে আমি আপনার বৌকে জবাই করি আর আপনার ছেলেকে আছড়ে ঘিলু বের করি।”
টম বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। “কেনো? আমি তোমাকে কি করেছি?”
“জানেন না আপনি? অনুমান করেন দেখি?” ক্রিস্টোফার আরো এক পা এগিয়ে এলো। তারপর সারাহের দিকে ইশারা করলো, এখন ও দেয়াল চেপে ধরে শুধু হাঁটুতে ভর দিয়ে আছে। দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বাচ্চার মাথা দেখা যাচ্ছে। ক্রিস্টোফার টমের চেহারার অভিভূত অবস্থাটা দেখে হেসে দিলো।
“আপনি তো ঐ বাচ্চাটাকে বাঁচাতে যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত, তাই না? আপনি এই অজেয় দুর্গে এতো কষ্ট করে এসে এটাকে ছিন্ন ভিন্ন করেছেন শুধু ওটাকে রক্ষা করার জন্যে। ইশ! কতো মহান আপনি! কতো বড় বীর!”
তবুও টম বুঝতে পারলো না।
“কিন্তু সব সময়তো আপনি এতোটা কর্তব্যনিষ্ঠ ছিলেন না। নাকি ছিলেন?” চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো ক্রিস্টোফার। “আমার মা-কে ভোগ করে তার পেটে বাচ্চা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু জানার পর ভাগতে দুইবার ভাবতে হয়নি আপনার। আপনি আমাকে ত্যাগ করেছেন, আর আপনার ভাইকে রেখে গিয়েছেন আমার মায়ের লজ্জাকে ঢাকতে।”
টম এতোক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। ওর চেহারা দেখে ক্রিস্টোফারও টের পেলো সেটা। নিজের কৃতকর্মের জন্য একই সাথে টমের চেহারায় আতংক, ভয় আর লজ্জা খেলা করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্রিস্টোফার টের পেলো লিডিয়ার বলা প্রতিটা কথা-ই সত্যি। উরুমিটা ছোঁড়ার জন্যে ও হাত সোজা করলো, কোথায় মারবে সেটা চিন্তা করছে। প্রথমে ভাবলো টমের উরুতে ছুঁইয়ে ওর হ্যামস্ট্রিংটা দুই ভাগ করে দেবে। তারপর ধীরে সুস্থে একে, একে বাকি সব করতে পারবে।