তবে ও এই লোকগুলোকে চেনে। আলোয় এসে দাঁড়াতেই ও দেখতে পেলো এরা সবাই আংরিয়ার লোক। বন্দরের আক্রমণের দায়িত্বে ছিলো সবাই।
এখানে ক্রিস্টোফারকে দেখতে পাবে বলে আশা করেনি ওরা। “টুপিওয়ালারা কই?” জানতে চাইলো ওরা। “আমরা ওদেরকে পানির দিকের দরজাটা দিয়ে ধাওয়া করে এসেছি। এদিক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। ওরা।”
“দুর্গ পতন হয়েছে,” কর্কশ কণ্ঠে বললো ক্রিস্টোফার। “শত্রুরা ভিতরে ঢুকে পড়েছে।” ও দুজনের দিকে নির্দেশ করলো। “তুমি আর তুমি আমার জন্যে এখানে অপেক্ষা করো। আর বাকিরা পানির দরজার কাছে গিয়ে পালানোর জন্যে একটা নৌকার ব্যবস্থা করো। আমি একটু পরেই আসছি।”
বলেই ক্রিস্টোফার কয়েদখানায় নামার সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। নিচে নেমে খোলা দরজা দেখতে পেয়ে থমকে গেলো। চিৎকারের আওয়াজ পেলো ও, একজন মহিলা যেনো মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে। কোনো দস্যু কি এর মধ্যেই এখানে এসে নিজের কুমতলব হাসিল করা শুরু করে দিয়েছে? কিন্তু না, চিৎকার যেনো খুব নিয়মিত হচ্ছে। আর এর মাঝে খুব নরম সুরে কেউ কথা বলছে। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা।
ও কোমর থেকে উরুমিটা খুলে নিলো। তারপর হাতের তালুতে পেঁচিয়ে সোজা সামনে এগিয়ে গুহার যেখান থেকে শব্দটা আসছে, সেখানে উপস্থিত হলো। কোনা দিয়ে ভিতরে উঁকি দিলো ও।
একজন পুরুষ আর মহিলা আর একজন মহিলার পাশে বসে আছে। সেই মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় চার হাত পায়ে ভর দিয়ে আছে। মহিলা হাফাচ্ছে আর গোঙাচ্ছে। ওদের কেউই ক্রিস্টোফারের আগমন টের পেলো না। ক্রিস্টোফার হাসলো। এটাই হবে ওর চূড়ান্ত আঘাত-টম কোর্টনীর প্রতি ওর উপহার।
“কুত্তীটা বিয়াচ্ছে নাকি?” বলে উঠলো ক্রিস্টোফার।
ছেলেটা ঘুরে ক্রিস্টোফারকে দেখেই লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঠিক যেমনটা ক্রিস্টোফার ভেবেছিলো। উরুমিটার ফলা ছুটে গেলো বাতাসে, আর ছেলেটার পায়ের মাংস কেটে দুই ভাগ করে দিলো। ছেলেটা আর্তনাদ করে পড়ে গেলো মাটিতে। জায়গাটা চেপে ধরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু পায়ে শক্তি পেলো না।
“ফ্রান্সিস,” কেঁদে উঠলো অ্যাগনেস।
“ফ্রান্সিস?” ক্রিস্টোফার বললো এবার। ও নেপচুন তরবারিটা ছেলেটার বুখে গেঁথে দিতে যাচ্ছিলো। কিন্তু থেমে গেলো, নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস হচ্ছে না। “ফ্রান্সিস কোর্টনী?”
ফ্রান্সিস এক দলা থুতু ফেললো মেঝেতে তারপর মাথা ঝাঁকালো।
“তোর পরিবারের কি হাল করি তা চেয়ে চেয়ে দেখবি এখন।”
*
টম ভাঙা দেয়ালটা থেকে লাফিয়ে নামলো। এপাশেও দেয়ালের ভাঙা টুকরো ঢাল তৈরি করেছে। ওগুলো বেয়ে নেমে এলো ও তরবারি তুলে ধরা, কিন্তু সেটা ব্যবহার করা লাগলোই না বলা চলে। দস্যুরা ওর সামনে থেকে যে যেভাবে পারলো ভেগে গেলো। পিছনেই মারাঠা বাহিনি হুড়মুড় করে ঢুকতে লাগলো ভিতরে। ঘোশিয়া সৈন্যগুলো খুনের উৎসবে লেগে গেলো যেনো। উলঙ্গ আর উন্মত্ত অবস্থায় খোদ শয়তানের রূপ ধরে মানুষ মারতে লাগলো ওরা। যাদের হাতে অস্ত্র আছে তারা সামনে যাকে পেলো তারই কল্লা নামিয়ে দিতে লাগলো; বাকিরা খালি হাতেই দেখা গেলো গলা টেনে ছিঁড়ে ফেলছে।
এই কসাইখানার ভিতরেই কোথাও সারাহ আর অ্যাগনেস আছে। টম চত্বর থেকে যতো দ্রুত সম্ভব এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। মোহিত ও আগালো পাশেই। কয়েকজন দস্যু তখনও যুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, জায়গায় জায়গায় তাই ছোট ছোট লড়াই চলছে। টম ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে দুর্গের ভিতরে ঢুকে গেলো।
“ওরা বন্দীদেরকে কোথায় রাখতে পারে বলেন দেখি,” টম জিজ্ঞেস করলো মোহিতকে।
মোহিত কাঁধ ঝাঁকালো। তারপর আচমকা সামনে দৌড়ে গিয়ে পলায়নরত এক দস্যুর কাধ চেপে ধরে, পা দিয়ে ল্যাং মেরে শুইয়ে দিলো মাটিতে। একই সাথে ছুরি বের করে চেপে ধরলো গলায়। ভারতীয় ভাষায় কিছু একটা চেঁচিয়ে বললো মোহিত।
দস্যুটা ওর দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আছে। তারপর হড়বড় করে কিছু একটা বললো। মোহিত ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
“কয়েদখানা হচ্ছে দুর্গের নিচের গুহাগুলোতে। দুর্গের ভিতরে উত্তর-পূর্ব দিকে নাকি নিচে নামার একটা সিঁড়ি আছে।”
ভিতরে ঢুকতে ওরা কোনো বাধার সম্মুখীন হলো না। পলায়নরত দস্যুরা ওদের দেখে এমনিতেই সামনে থেকে সরে যেতে লাগলো। ওরাও ওদেরকে পাত্তা দিলো না। দস্যুরা যুদ্ধ করার সমস্ত ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে; এখন শুধু লুণ্ঠন কার্যে ব্যস্ত। আর টমের ওদের কাছে কিছুর প্রয়োজনও নাই। একদম নিচে নেমে আসতেই দেখা গেলো একটা সিঁড়ি দুর্গের ভিত্তির মাঝে নেমে গিয়েছে। টম দ্রুত নেমে এলো নিচে।
নিচে নামতে নামতে ওর আশা বাড়তে লাগলো। সিঁড়ি যেনো শেষই হয় না। কিন্তু দস্যু বা আর কেউ দুর্গের এদিকটাতে এসেছে বলে মনে হচ্ছে না।
“আমরা মনে হয় সময়মতোই এসে পড়েছি,” মোহিতকে বললো টম।
কিন্তু টম জানে না যে বাস্তবতা ভিন্ন। ওরা সিঁড়ির শেষ ধাপে নেমে এলো। গোড়ায় একটা ছোট কক্ষ দেখা যাচ্ছে। ওখান থেকে আবার দুটো রাস্তা নেমে গিয়েছে দুদিকে। টম ভাবছিলো যে কোন সিঁড়িটা দিয়ে নামবে, সে কারণেই ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা লোক দুজনকে খেয়লা করলো না। সিঁড়িতে পদশব্দ পেয়েই ওরা দুজন দরজার দুই পাশে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টম আর মোহিত দরজা দিয়ে ঢুকতেই, ভারী তরবারি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওদের উপর।